একাত্তর লাইভ ডেস্ক:
আজ রাত পোহালেই নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) নির্বাচন। দেশের এই প্রথম সিটি করপোরেশন নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হচ্ছে। মঙ্গলবার রাত ১২টা থেকেই সকল প্রচার-প্রচারণা বন্ধ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোট। বিরতিহীনভাবে চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। ইতিমধ্যে ভোট গ্রহণের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এখন কেবল অপেক্ষার পালা।
এ নির্বাচনে ৭ জন মেয়র প্রার্থী অংশ নিলেও এলডিপির কামাল প্রধান ও কল্যাণ পার্টির রাশেদ ফেরদৌস বিএনপির মেয়র প্রার্থী সাখাওয়াতকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ফলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মাঠে রয়েছেন ৫ জন মেয়র প্রার্থী। এরমধ্যে মূল লড়াইটা হচ্ছে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকের প্রার্থী এড. সাখাওয়াত হোসেন খানের সঙ্গে ‘নৌকা’ প্রতীকের ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীর। আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এই দুই প্রার্থী। নির্বাচনে ব্যক্তি ইমেজ ছাপিয়ে দলীয় প্রতীক ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে উঠেছে। ফলে শেষ মুহূর্তের অংকটা ভালোভাবেই কষতে শুরু করেছে সিটির প্রায় ৫ লাখ ভোটার।
চারদিকে নির্বাচনী এখন উত্তাপ। নির্বাচনকে ঘিরে ভোটারদের মাঝে উচ্ছ্বাসের কমতি নেই। পাশাপাশি শঙ্কাও আছে তাদের মাঝে। বাড়ছে ভোটারদের মধ্যে ভয়ভীতি। এ শঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন প্রধান দুই দলের প্রার্থীরাও। নারায়ণগঞ্জে নির্বাচনে প্রতিবারই আতঙ্ক, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, ভয় থাকে ভোটারদের মধ্যে। এবারও ভোটাররা সে রকম আশঙ্কা করছে। শহরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর নারায়ণগঞ্জে ইউনিয়ন পরিষদ থেকে শুরু করে পৌর নির্বাচন, সিটি করপোরেশন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনসহ সব নির্বাচনেই কমবেশি আতঙ্কে ভুগেছেন নারায়ণগঞ্জবাসী। তবে এ শঙ্কা কাটিয়ে উঠতে বিএনপির প্রার্থী এড. সাখাওয়াত হোসেন খান সেনাবাহিনী দাবি করলেও আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী কৌশলে তার বিরোধিতা করেছেন। অপর দিকে তিনি তৃতীয় পক্ষের কারসাজি থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন নির্বাচন কমিশনকে। আর ভোটাররা বলছেন, মেয়র প্রার্থীরা সৌহার্দ্যপূর্ণ থাকলেও কাউন্সিলর প্রার্থীরা মারমুখী আচরণ করছেন। তারা একে অপরকে ঘায়েল করতে যে প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাতেই আঁচ করা যায় ভোটের দিন অঘটন ঘটবে; যার আলামত দেখা যাচ্ছে কাউন্সিলরদের মধ্যে প্রচার-প্রচারণায়। কাউন্সিলর প্রার্থীরা লোকজন নিয়ে রীতিমতো শোডাউন করছেন। পাল্টা শোডাউন করছেন প্রতিদ্বন্দ্বীরা। আগামীকালই জানা যাবে এ অঞ্চলের মানুষ নৌকা নাকি ধানের শীষ কোনটিকে গ্রহণ ও বর্জন করলেন।
এদিকে, দীর্ঘদিন পর নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের লড়াইয়ের কারণে এ নির্বাচনের আমেজে যুক্ত হয়েছে জাতীয় নির্বাচনের আবহ। এ নিয়ে সাধারণ ভোটার থেকে শুরু করে দলীয় কর্মী-সর্মথকদের মাঝে বিরাজ করছে টানটান উত্তেজনা। চলছে নানা হিসেব নিকেষ। সিটি করপোরেশন স্থানীয় সরকার অধিনস্থ নির্বাচন হলেও বহুলাংশেই অন্যান্য নির্বাচন থেকে এ নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক বেশী হয়ে উঠেছে। এ নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ চেষ্টা করছে তাদের ইমেজ রক্ষার এবং বিএনপি চাচ্ছে তাদের হারানো ইমেজ পুনরুদ্ধারের। এছাড়াও এ নির্বাচনের উপর নির্ভর করছে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন ও জাতীয় নির্বাচন কেমন হবে (?) তার হিসেব নিকেষ। ফলে এ নির্বাচন সরকার থেকে শুরু করে দেশের বিশিষ্টজনদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আর তাই এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুরো দেশের মানুষের দৃষ্টি এখন নারায়ণগঞ্জের দিকে। এদিকে গেল কদিন ধরেই এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরগরম নারায়ণগঞ্জ। মিডিয়াকর্মী ও বিশিষ্ট রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের পদচারণায় মুখর এই নগরী। প্রার্থীদের প্রচারণা-প্রতিশ্রুতি নিয়েই আলোচনা-সমালোচনা ছিলো বিভিন্ন আড্ডার প্রধান উৎসহ।
এদিকে রাজনৈতিক হিসেব নিকেষের উপরেও এখানকার ভোটারদের একটাই চাওয়া, এ নারায়ণগঞ্জ নগরী শাসন হোক নির্বাচিত একজন জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে। এবং তা হোক সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোটের মাধ্যমে। এদিকে এ নির্বাচনে সাধারণের উৎসাহ উদ্দীপনা দুটোই রয়েছে। তবে এখানে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আইভীকে নিয়ে নিজ দলীয় লোকদের মাঝেই নিরব দ্বন্দ্ব যেন রয়েই গেছে।
এবারের নির্বাচনে পাঁচ মেয়রসহ, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত আসন মিলিয়ে মোট ২০১ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সাধারণ কাউন্সিলর পদে ১৫৬ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন রয়েছেন। ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯৩১ জন। যার মধ্যে পুরুষ ২ লাখ ৩৯ হাজার ৬৬২ জন এবং নারী ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৬৯ জন।