ঝিনাইদহ প্রতিনিধিঃ
ঝিনাইদহ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টি, প্রভাব বিস্তার, নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘন, প্রতিপক্ষের ভোটারদের হুমকী ধমকি ও মারধরসহ নানা ধরণের অভিযোগ করেছেন স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী এম হারুন অর রশীদ।
তিনি মঙ্গলবার সৃজনী কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে অবাধ, সুষ্ঠ ও শান্তিপুর্ণ ভোটগ্রহনের স্বার্থে ৭২ ঘন্টা আগে ভোট কেন্দ্রগুলোতে সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েনের দাবী জানিয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, তার প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী কনক কান্তি দাস প্রতিনিয়ত আমার নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মীদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছেন। সেই সাথে ভোটকেন্দ্র দখলের পরিল্পনা করছে। তারা আমার নির্বাচনি প্রচারণায় বাধা সৃষ্টি, পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলা, ও কর্মীদের মারপিট করছে।
এসব ঘটনায় জেলার বিভিন্ন থানায় ৩ টি সাধারণ ডায়েরী ও রিটানিং অফিসারের কাছে আচরণ বিধি লংঘনের ১২ টি অভিযোগ করা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগের কোন কার্যকর প্রদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে তিনি সাংবাদিক সম্মেলনে অভিযোগ করেন। লিখিত বক্তব্যে তিনি জানান, প্রতিপক্ষ প্রার্থী কন কান্তি দাস আচরণ বিধি লংঘন করে একের পর এক ইউনিয়ন পরিষদের সম্মেলন কক্ষে নির্বাচনী সভা করছেন।
শত শত মাইক্রোবাস ও মটর সাইকেল শোভাযাত্রা করছেন। জোরপুর্বক ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে চশমা প্রতিকে প্রকাশ্যে সিল মারার ঘোষণা দিচ্ছেন। লিখিত বক্তব্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন উল্লেখ করেন, গত ৮ ডিসেম্বর আব্দুল হাই এমপিকে সাথে নিয়ে শৈলকুপা উপজেলার ত্রিবেনী, কাঁচেরকোল, মনোহরপুর, ইউনিয়নের সকল চেয়ারম্যান মেম্বরদেরকে জনসভা করে বলেছেন ভোটের সীল গোপনে না দিয়ে আমাদের সামনে সীল মারতে হবে। তা না হলে আগামীতে বোঝাপড়া আছে।
১১ ডিসেম্বর মহেশপুর উপজেলার এস.বি.কে, ফতেপুর, পান্তাপাড়া,স্বরুপপুর ও শ্যামকুড় ইউনিয়নে ২৫টি মাইক্রোবাসযোগে শোডাউনসহ ৩০০ লোকের খাসি জবাই করে খাওয়ানো হয়েছে। সেখানে জন সমাবেশে করে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও জোরপূর্বক ভোট গ্রহনের ঘোষনা দেওয়া হয়েছে।
গত ১২ডিসেম্বর মহেশপুর উপজেলার আজমপুর, মান্দারবাড়িয়া, যাদবপুর, বাঁশবাড়ীয়া ইউনিয়নে ২৫টি মাইক্রোবাসযোগে শোডাউনসহ ৫০০ লোকের বিরিয়ানী দিয়ে দুপুরে আপ্যায়ন করা হয় ও জন সমাবেশে জোরপূর্বক ভোট কাটার ঘোষনা দেওয়া হয়। প্রতিটি সভায় ইউনিয়ন পরিষদের হলরুম ব্যবহার করা হচ্ছে। ১৪ ডিসেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না ইউনিয়ন পরিষদের সামনে আমার আনারস প্রতীকের পোষ্টার ছিঁড়ে দেওয়া হয় এবং কর্মীদের মারধর করে। একই দিন দুপুরে মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের সামনে পোষ্টার ঝুলানোর সময় আমার কর্মী নাজিরুল ইসলাম ও মিল্টনকে প্রচন্ড মারধর করে আহত করা হয়।
