কক্সবাজারে তীব্র গরম- লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ জনজীবন

মাহাবুবুর রহমান.
একদিকে প্রচন্ড গরম অন্যদিকে তীব্র লোডশেডিংয়ে বিপর্যস্থ জনজীবন। জেলা ব্যাপী লোডসেডিং এর মাত্রা এত বেশি যে মানুষ বলছে বিদ্যূৎ থাকে না মাঝে মধ্যে আসে। চলতি মাসের শুরু থেকে লোডশেডিং চলে আসলেও সপ্তাহ খানেক ধরে এটি তীব্র আকার ধারন করেছে। এতে সাধারণ মানুষ চরম বিপাকে পড়েছে। পিডিবিও আওতাধীন এলাকায় দিনের অর্ধেক সময় বিদ্যুাৎ থাকে না আর পল্লী বিদ্যূৎ গ্রাহকদের অবস্থা খুবই করুন। ২৪ ঘন্টায় ঠিত মত ৪ ঘন্টাও বিদ্যূৎ মিলছে না তাদের। এতে রাতে ও ঠিকমত ঘুমাতে পারছে না গ্রামের মানুষ। এ ব্যপারে বরাবরেই একই গদবাধা জবাব কতৃপক্ষের সরবরাহ অনুযায়ী বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। তবে মানুষ সেটা মানতে নারাজ তাদের দাবী অনৈতিক সুবিধা নিয়ে কতৃপক্ষ কিছু এলাকাকে বিশেষ সুবিধা দিচ্ছে।
কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ঘাটকুলিয়া পাড়ার বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বাবুল জানান একদিকে প্রচন্ড গরম অন্যদিকে তীব্র লোডশেডিংয়ের কারনে আমাদের অবস্থা খুবই কাহিল হয়ে পড়েছে। গত কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎ থাকে না মাঝে মধ্যে আসে, ভোর ৫ টার দিকে বিদ্যুাৎ চলে গেছে এসেছে বিকাল ৩ টার দিকে তাও সর্বোচ্চ ৪০ মিনিট থাকার পর আবার গেছে এসেছে সন্ধ্যা ৬ টার দিকে এর পরে রাত ৮ টার দিকে গেছে রাতে ২ টার সময়ও আসে না এর মধ্যে গরমের কারনে বাসায় ঘুমাতে না পেরে আমরা ছোট বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় হাটাহাটি করি। এখন বাচ্চারা সবাই অসুস্থ হয়ে পড়েছে। মোট কথা বিদ্যুৎ এর লোডশেডিং ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। স্থানিয় ইউপি মেম্বার নুরুল হুদা বলেন ১৭ মে আমরা পরিষদের আয়োজনে একটি অনুস্টান করতে গিয়ে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ড তুলে ধরার সময় সাধারণ মানুষ উল্লো আমাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে প্রশ্ন করে এত উন্নয়ন করে তাহলে বিদ্যুৎ কেন থাকে না। মানুষ যদি শান্তিতে বাড়ি ঘরে বসতে না পারে রাতে ঘুমাতে না পারে তাহলে এত উন্নয়ন আপনারা কোথায় নিয়ে যান ? আসলে মে মাসের শুরু থেকে লোডসেডিং চলে আসছিল চলতি সপ্তাহে সেটা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। এখানে ২৪ ঘন্টায় খুব বেশি হলে ৪/৫ ঘন্টা বিদ্যুৎ থাকে। সিরাজুল্লাহ নামের এক খামারী বলেন বিদ্যূৎ না থাকার ফলে আমার খামারের মুরগী সব মারা যাওয়ার অবস্থা হয়ে পড়েছে। আমার ১০০০ মুরগীর খামারে এবার কমপক্ষে ৫০ হাজার টাকার লোকসান হবে।
এদিকে টেকনাফ পৌরসভার সাবেক কমিশনার আবদুল কুদ্দুস বলেন বেশ কয়েক দিন ধরে বিদ্যুৎএর অবস্থা খুবই কাহিল এমনকি গত ৪ দিন ধরে একেবারেই অন্ধকারে বল্লেই চলে, এখন সমস্য হচ্ছে বাসাবাড়িতে বিকল্প হিসাবে চার্জ লাইট থাকলেও চার্জ দিতে না পারায় ব্যবহার করা যাচ্ছে না কয়েক দিন ধরে মোমবাতি দিয়ে রাতকাটাচ্ছি। পরিস্থিতি এতই ভয়াবহ যে মোবাইলও চার্জ না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে। তার উপর প্রচন্ড গরমে মানুষ খুবই অস্বস্থিকর অবস্থায় আছে। আলাপ কালে দৈনিক কক্সবাজারের টেকনাফ প্রতিনিধি জসিম উদ্দিন টিপু জানান টেকনাফে ৩১ হাজারের বেশি বিদ্যুৎ গ্রাহক আছে। সবারই এক কথা লোডসেডিং এর অবস্থা খুবই অবর্ননিয়। ২৪ ঘন্টার মধ্যে ঠিকমত ২/৩ ঘন্টাও বিদ্যুৎ না থাকার ফলে মানুষের মাঝে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। আর বিদ্যুাৎ না থাকার ফলে আমাদের ও পেশাগত কাজের জন্য ও খুবই অসুবিধা হচ্ছে, চার্জ দিতে না পারায় ল্যাবটপও খুলা যাচ্ছে না। কয়েকটি স্থানে জেনারেটর দিয়ে কোন মতে চালালেও একনাগাড়ে জেনারেটর চালানোর ফলে সেটিও বিকল হয়ে পড়ার অবস্থা হয়ে পড়েছে এক কথাই খুবই সূচনীয় অবস্থার মধ্যে দিন কাটছে।
পেকুয়া উপজেলার প্রবীন শিক্ষক মোঃ শাহজাহান বলেন একদিকে তীব্র গরম অন্যদিকে ভয়াবগ লোডসেডিংয়ে আমাদের অবস্থা খুবই নাজুক। বাড়িতে আইপিএস থাকলেও বিদ্যূৎ না থাকায় সেটাও বন্ধ হয়ে পড়েছে তাই রাতেও ঘমাতে পারি না, গতকাল রাতের প্রায় আড়াই টা পর্যন্ত বাইরে চেয়ার নিয়ে বসে ছিলাম, ঘরের ভেতরে গরমের কারনে ঘুমাতে পারছি না। রাস্তাঘাটে যেখানেই যায় সবার মুখে একই কথা বিদ্যুৎ নাই বিদ্যুৎ নাই। মানুষ এখন বলে বিদ্যূৎ নাকি মাঝে মাঝে আসে।তার উপর গরমে অনেক বয়স্ক মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ছে আমার আশেপাশে বেশ কয়েক জন বয়স্ক মানুষ জ্বর সহ নানান রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েছে। আমার স্থানিয় পল্লী বিদ্যূৎ অফিসে যোগাযোগ করলে তারা সব সময় এক কথায় বলে লোডসেডিং করার দায়িত্ব জেলা উর্ধতন কতৃপক্ষের। মোট কথা খুবই খারাপ অবস্থার মধ্যে আছি।
এদিকে মহেশখালী, কুতুবদিয়া,পেকুয়া, রামু, উখিয়া সহ সব জায়গা থেকে একাধিক সমাজ সেবক ও জনপ্রতিনিধির সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা সবাই দাবী করেন বর্তমানে লোডসেডিং এর মাত্রা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে।তাদের দাবী সরকার বলছে এক বিদ্যূৎ উৎপাদন করছে তাহলে সেটা যাচ্ছে কোথায়। এ সময় অনেকে অভিযোগ করেন কতৃপক্ষ বিশেষ সুবিধা নিয়ে কিছু বিশেষ এলাকায় বেশি সরবরাহ দিচ্ছে।
এ ব্যপারে কক্সবাজার পাওয়ার গ্রীড কোম্পানীতে কথা বলে জানা গেছে কক্সবাজার পিডিবি এবং পল্লী বিদ্যুৎ মিলিয়ে বিদ্যূৎএর চাহিদা থাকে সর্বোচ্চ ৮০ মেঘাওয়াট সেখানে প্রায় ৬০ থেকে ৬৫ মেঘাওয়াট পাওয়া যাচ্ছে।
এ ব্যপারে কক্সবাজার পল্লী বিদ্যূৎ সমিতির জেনারেল ম্যনেজার নূর মোঃ আজম মজুমদার বলেন আমাদের দৈনিক চাহিদা থাকে ৫০ মেঘাওয়াটের বেশি সেখানে আমরা পায় ২৫ থেকে ৩০ এর মত। তাই লোডসেডিং একটু বেড়েছে। তবে ৩ দিন ধরে কিছু বিদ্যূৎ লাইন উন্নতীর জন্য সংস্কার কাজ চলছে সেটা আমরা গ্রাহকদের প্রচারণার মাধ্যামে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
একই ভাবে কক্সবাজার পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন আমাদের চাহিদার বিপরীতে প্রাপ্তি অনেক কম, তাই একটু সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া মাঝে মধ্যে কাল বৈশাখী ঝড়ে বিভিন্ন স্থানে লাইনের সমস্যা হয়, তারের সমস্যা হয় ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে যায় সব মিলিয়ে এসব মেরামত করতেই প্রচুর সময়ের ব্যপার তাই অনেক সময় অন্চিছাকৃত ভাবেও লোডসেডিং হয়।