অনলাইন ডেস্ক : বিচারিক আদালতের দণ্ড হাইকোর্টে স্থগিত হলে দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে হাইকোর্ট যে আদেশ দিয়েছেন তা সংবিধান পরিপন্থী বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রের প্রধান কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল আবেদন করা হবে বলেও জানান তিনি। হাইকোর্টের একক বেঞ্চের আদেশের পর অ্যার্টনি জেনারেলের নিজ কার্যালয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন মাহবুবে আলম।
এর আগে হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ রইচ উদ্দিনের একক বেঞ্চ আদেশ দেন বিচারিক আদালতের দণ্ড হাইকোর্টে স্থগিত হলে দণ্ডিতরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এ আদেশের ফলে সম্পদের গরমিল তথ্য দুদকে দেয়া-সংক্রান্ত মামলায় দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার নির্বাচনে প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই।
এ আদেশের প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, ‘হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ একই রকম মামলার আদেশে বলেছিলেন, নির্বাচনের উদ্দেশে কেউ দণ্ড বা সাজা স্থগিত করার পর নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। এরপর সেই আদেশের বিরুদ্ধে এক বিএনপিপন্থী নেতা আপিল করেন। পরে সেই আবেদনে আপিল বিভাগ থেকে কোনো আদেশ দেননি। ফলে হাইকোর্টের দেয়া আদেশ বহালই রইলো আপিল বিভাগে।’
‘এর একদিন পর আজ হাইকোর্টের একটি একক বেঞ্চ বলেন, দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা হাইকোর্টে স্থগিত হলে দণ্ডিতরা নির্বাচন করতে পারবেন। তাহলে তো এটা পূর্বের আরেকটি হাইকোর্ট বেঞ্চের বিপরীতধর্মী আদেশ হলো। ফলে হাইকোর্টের আজকের আদেশটি সংবিধান পরিপন্থী। তাই এ আদেশের বিরুদ্ধে আমরা আপিলে যাব’, বলেন মাহবুবে আলম।
নির্বাচনে অংশ নিতে দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা বা দণ্ড স্থগিত নিয়ে হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চের আদেশ পরস্পর সাংঘর্ষিক কিনা জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘অবশ্যই। সেজন্যই আমরা আপিল বিভাগে যাব।’
সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড আজ হাইকোর্টে স্থগিত হওয়ার পর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে না যাওয়া পর্যন্ত নির্বাচনে অংশ নিতে তার বাধা থাকবে কিনা সে বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবে আলম বলেন, ‘আপিল বিভাগ এ বিষয় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবেন। আপিল বিভাগের সে সিদ্ধান্তই হবে সঠিক সিদ্ধান্ত।’
হাইকোর্টে দণ্ড স্থগিতের বিষয়টি আপিলে পূর্ণ নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন কিনা জানতে চাইলে অ্যার্টনি জেনারেল বলেন, ‘আদেশের মাধ্যমে যে কোনো বিচারক তার মতামত প্রকাশ করতে পারেন। কিন্তু সবার উপরে আমাদের সংবিধান। আমাদের বিচারকরা বিচার করেন সাংবিধানিক বিধি মেনে। আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট আছে, কোনো ব্যক্তি ২ বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে এবং তার নৈতিক স্খলন ঘটলে তিনি নির্বাচন করতে পারবেন না।
ইতোমধ্যে তিনি যদি মুক্তিও লাভ করেন তবুও তাকে ৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে। সংবিধান দেশের সর্বোচ্চ আইন। কাজেই এ আইনের পরিপন্থী যদি কোনো আদেশ হয় তবে অবশ্যই আমরা বিষয়টি আপিল বিভাগের দৃষ্টিতে আনব। কেননা, বিষয়টি সংবিধানে স্পষ্ট করাই আছে।’
গত ২৭ নভেম্বর দুর্নীতির অভিযোগে বিচারিক আদালতে দায়ের হওয়া মামলার দণ্ড (কনভিকশন অ্যান্ড সেন্টেন্স) স্থগিত চেয়ে বিএনপির ৫ নেতার করা আবেদন খারিজ করে দেন হাইকোর্টের অপর একটি দ্বৈত বেঞ্চে। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এ মামলার পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছিলেন, বিচারিক আদালতে কোনো ব্যক্তি ২ বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না এবং তার সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দণ্ড স্থগিত করা হলেও বা আপিল চলাকালেও কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত কিংবা বাতিল হলে ওই ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা থাকবে না বলেও আদালত মন্তব্য করেন।