এ বিষয়ে সদর থানায় সাধারন ডায়েরীভুক্ত করার জন্য গেলেও আজো ডায়েরী অদ্যাবধি গৃহীত হয়নি। গত ১৫ ডিসেম্বর ০৪টি মোটরসাইকেল যোগে ০৮ জন সশস্ত্র সন্ত্রাসী সদর উপজেলার মধুহাটি ইউনিয়নের চোরকোল বাজারে আমার নির্বাচনী কর্মী মোঃ টিপু সুলতানকে মারধর করে। পরববর্তীতে তাকে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়। গত ১৬ ডিসেম্বর আমার নির্বাচনী গনসংযোগের সময় হলিধানী বাজারে আমাকে ও আমার কর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে ০১টি প্রাইভেট কার ও ০১টি মাইক্রোবাসে করে ১০/১২ জন সন্ত্রাসী সশস্ত্র অবস্থায় সৃজনী বাংলাদেশ অফিস আক্রমন করে আমাকে না পেয়ে সাইনবোর্ড সহ আসবাবপত্র ভাংচুর করে ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে।
গত ১৮ ডিসেম্বর সদর উপজেলার ঘোড়শাল ইউনিয়নে গনসংযোগের সময় নারিকেলবাড়ীয়া বাজারে ঢোকার পথে আমার ভাই মিজানুর রহমান (তোতা) সহ আমার নির্বাচনী কর্মীদের সন্ত্রাসীরা ব্যাপক মারধর। একই দিন রাতে আ’লীগের প্রার্থী কনক কান্তি দাস ও তার লোকজন আমার ভাড়াকৃত মাইক্রোবাস শৈলকুপা উপজেলার ভাটই বাজারে থামিয়ে আমার নির্বাচনী কাজে নিয়োজিত কর্মীদের উপর বোমা ফাটিয়ে ও ফাকা গুলি ছুঁড়ে হামলা চালায়।
তখন আমরা জীবন বাচাতে ভাটই বাজারস্থ সৃজনী বাংলাদেশ অফিসে আশ্রয় গ্রহন করি। ১৮ ডিসেম্বর মহেশপুর উপজেলা অডিটরিয়ামে মেম্বর ও চেয়ারম্যানদের নিয়ে সভায় সরাসরি কনক কান্তি দাস জোরপূর্বক সকল ভোটকেন্দ্র দখলে নিয়ে তার চশমা প্রতীকে জনসম্মুখে সীল মারার ঘোষনা দেন এবং ১৯ ডিসেম্বর থেকে আমার আনারস প্রতীকের কোন কর্মীকে কাজ করতে দেয়া হবে না বলে হুমকী দেন।
একই দিন আমার ছোট ভাই মিজানুর রহমান (তোতা) ব্যক্তিগত কাজে ঝিনাইদহ শহরের হামদহ মোটর সাইকেল গ্যারেজে গেলে কনক কান্তি দাসের লেঅকজন খুন জকমের হুমকী দেন। এ সব কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী হারুন অর রশিদ নির্বাচন কমিশনের কাছে সেনা মোতায়েনের জোর দাবী জানান।
এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী কনক কান্তি দাস বলেন, তিনি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি বা তার কোন কর্মী নির্বাচন আচরণ বিধি লংঘন করেন নি। প্রতিদ্বন্ধি প্রার্থী এম হারুন অর রশীদ যে অভিযোগ করেছেন তার কোন ভিত্তি নেই। কণক কান্তি দাস পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, হারুন কালো টাকা ছিটিয়ে নিজেই নির্বাচনী আচরণ বিধি লংঘন করছেন। তার প্রমান টাকাসহ একজন মেম্বর ধরা পড়া। তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, নির্বাচনে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্ভয়ে ভোট দিয়ে গনতন্ত্রকে সমুন্নত রাখবেন।