মিয়ানমারের নৌসেনার গুলিতে আহত ৬ জেলে

একাত্তর লাইভ ডেস্ক:
সেন্টমার্টিনের অদূরে বঙ্গোপসাগরে মৌলভীশীল এলাকায় বাংলাদেশের পতাকাবাহী ‘এফবি জনিবা খালেদা’ নামের একটি মাছধরার ট্রলার লক্ষ্য করে মিয়ানমারের নৌবাহিনী গুলিবর্ষণ করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এতে ট্রলারে থাকা ছয় জেলে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
মঙ্গলবার দুপুরে সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপের পূর্ব-দক্ষিণে সাগরের মৌলভীশীল এলাকায় মাছধরার সময় এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ জেলেদের টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে রাত ৮টার খানিক পর কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
গুলিবিদ্ধ জেলেরা হলেন—কক্সবাজারের নুনিয়ারছড়ার ওসমান গনি (২২), একই গ্রামের রফিকুল ইসলাম (৩০), নুর আহমেদ (৩২),  মহেশখালীর মো. সাইফুল ইসলাম (৩৫) এবং কক্সবাজারের মো. আলম (২৮) ও ওসমান গণি (৩৫)।
কোস্টগার্ড ও স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, চার দিন আগে কক্সবাজারের সুলতান আহমেদ সওদাগরের মালিকাধীন মাছধরার ট্রলারটি নিয়ে ১৪ মাঝিমাল্লার বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে যান। মঙ্গলবার তারা সেন্টমার্টিনের ছেঁড়া দ্বীপের পূর্ব-দক্ষিণে সাগরের মৌলভীশীল এলাকায় মাছ ধরতে জাল ফেলে। হঠাৎ মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ ট্রলারটিকে ধাওয়া করে গুলি চালায়। এসময় জাল ফেলে পালিয়ে আসার সময় ছয় জেলে গুলিবিদ্ধ হন। পরে বিকেল ৫টার দিকে ট্রলারটি সেন্টমার্টিন ঘাটে পৌঁছলে স্থানীয় লোকজন ও কোস্টগার্ডের সহযোগিতায় গুলিবিদ্ধদের প্রথমে স্থানীয় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তাদেরকে টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স পাঠানো হয়।
এ প্রসঙ্গে কোস্টগার্ড সেন্টমার্টিন স্টেশনের কর্মকর্তা মো. সাইফুল আবছার বলেন, ‘বিকেলে গুলিবিদ্ধ ছয় জেলে মাছধরার একটি ট্রলার নিয়ে সেন্টমার্টিন ঘাটে পৌঁছে। তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।’
জেলেদের বরাত দিয়ে তিনি আরও জানান, বাংলাদেশের জলসীমায় মাছধরার সময় মিয়ানমারের নৌবাহিনী তাদের ধাওয়া করে গুলি চালিয়েছিল। তাদের হাত-পা, পিঠ ও চোখের নিচে গুলির চিহ্ন দেখা গেছে।
তবে মিয়ানমারের কোন বাহিনী গুলি চালিয়েছে সে বিষয়ে খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে বলে জানান কোস্টগার্ডের এ কর্মকর্তা।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমেদ জানান, ‘সাগরে কক্সবাজারের ফিশিং ট্রলারে গুলি চালিয়েছে মিয়ানমার নৌবাহিনী। এতে ছয় জেলে গুলিবিদ্ধি হয়েছেন। তাদের টেকনাফ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়েছে।’
এদিকে, রাত ৮টার দিকে ওই জেলেদের টেকনাফ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ড. শোভন দাস সমকালকে বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ জেলেদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাদের মধ্যে সাইফুল ইসলামের অবস্থা গুরুতর। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাদেরকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
এ প্রসঙ্গে টেকনাফে কোস্টগার্ডের স্টেশন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট নাফিউর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। জেলেদের বারবার আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম না করতে বলা হলেও তারা এটি অমান্য করছেন। তাই এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হবে।’
তবে ওই ট্রলারের জেলেদের দাবি, আন্তর্জাতিক জলসীমা অতিক্রম না করার পরও মিয়ানমারের নৌবাহিনী তাদের ওপর গুলিবর্ষণ করেছে।
প্রসঙ্গত, গত ৯ অক্টোবর থেকে নাফ নদ ও সাগরে মাছধরার সময় ১৪ বাংলাদেশি মাঝিমাল্লাকে ধরে নিয়ে গেছে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)। এখনও তাদের ফেরত দেয়নি মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ।