সাগরে জলদস্যুর উৎপাত বৃদ্ধি, উপকূলে ফিরে আসছে জেলেরা

মাহাবুবুর রহমান,কক্সবাজার
বঙ্গোপসাগরের সোনাদিয়া মোহনা ও কুতুবদিয়ার  মোহনায় জলদস্যুরা আবারো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। পুলিশের পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় জলদস্যুরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। উপকূলেরে জলদস্যু সম্্রাট মোকারম জাম্বু,  কালারমারছড়ার শাহজাহান এর নেতৃত্বে তান্ডব চলছে বলে অভিযোগ করেছেন জেলেরা।
কিছুদিন বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুতা কমে আসলেও এখন আবারো তান্ডব শুরু হয়েছে। প্রায় অর্ধশতাধীক জলদস্যু সাগরে সক্রিয় রয়েছে যারা এখানো রয়েছে ধরা ছোঁয়ার বাইরে। তাদের আস্তনাগুলো অক্ষত থাকায় আতংকিত হয়ে পড়েছেন জেলেরা। যার ফলে ফিশিং ট্রলার নিয়ে জেলেরা সাগরে না গিয়ে সোনাদিয়ার মোহনা থেকে উপকূলে ফিরে আসতে শুরু করেছে। যারা এখনো  সাগরে রয়েছে তাদের পরিবারে আতংক বিরাজ করছে।
ব্যবসায়ি আবদুল মাবুদ জানিয়েছেন, বঙ্গোপাসাগরে জলদস্যুরা যেভাবে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে এতে সাগরে মাছ ধরা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাদের নির্মুল করতে জলদস্যুদের আস্তানাগুলো গুটিয়ে দেওয়া জরুরী। সোনাদিয়া এলাকায়  ল্যং ফরিদ, ও জাম্বু  বাহিনীর লোকজন সক্রিয় রয়েছে। একই সাথে পেকুয়ার রহিমা বাহিনী, মাতারবাড়ী শিমুল বাহিনী, ধলঘাটার জসু, বেলাল বাহিনীর লোকজন সাগরে সক্রিয় থাকায় জেলেরা সাগরে যেতে ভয় পাচ্ছে। শুধু মাছ নিয়ে আসার সময় নয়, মাছ ধরতে যাওয়ার সময়ও তেল, ডালসহ মুল্যবান জিনিসপত্র জলদস্যুরা লুঠরে নিয়ে যায়।
কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইলের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম জানান, গত এক মাসে কুতুবদিয়ার মোহনায় প্রায় অর্ধশত ফিশিং ট্রলার জলদস্যু কর্তৃক আক্রান্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের বাশঁখালী, আনোয়ারা, সন্দীপ ও হাতিয়ার জলদস্যুরা কুতুবদিয়ায় অবস্থান করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে। তাদের সাথে মহেশখালীর নোনাছড়ির শাহজাহান, লেং ফরিদ, জাম্বু, জসু বাহিনীর সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ থাকে। জেলা ফিশিং ট্রলার শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবদুল হালিম মাঝি জানান, সাগরে নিরাপত্তা জোরদার না হলে শ্রমিকরা কঠোর কর্মসূিচ দিতে বাধ্য হবে। সম্প্রতি নিহত জেলেদের কেউ কক্সবাজারের না হলে সর্বত্র আতংক বিরাজ করছে। অনেক জেলের পরিবার ইতোমধ্যে সাগরে মাছ ধরতে যাওয়া তাদের পরিবারের লোকজনকে ফিরিয়ে আনতে আকুতি জানাচ্ছেন।
ধলঘাট সুতরিয়ার ব্যবসায়ি সরওয়ার আলম জানান, মহেশখালী থেকে কক্সবাজার মানুষ পারাপারে জন্য যে স্পীডবোটগুলো রয়েছে তা সন্ধ্যার পরে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের ভাড়া দেওয়া হয়। তারা সাগর থেকে উপকূলের দিকে আসা ফিশিং ট্রলারের মূল্যবান মাছগুলো জেলেদের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে। ৫/৬ দিন সমুদ্রে থেকে যে মাছগুলো জেলারা পায় তা নিয়ে  সোনাদিয়া ও কোহেলিয়া নদীর  মোহনা পার হয়ে  জলদস্যুদের কারণে কক্সবাজার আসতে পারছেনা জেলেরা। জলদস্যুরা স্পীডবোট ব্যবহার করায় আর পালানোর পথও থাকছেনা। তবে জানতে পেরেছি মহেশখালী এক প্রভাবশালীর লোকের স্পীডবোট গুলোই জলদস্যুরা ব্যবহার করছে বেশি।
কক্সবাজার শহরের মোক্তার মাঝি জানান, সন্ধ্যার আগেই সোনাদিয়ার মোহনায় ২/৩ টি করে স্পীডবোট অবস্থান নেয়। তাদের ভয়ে গত দুই ট্রিপ মাছ বিক্রি করেছি চট্টগ্রামে। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম গিয়ে মাছ বিক্রি করলে না পোষালেও অনেকটা বাধ্য হয়েই চট্টগ্রাম যেতে হচ্ছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে কক্সবাজারে কোন ট্রলার মাছ নিয়ে আসবে না।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ জানান, সাগরে অভিযান চালানোর মত লোকবল ও আনুষাঙ্গিক কিছু পুলিশের নেই। তারপরও খবর পেলে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে কয়েকজন জলদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তালিকাভুক্ত জলদস্যুদের ব্যপারে পুলিশ তীক্ষ্ন নজর রয়েছে।