সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:
দশ লাখ টাকা মুক্তিপণের জন্য অপহরণের পাঁচ দিন পর কলেজছাত্র গৌতম সরকারের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শনিবার সকালে সদর উপজেলার মহাদেবনগর গ্রামে গৌতমের বাড়ির পাশের একটি পুকুর থেকে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় উত্তেজিত জনতা অপহরণের ঘটনায় জড়িত সন্দেহে নুর ইসলাম ও রেজাউল শেখের বাড়ি আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।
গৌতম মন্ডল মহাদেবনগর গ্রামের ইউপি সদস্য গণেশ মন্ডলের ছেলে ও সীমান্ত আদর্শ কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। এ ঘটনায় পুলিশ পাঁচজনকে আটক করেছে। তারা হলেন নুর ইসলাম, রেজাউল শেখ, আলিম, শাওন ও মনিরুল ইসলাম।
সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন জানান, গৌতম হত্যায় জড়িতদের অবশ্যই আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। হত্যাকারীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না বলে জানান তিনি।
সদর উপজেলার ভারতীয় সীমান্তবর্তী গ্রাম মহাদেবনগরের ইউপি সদস্য গণেশ মন্ডল জানান, তার ছেলে গৌতম সীমান্ত কলেজে ডিগ্রিতে পড়ত। গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় গৌতম (১৯) ও তার বন্ধুরা বাড়ির পাশে মহাদেবনগর মোড়ে আমিন মিস্ত্রির দোকানে বসে টিভিতে ফুটবল খেলা দেখছিল। এ সময় তার কাছে একটি ফোন আসে। ফোনে তাকে ডেকে নেওয়া হয়। এর পর থেকে গৌতমের ফোন (নম্বর ১৭৪৪৬৫০৬০৬ ও ০১৫৫৬৫৫৭৫৬৭) বন্ধ পাওয়া যায়। তিনি আরও জানান, রাতে তার নম্বরে (নম্বর ০১৭২৪৮৪৯৯৭৫) ছেলের নম্বর থেকে ফোন করে জানানো হয়, ‘তোর ছেলেকে পেতে চাইলে দশ লাখ টাকা নিয়ে চলে আয়। তবে পুলিশকে জানালেই বিপদ হবে’। গণেশ বিষয়টি ঘোনা ইউপি চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান ও সাতক্ষীরা থানার ওসিকে জানিয়ে তাদের সহায়তা চান।
এদিকে সদর থানার সাব-ইন্সপেকটর আবুল কালামসহ পুলিশের কয়েক সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে গণেশ অপহরণকারীদের কথামতো ১৪ ডিসেম্বর গভীর রাতে নির্দিষ্ট স্থানে কয়েক লাখ টাকা নিয়ে অপেক্ষা করেন। একপর্যায়ে ফোনে অন্য সব লোককে সেখান থেকে সরে যেতে এবং টাকা নিয়ে গণেশকে ওই স্থান থেকে চলে যেতে বলা হয়। পরে আবার ফোনে বলা হয়, ‘টাকা বিকাশ মারফত পাঠাও।’ এর পর পরই সেখানে আসে তিনি যুবক। পুলিশ গ্রামবাসীর সহায়তায় তাদের আটক করে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছয়টি মোবাইল।
গণেশ মন্ডল আরও জানান, আটক তিনজনের মধ্যে ভাড়খালি গ্রামের করিম মোড়লের ছেলে শাহাদাত মোড়ল মোবাইলে তার সঙ্গে ছেলের অপহরণ বিষয়ে কথা বলেছিল বলে তিনি নিশ্চিত হয়েছেন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার অপর দুজন হচ্ছে দেবহাটার বহেরা গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে শাওন ও একই গ্রামের মনিরুল ইসলাম সানি। পুলিশ তাদের সম্পর্কে কোনো তথ্য দিতে অস্বীকার করে। শুক্রবার দুপুরে স্থানীয় জনতা মহাদেবনগরের সন্দেহভাজন যুবক সাজুকে না পেয়ে তার মা ফজিলা খাতুনকে আটক করে। সন্দেহভাজন আরেক যুবক জামসেদ পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় গণেশ সরকার সাতক্ষীরা থানায় একটি জিডি করেছেন। জিডি নম্বর ৭৪১ তারিখ ১৪.১২.১৬।
গণেশ সরকার জানান, কয়েকদিন আগে তার এলাকার জামসেদ নামের এক ঘরজামাইকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাকে ছাড়ানোর জন্য তার ওপর চাপ আসে। গণেশ তাতে সাড়া না দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে জামসেদ ও তার বাহিনী। স্থানীয় আরেক ব্যক্তি আবদুর রহমানের মাধ্যমে পুলিশকে ম্যানেজ করে জামসেদ থানা থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে আসে। এ সময় গণেশকে হুমকি দিয়ে বলা হয়, ‘আমাকে বের করতে সাহায্য করলেন না। এর পরিণতি ভালো নয়’। এর পরই অপহৃত হয় গৌতম।
জামসেদ অপরাধ জগতের লোক বলে জানান কয়েকজন এলাকাবাসী। তাদের সন্দেহ, জামসেদ ও শাহাদাত গৌতমকে মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপহরণ করেছিল। অপহরণকারীরা গৌতমের লাশ নিতে ভারতে যাবার জন্যও ডেকেছিল বলে গণেশ জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি সে ঝুঁকি নিতে রাজি হননি । এতে গৌতম অপহরণ ঘটনা আরও রহস্যজনক হয়ে উঠেছে। গণেশ সরকার তার জিডিতে উল্লেখ করে বলেন, অপহরণকারীরা মোবাইল ফোনে তাকে বলেছে, ‘তোর ছেলে আমাদের কাছে আছে। তোর অনেক টাকা পয়সা আছে। টাকা ও সোনা-গয়না নিয়ে আয়। তোর ছেলেকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে। এ কথা কাউকে জানালে তোর ছেলেকে কেটে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দেব।’