স্থানীয় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গ্রাম আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে : রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি :স্থানীয় ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় গ্রাম আদালত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হিসেবে ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন গ্রাম আদালত পরিচালনা করা তাদের অন্যতম গুরু দায়িত্ব। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ন্যায়বিচারের কোন বিকল্প নেই। সুবিচার এলাকায় অপরাধ প্রবণতা কমিয়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সহায়তা করে।

লাইট হাউসের নির্বাহী প্রধান হারুন-অর-রশীদের সভাপতিত্বে রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল হান্নান প্রধান অতিথি হিসেবে গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ উদ্বোধন করার সময় উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। তিনি উপস্থিত চেয়ারম্যানদের গ্রাম আদালত পরিচালনায় আরো সচেষ্ট হতে বলেন এবং এর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার পরামর্শ দেন।

লাইট হাউস যুক্তরাজ্য সরকারের (ইউকে-এইড) অর্থায়নে ও ম্যাক্সওয়েল স্ট্যাম্প-পিএলসি’র কারিগরি সহায়তায় ইমপ্রুভড্ জাস্টিস এ্যা- লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস (ইজলাস) প্রকল্পের আওতাধীন রাজশাহী বিভাগের সাতটি জেলার অন্তর্গত মোট ১১টি উপজেলার নবনির্বাচিত চেয়ারম্যানদের জন্য দুই দিনব্যাপি “গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ বিষয়ক প্রশিক্ষণ” -এর আয়োজন করা হয়েছে। এ পর্যায়ে, দুটি ব্যাচে মোট ৬৪ জন চেয়ারম্যানকে এই প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) মোঃ আমিনুল ইসলাম এবং রাজশাহী রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি মোঃ নিসারুল আরিফ। বুধবার সকালে প্রশিক্ষণের উদ্বোধন পর্বটি রাজশাহী মহানগরস্থ এনজিও ফোরামের কনফারেন্স হলে অনুষ্ঠিত হয়। প্রশিক্ষণের এই ব্যাচে রাজশাহীর বিভিন্ন অ লের মোট ৩৫ জন চেয়ারম্যান অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত অতিথিবৃন্দ সবাই গ্রাম আদালত সক্রিয়করণের উপর জোর দেন। সহজ পন্থায় গ্রামা লের সাধারণ মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় এলাকার নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি সহ সকলের ভূমিকা পালন করা উচিত বলে মতামত ব্যক্ত করেন।

হারুন-অর-রশীদ বলেন, গ্রাম আদালত সক্রিয়করণ ও এর কার্যক্রমে গতিশীলতা আনয়নের জন্য নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যানদের আদালত পরিচালনায় দক্ষতা অর্জন করা খুবই অপরিহার্য। এক্ষেত্রে প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। দরিদ্র ও সুবিধা-বি ত জনগোষ্ঠীর ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় স্থানীয়ভাবে গ্রাম আদালত ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে।

আইনগত সহায়তা প্রকল্পের টিম লিডার নিকোলাস বিশ্বাস অত্র প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেন এবং বলেন, প্রকল্পের ধারাবাহিক কাজের অংশ হিসেবে স্থানীয় বিচার ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে এই প্রশিক্ষণের আয়োজন করা হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় সংশ্লিষ্ট ইউপি সচিবদেরও গ্রাম আদালতের দালিলিক কাজের উপর নিবিড় প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

এ প্রকল্পের আওতায় রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন অ লে গত তিন বছরে মোট ৪,৩৩,৯৭৮ জন ব্যক্তিকে আইনগত সেবা প্রদান করা হয়েছে। এরমধ্যে ৪৬৭৬ জন অসহায় গরীব বিচারপ্রার্থীর ন্যায়বিচার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে আইনি সেবা প্রদান করা হয়।

সক্ষমতার তুলনায় বেশি মামলার চাপ এবং অপ্রতুল লোকবলের কারণে দেশের প্রচলিত আদালতগুলোতে মামলা নিস্পত্তিতে র্দীঘসূত্রতা একরকম নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলস্বরূপ, অমীমাংসিত মামলার জট এখন বিচার বিভাগের জন্য বড় বোঝা। ফলে গ্রামীন জনগোষ্ঠীর ভোগান্তির শেষ নেই। তাই, গ্রাম আদালতএগুলোকে সক্রিয় ও গতিশীল করা খুবই জরুরী এবং সময়ের দাবী। কিন্তু নানাবিধ কারণে ইউপি চেয়ারম্যানগণ গ্রাম আদালত সঠিকভাবে পরিচালনা করতে পারছেন না।

গ্রামের দরিদ্র ও পিছিয়ে পড়া অসহায় মানুষের কাছে বিচারিক সুবিধা পৌঁছে দিতেই সরকার গ্রাম আদালত চালু করেছে। দেশের বহু অসহায় গরীব ও অসহায় মানুষ গ্রাম আদালতের সুবিধার আওতায় রয়েছে। এজন্য গ্রাম আদালত সক্রিয় ও কার্যকর করতে পারলে দেশের আদালতগুলোর উপর যে অপরিসীম মামলার চাপ রয়েছে তা বহুলাংশে কমে যাবে এবং বিচারপ্রার্থীদের অহেতুক কষ্ট, অর্থ ব্যায় ও ঝামেলা লাঘব হওয়ার পাশাপাশি গ্রামের সাধারণ বিচারপ্রার্থী উপকৃত হোত।

স্থানীয় সরকার পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (রাজস্ব) আমিনুল ইসলাম, সিনিয়র সহকারী জজ ও লিগ্যাল এইড অফিসার সেলিম রেজা সহ লাইট হাউসের নিকোলাস বিশ্বাস, সিদ্দিকুল আলম মামুন, ফারুক হোসেন ও রশিদা খাতুন প্রশিক্ষণে গ্রাম আদালত, শালিসি পরিষদ ও আইনগত সহায়তা বিষয়ক সেশন পরিচালনা করেন।