স্পোর্টস ডেস্ক : পরাজয়ের ধাক্কা সামাল দিতে হয় বুঝি এভাবেই। তীরে এসে তরী ডোবার হতাশা মুছে দিতে হয় সৈকতে সাফল্যের নোঙর ফেলে! প্রথম ম্যাচে হাতের মুঠো থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল জয়। ভেঙে না পড়ে বাংলাদেশ ফিরল আরও দোর্দ- প্রতাপে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে দারুণ জয়ে জিইয়ে রাখল টানা সপ্তম সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা। দক্ষ নাবিকের মতোই দলকে দিশা দেখিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যাটিংয়ে ধুঁকতে থাকা বাংলাদেশের ইনিংসে প্রাণ ফিরিয়েছেন শেষের ঝড়ে। বল হাতে অসাধারণ এক প্রথম স্পেলে মুড়িয়ে দিয়েছেন ইংলিশ ব্যাটিংয়ে মাথা। শেষে ভাঙলেন বিরক্তি হয়ে দাঁড়ানো শেষ উইকেট জুটিও। অধিনায়কের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে বাংলাদেশ জিতল ৩৪ রানে। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা এনেছে বাংলাদেশ। আগামী বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টানা সপ্তম সিরিজ জয়ের জন্য নামবে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল। তাসকিন আহমেদের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে মুশফিকুর রহিমকে সহজ ক্যাচ দিয়ে ফিরেন ক্রিস ওকস। তাসকিন আহমেদের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন জস বাটলার (৫৭ বলে ৫৭)। অফ স্টাম্পে গিয়ে খেলা বাটলারের পায়ে বল লাগলে আউট দেননি আম্পায়ার। রিভিউ নিতে দেরি করেনি বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাতে পাল্টায় আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। উল্লাসে মেতে উঠে পুরো গ্যালারি। সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত এক ক্যাচে পরিণত হয়ে ফিরেন মইন আলি। কাভারে থেকে ঘুরে দারুণ এক দৌড়ে ঝাঁপিয়ে ক্যাচ তালুবন্দি করেন সাকিব। নাসির হোসেনের বলে উড়িয়ে মারতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করেন মইন। দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে ইংল্যান্ডের প্রতিরোধ ভাঙেন তাসকিন আহমেদ। অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে জমা পড়েন জনি বেয়ারস্টো (৫৩ বলে ৩৫)। ভাঙে ওভার প্রতি ৫.৭১ করে করা ৭৯ রানের জুটি। দ্রুত চার উইকেট হারানো ইংল্যান্ড প্রতিরোধ গড়ে জনি বেয়ারস্টো ও জস বাটলারের ব্যাটে। প ম উইকেটে এই দুই জনে গড়েন অর্ধশত রানের জুটি। আগের ম্যাচে শতক করা বেন স্টোকসকে রানের খাতাই খুলতে দেননি মাশরাফি। ফুল লেংথ বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি স্টোকস। ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে ইংল্যান্ড। জ¦লে উঠার আগেই জেসন রয়কে ফিরিয়ে ইংল্যান্ডকে চাপে ফেলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সোজা বলে খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন রয় (২১ বলে ১৩)। অভিষেকে দারুণ এক অর্ধশতক করা বেন ডাকেটকে দ্বিতীয় ম্যাচে শূন্য রানে ফেরান সাকিব আল হাসান। এই বাঁহাতি স্পিনারের বল ডাকেটের ব্যাট-প্যাডের মাঝ দিয়ে স্টাম্পে আঘাত হানে। জেমস ভিন্সকে (১০ বলে ৫) ফিরিয়ে প্রথম আঘাত হানেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তার ফুল লেংথ বলে ভিন্সের ড্রাইভে পয়েন্টে ক্যাচ তালুবন্দি করেন মোসাদ্দেক হোসেন। শুরুতে লড়াই করলেন মাহমুদউল্লাহ, শেষটায় ঝড় তুললেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। তাতে বাঁচা-মরার ম্যাচে লড়াইয়ের পুঁজি গড়েছে বাংলাদেশ। এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজ জিততে ২৩৯ রান করতে হবে ইংল্যান্ডকে। রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৩৮ রান করে বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের শুরুর আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানের জন্য লড়াই করেন ইমরুল কায়েস ও তামিম ইকবাল। প্রথম পাঁচ ওভারে দুই জন খেলেন ২১টি ডট বল। দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানই ফিরেন ক্রিস ওকসের শর্ট বলে। সপ্তম ওভারে লেগ স্টাম্পের বলে হুক করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন ইমরুল। পুল করে মিডউইকেটে ধরা পড়েন তামিম। প্রথম ওভারেই সাফল্য পান গত ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় জেইক বল। বাউন্স ঠিকমতো খেলতে না পেরে ব্যাটের নীচের কানায় লেগে বোল্ড হন রানের জন্য সংগ্রাম করতে থাকা সাব্বির রহমান। ৩৯ রানে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে মাহমুদউল্লাহ ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটে। প্রথম দুই বলেই চার হাঁকানো মুশফিক এই ম্যাচেই বাংলাদেশের তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে পৌঁছান চার হাজার রানে। হঠাৎ ছন্দ হারিয়ে ফেলা মুশফিক খেলছিলেন দারুণ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে। বলের বলে পুলে গড়বড় করে শেষ হয় তার ২১ রানের ইনিংস। উইকেট ধরে রাখার সঙ্গে রানের গতি বাড়ানো ৫০ রানের এই জুটি ভাঙার পর আবার দিক হারায় স্বাগতিকদের ইনিংস। আগের ম্যাচে দারুণ এক ইনিংস খেলা সাকিব আল হাসান বেন স্টোকসের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেটকিপারকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন। তরুণ মোসাদ্দেক হোসেনকে নিয়ে ৪৮ রানের আরেকটি জুটিতে প্রতিরোধ গড়েন মাহমুদউল্লাহ। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারানো স্বাগতিকরা শেষের ঝড়ের দিকে তাকিয়ে ছিল তার দিকেই। দলকে বিপদে ফেলে ফিরে যান তিনিও। আদিল রশিদের বলে সুইপ করতে গিয়ে বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি মাহমুদউল্লাহ। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়েছিলেন; কিন্তু তাতে সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। ৮৮ বলে ছয়টি চারে ৭৫ রান করেন মাহমুদউল্লাহ। দলীয় ১৬১ রানে ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি ফিরে যাওয়ার পরও ক্রিজে ছিল বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যানদের জুটি। আগের ম্যাচে শেষটায় তালগোল পাকিয়ে হারা বাংলাদেশ এই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে শক্তি বাড়াতে দলে ফেরায় নাসির হোসেনকে। ‘দ্য ফিনিশার’ নামে পরিচিত এই ব্যাটসম্যানকে খুব একটা সঙ্গ দিতে পারেননি মোসাদ্দেক। রশিদের শর্ট বলে বাজে এক শটে ফিরেন এই তরুণ। ১৬৯ রানে প্রথম ৭ ব্যাটসম্যানকে হারানো বাংলাদেশের সামনে দুইশই তখন অনেক দূরের পথ। গত কিছু দিন ধরেই শেষের ব্যাটিংটা মাশরাফি বিন মুর্তজার দুর্ভাবনার ব্যাপার। সেখান থেকে দলকে বের করে আনতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন অধিনায়ক। অষ্টম উইকেটে নাসিরের সঙ্গে ৮.১ ওভারে গড়েছেন ৬৯ রানের দারুণ এক জুটি। মইনের বলে দারুণ দুই ছক্কায় মাশরাফির শুরুটা ছিল ঝড়ো। ডেভিড উইলির এক ওভারে একটি ছক্কা-চারে নেন ১৫ রান। সে সময়ে শান্তই ছিলেন নাসির, অধিনায়ককে যত বেশি সম্ভব স্ট্রাইক দেওয়াতেই ছিল তার মনোযোগ। সেখানে সফলও তিনি। শেষ ওভারে রান আউট হয়ে শেষ হয় মাশরাফির ৪৪ রানের ইনিংস। ২৯ বলের ইনিংসে দুটি চার ও তিনটি ছক্কা হাঁকান বাংলাদেশের অধিনায়ক। ২৭ বলে দুটি চারে ২৭ রানে অপরাজিত থাকেন নাসির। ইংল্যান্ডের ওকস, বল ও রশিদ দুটি করে উইকেট নেন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: ইংল্যান্ড ৪৪.৪ ওভারে ২০৪ (বাংলাদেশ ৫০ ওভারে ২৩৮/৮)