৬ বছরে দণ্ডিত ৫০ যুদ্ধাপরাধী

একাত্তরলাইভডেস্ক: ২০১০ সালের ২৫ মার্চআন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৬টি মামলায় ৫০ জন যুদ্ধাপরাধী বিভিন্ন মেয়াদে দণ্ড পেয়েছেন। এর মধ্যে বিচার প্রক্রিয়া শেষে পাঁচজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে।আপিলের রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আপিল শুনানির অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় জামায়াতের প্রাক্তন আমির গোলাম আযম ও প্রাক্তন মন্ত্রী জয়পুরহাটের রাজাকার আবদুল আলীমের মৃত্যু হয়েছে।এ ছাড়া বিচার চলাকালে মারা গেছে দুজন। পলাতক রয়েছে ২২ জন আসামি। আর বাকি ১৯ জনের মধ্যে অধিকাংশই আপিল বিভাগে আপিল করেছেন।তাদের আপিল বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এ বিষয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, যার আপিল আগে দায়ের হয়েছে, সেটাই আগে শুনানি হওয়ার কথা।’পলাতকদের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যেসব যুদ্ধাপরাধী দেশের বাইরে পলাতক রয়েছেন, তাদের ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। এ ছাড়া যারা দেশের মধ্যে পলাতক আছেন, তাদের গ্রেপ্তারে পুলিশ প্রশাসন সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাবে বলে আমি আশা করি।যে পাঁচজনের ফাঁসি কার্যকর : আইনি প্রক্রিয়া শেষে ফাঁসি কার্যকর হয়েছে জামায়াতের আমীর মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান ও কাদের মোল্লা এবং বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও  জামায়াতের নির্বাহী পরিষদ সদস্য মীর কাসেম আলীর।পলাতক ২২ দণ্ডপ্রাপ্ত : ট্রাইব্যুনালের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত ২২ যুদ্ধাপরাধী এখনো পলাতক রয়েছেন। পলাতক যুদ্ধাপরাধীরা হলেন- মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের প্রাক্তন রুকন আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার, আলবদর নেতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত চৌধুরী মাইনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খান, নগরকান্দার বিএনপি নেতা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন, আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পিরোজপুরের প্রাক্তন এমপি জাতীয় পার্টির আবদুল জব্বার, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সৈয়দ মো. হাছান আলী, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন মো. নাসির, রাজাকার কমান্ডার গাজী আবদুল মান্নান, হাফিজ উদ্দিন ও আজহারুল ইসলাম।এদের মধ্যে আজহারুল ইসলাম ছাড়া অন্যরা মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামালপুরের মো. আশরাফ হোসেন, মো. আবদুল মান্নান ও মো. আবদুল বারী এবং আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত ইসলামী ব্যাংকের প্রাক্তন পরিচালক শরীফ আহাম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মো. আবুল হাশেম ও হারুন পলাতক রয়েছেন। সর্বশেষ গত ১০ আগস্ট ট্রাইব্যুনালের রায়ে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত যশোরের মো. ইব্রাহিম হোসাইন, শেখ মো. মজিবুর রহমান, এমএ আজিজ সরদার, আবদুল আজিজ সরদার, কাজী ওহিদুল ইসলাম ও মো. আবদুল খালেক পলাতক রয়েছেন। পলাতক থাকায় এসব আসামি ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলও দায়ের করেননি।ট্রাইব্যুনাল পলাতকদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ মহাপরিদর্শককে নির্দেশ দিয়েছেন। প্রয়োজনে ইন্টারপোলের সহযোগিতা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে একাধিক রায়ে।কারাগারে যেসব যুদ্ধাপরাধী : ট্রাইব্যুনালের রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত কারাবন্দি ১৯ জন যুদ্ধাপরাধীর মধ্যে অধিকাংশই আপিল করেছেন। এদের মধ্যে মোবারকের পর পর্যায়ক্রমে জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত নেতা হবিগঞ্জের সৈয়দ মুহম্মদ কায়সার, জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল রংপুরের এটিএম আজহারুল ইসলাম, জামায়াতের নায়েবে আমীর পাবনার আবদুস সুবহান, চাঁপাইনবাবগঞ্জের আফসার হোসেন ও মাহিদুর রহমান চুটু, পটুয়াখালীর মো. ফোরকান মল্লিক, বাগেরহাটের শেখ সিরাজুল হক ও খান আকরাম হোসেন, নেত্রকোনার আতাউর রহমান ননী ও ওবায়দুল হক খান তাহের, কিশোরগঞ্জের অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন আহমেদ, হবিগঞ্জের মুহিবুর রহমান বড় মিয়া এবং তার ছোট ভাই মুজিবুর রহমান আঙ্গুর মিয়া ও তাদের চাচাতো ভাই আবদুর রাজ্জাক, জামালপুরের শামসুল হক ও ইউসুফ আলী, যশোরের প্রাক্তন সংসদ সদস্য সাখাওয়াত হোসেন ও বিল্লাল হোসেনের আপিল আপিল বিভাগে বিচারাধীন।এদিকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে ২০টি মামলার কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে ময়মনসিংহের এমপি জাতীয় পার্টির নেতা এমএ হান্নান, সাতক্ষীরার প্রাক্তন এমপি জামায়াত নেতা আবদুল খালেক মণ্ডল, গাইবান্ধার জামায়াতের প্রাক্তন এমপি আব্দুল আজিজ ওরফে ঘোড়ামারা আজিজ উল্লেখযোগ্য।এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মামলা যুক্ত হচ্ছে বলে তদন্ত সংস্থা সুত্র জানিয়েছে।