উন্নয়ন সুষম হলে তা টেকসই হবেদেশজুড়েই চিকিৎসাসেবার নামে চলছে অনৈতিক বাণিজ্য। গ্রাম থেকে শহরÑ সবখানেই দালাল-বাটপারদের রামরাজ্য। টাকার কুমির কতিপয় ডাক্তার খুলে বসেছেন চিকিৎসাসেবার নামে গলাকাটা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। অসহায় রোগীরা উপায়ান্তর না পেয়ে জীবন বাঁচাতে এদের খপ্পরে পড়ে খোয়াচ্ছেন সর্বস্ব। কোনো ক্ষেত্রে মারা যাওয়া রোগী নিয়েও চলে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার অমানবিক বাণিজ্য। অথচ একজন চিকিৎসক স্বপ্ন নিয়ে নিজেকে গড়ে তোলেন মানবসেবার মহান ব্রত হিসেবে। একটি চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে ওঠে মানুষের কল্যাণে, মানবতার উপকারের জন্যই।
চিকিৎসাসেবার নামে ষোলো আনাই বাণিজ্য করেন বলে অভিযোগ রয়েছে অনেক চিকিৎসা কেন্দ্র ও ডাক্তারদের বিষয়ে। হাসপাতালে কর্মরত কমিশনভোগী স্টাফ, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও ডাক্তার আর দালালদের কারণে সাধারণ রোগীরা প্রতিনিয়ত হচ্ছে বলির পাঁঠা। ডায়াগনস্টিক ও ক্লিনিকপ্রেমী ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতালকে বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অঙ্গ-সহযোগী প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেই চলেছেন, অবস্থাদৃষ্টে তাই মনে হচ্ছে। আর বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র তো অনুমোদিত বাণিজ্যালয়।
চিকিৎসার নামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সবক্ষেত্রেই চলে বেপরোয়া কমিশন বাণিজ্য। সেবার নামে চিকিৎসা কেন্দ্র আর চিকিৎসকের বাণিজ্যের প্রতারণা থেকে রোগী বা তাদের স্বজন কারও নিস্তার নেই। আর প্রতিটি ধাপেই চলে শুধু টাকা আদায়ের অনিয়ন্ত্রিত ধান্দাবাজি। চিরচেনা আরেক যন্ত্রণার নাম ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি। অখ্যাত কোম্পানির এসব এসআর’রা ডাক্তারদের মাসিক মাসোহারার বিনিময়ে ওষুধ লিখিয়ে থাকেন। এদের কারণেও ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবা, কমছে সেবার মান। চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোর সাইনবোর্ডে অর্থোসার্জারি, নিউরোসার্জারি, গাইনি, জেনারেল শিশু সার্জারি ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞসহ অসংখ্য টাইটেলধারী ডাক্তারের বিশাল নামের তালিকা থাকলেও ভেতরে হাসপাতাল নয়, আছে ডাক্তার আর হাসপাতাল নামে ব্যবসায়ীদের কসাইখানা!
সবখানেই একই অবস্থা? হয়তো হ্যাঁ, অথবা না। ব্যতিক্রমও আছে। সঠিক-মানসম্মত চিকিৎসাও অনেক ডাক্তার দিয়ে যাচ্ছেন, নয়তো দেশের রোগীরা সব মৃত্যুর মুখে পতিত হতো। সাধুবাদ ওইসব ভালো ও আদর্শ চিকিৎসা কেন্দ্র এবং চিকিৎসকদের।
বেশরিভাগ ক্ষেত্রেই রোগীদের অভিযোগ, ডাক্তাররা সামান্য ঠা-া-জ্বর-কাশির জন্যও একাধিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার কথা লিখে দিচ্ছেন। অনেক সময় অপ্রয়োজনেও শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা, হাসপাতালে ভর্তি, ছোট-বড় অপারেশনের মুখোমুখি করিয়ে লাইফ সাপোর্টেও পাঠানো হয় রোগীকে! রোগী ভর্তি করলেই ডাক্তার বা সংশ্লিষ্টদের জন্য ৪০ থেকে ৫০ ভাগ কমিশনের ব্যবস্থা, যা রোগী নামক পাবলিকের পকেট থেকেই।
বেসরকারি চিকিৎসা আর চিকিৎসকের বাণিজ্যের সামনে সরকারি স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা বেহাল। আবার শহর ছাড়তেও নারাজ অনেক চিকিৎসক। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোর অভিযোগ জানানোর জায়গা নেই। কারণ অসহায় জনগণ অসুস্থ হচ্ছেন, চিকিৎসাও নিচ্ছেন ঠেকায় পড়ে। যদি এসব কাজে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা থাকত তবে হয়তো রোগী নামক বলির পাঁঠাদের একটু হলেও স্বস্তিতে বাঁচা হতো। অসাধু ক্লিনিক মালিক, ভুয়া ডাক্তার ও দালাল চক্রের হাত থেকে বাঁচতে চায় আমজনতা। আমরা চাই, মানুষের মহান সেবক ও বন্ধু চিকিৎসক এবং হাসপাতালগুলো মানবতার উপকারেই কাজে লাগোক, অন্যকিছু নয়। মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যসেবা পেতে সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপ ও জনসচেতনতা জরুরি। সময়ের দাবিÑ বন্ধ হোক চিকিৎসাসেবার নামে সব ধরনের বাণিজ্য।