শাহ আলম শফি,কুমিল্লা প্রতিনিধি
কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের অধীন ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল বিপর্যয়ে বোর্ড কর্তৃপক্ষ ৬ টি জেলার ৯’শ৩০ টি স্কুলকে কারণ দর্শাও সহ সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে করনীয় বিষয় চিহ্নিত করার নোটিশ করে। বিপরীতে অধিকাংশ স্কুল কর্তৃপক্ষ ফলাফল বিপর্যযের কারণ হিসেবে মন্ত্রণালয় তথা বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত পরীক্ষকগণ হুবহু মডেল উত্তর পত্র অনুসরণ বা বোর্ড কর্তৃক নির্দেশনামোতাবেক নতুণ পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়ন করার নির্দেশনার বিষয়টি তুলে ধরেন। এদিকে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দেওয়ার কথা থাকলেও ১৭ দিনেও সকল প্রতিষ্ঠান থেকে জবাব পায়নি বোর্ড কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিস্টরা বিব্রত হলেও কেউ মুখ খুলছেন না।
বিভিন্ন দায়িত্বশীল সুত্রে জানা যায়,কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় বিগত ৫ বছরের মাঝে সর্বনি¤œ পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হয়। কুমিল্লা বোর্ডের অধীন কুমিল্লা,চাঁদপুর,ব্রাহ্মণবাড়িয়া,ফেনী,লক্ষীপুর,নোয়াখালী এই ৬ টি জেলার ১ লাখ ৮২ হাজার ৯’শ ৭৯ জন পরিক্ষায় অংশ নেয়। উত্তীর্ণ হয় ১ লাখ ৮ হাজার ১’শ ১১ জন। শতকরা হিসেবে পাশের হার ৫৯.০৩ । বিগত ২০১৬ সালে যেখানে পাশের হার ছিল ৮৪ শতাংশ। এতে এবারের ফলাফল প্রায় ২৫% কম। এর মাঝে গণিত ও ইংরেজিতে যথাক্রমে ৩৪ হাজার ৬’শ ৮৯ জন এবং ২৫ হাজার ৬’শ ০৬জন। অর্থাৎ ৬০ হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী শুধুমাত্র দু’বিষয়ে ফেল করে। বোর্ডের অধীন ৬ জেলার ১ হাজার ৬’শ ৯৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে এবার শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের দু’টি স্কুলের কোন শিক্ষার্থীই উত্তীর্ণ হতে পারেনি। ফলাফলের এই বিপর্যয়ে যখন বোর্ডের ৬ টি জেলায় শিক্ষার্থী,অভিভাবক,শিক্ষক সহ সচেতন মহলে ফলাফল বিপর্যয়ে বোর্ডের তীব্র সমালোচনা চলছিল তখন এর দায় থেকে মুক্তি পেতে
১৪ মে বিদ্যালয় পরিদর্শক ইলিয়াস উদ্দিনের স্বাক্ষরিত একটি কারণ দর্শাও নোটিশ বোর্ডের অধীন ৬ জেলার ৯’শ ৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করা হয়। সেখানে কারণ দর্শাও ছাড়াও ফলাফল বিপর্যয় থেকে উত্তরণের উপায় খুজেঁ বের করার পরামর্শ চেয়ে সাত দিনের মধ্যে জবাব চাওয়া হয়েছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক সুত্র জানায়,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ দেওয়ার দায়িত্ব ছিল পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অথচ সেটা করলেন বিদ্যালয় পরিদর্শক। সুত্র আরো জানায়,নোটিশ প্রদানের পর ৭ দিনের মধ্যে জবাবের নির্দেশনা ছিল। এরই মাঝে চলে গেছে ১৭ দিন সময়। তবুও আসেনি সকল প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব। তবে যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জবাব এসেছে তার ভাষা ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বোর্ডের সংশ্লিস্ট একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও স্কুল শিক্ষকদেও ফলাফল বিপর্যয়ের পরস্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। বোর্ড সুত্র ফলাফল বিপর্যয় হিসেবে শিক্ষকদের দায়িত্বে অবহেলা,মান সম্মত শিক্ষক সংকট ও সৃজনশীল পদ্ধতির উপর দুর্বলতার কথা বলা হলেও অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা ফলাফল বিপর্যয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তথা বোর্ড কর্তৃপক্ষ প্রদত্ত পরীক্ষকগণ হুবহু মডেল উত্তর পত্র অনুসরণ করা বা বোর্ড কর্তৃক নির্দেশনা মোতাবেক নতুণ পদ্ধতিতে খাতা মূল্যায়ন করা ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন । এনিয়ে কুমিল্লা বোর্ডে চলছে নানা আলোচনা,সমালোচনা। এদিকে পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের পাশ কাটিয়ে কেন বোর্ডের স্কুল পরিদর্শকের মাধ্যমে সংশ্লিস্ট ৯’শ৩০ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদান করলো,সেটা নিয়েও চলছে কানাঘুষা। কারণ দর্শাও নোটিশ প্রদানকারী কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের স্কুল পরিদর্শক ইলিয়াস উদ্দিনের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি বলেন,এটা বোর্ড চেয়ারম্যান ও সচিবসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে হয়েছে। ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাও নোটিশের জবাব চাইলেও এখনো ১৭ দিনের মধ্যে জবাব পাননি দাবী করে স্কুল পরিদর্শক আরো বলেন, এপর্যন্ত শতধিক স্কুল থেকে জবাব পেয়েছে। আর কিছু দিন অপেক্ষা করে দেখি,তার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিব। তিনি আরো বলেন,মে মাসের শেষ তারিখের মধ্যে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জবাব আশা করছি। অথচ গতকাল ছিল মে মাসের শেষ দিন। স্কুলগুলোর অনেকেই ফলাফল বিপর্যয়ের কারণ হিসেবে বোর্ডেও কড়াকড়ি খাতা দেখার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন শোকজ নোটিশে জবাবে এবিষয়ে জানতে চাইলে স্কুল পরিদর্শক ইলিয়াস উদ্দিন বলেন,না,এখনো কোন রিপোর্ট দেখিনি। ্এদিকে বিষযটির প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কুমিল্লা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডেও চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল খালেক বলেন,সময় পেরিয়ে গেছে শোকজ নোটিশের জবাব পাওয়ার। এখনো সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে জবাব আসেনি। তিনি আরোও বলেন,মাত্র এক’শ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে উত্তর এসেছে,অল্পকিছুদিনের মধ্যে জবাব না পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিব।