‘সরকার মৌলবাদী রাজনৈতিক দলকে প্রশ্রয় দিচ্ছে’

অনলাইনডেস্ক: ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগ এনে ইসলামপন্থী দল হেফাজতে ইসলাম মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামালকে গ্রেফতারের জন্য ২৪ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়ার প্রতিবাদে মানবাধিকার কর্মীরা সরব হয়েছেন।

মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, সরকার মৌলবাদী রাজনৈতিক দলকে প্রশ্রয় দিচ্ছে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটূক্তির অভিযোগে রোববার ঢাকার একটি আদালতে মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির এবং গণ-জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে দায়ের করা তৃতীয় মামলা আদালতে গৃহীত হয়নি।

ঘটনার শুরু গত ২৬শে মে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে স্থাপন করা গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলাকে কেন্দ্র করে। হেফাজতে ইসলামের দাবির প্রেক্ষাপটে ঐ ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এরপর ভাস্কর্য সরিয়ে ফেলার প্রতিবাদে আয়োজিত এক মিছিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটূক্তি করে স্লোগান দেয়া হয়েছে, এই অভিযোগে এর আগে ঢাকা এবং গাজীপুরে দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

এরপর একই অভিযোগে রোববার ঢাকার মহানগর হাকিমের আদালতে মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির এবং গণ-জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা দায়ের করেন চকবাজারের একজন ব্যবসায়ী।

তবে, এই অভিযোগে আরো মামলা দায়ের হয়েছে এই যুক্তিতে পরে আদালত মামলাটি গ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত জানায়।

এর আগে এই ভাস্কর্য সরানো নিয়ে একটি বেসরকারি টেলিভিশনে আয়োজিত টকশো’তে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়ে মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল বক্তব্য দিয়েছেন, এমন অভিযোগ করে তাকে গ্রেফতারের জন্য ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয় হেফাজতে ইসলাম।

সেই আল্টিমেটামের সময়সীমা পেরিয়ে গেছে শনিবার।

এখন মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করছেন, সরকার মৌলবাদী রাজনৈতিক দলকে প্রশ্রয় দিচ্ছে।

বিবিসি বাংলাকে সুলতানা কামাল বলেন, প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে দেয়া হুমকির ব্যপারে সরকার এখনো ব্যবস্থা নেয়নি।

“মানবাধিকার কর্মীদের সুরক্ষা দেবার যে দায়িত্ব রাষ্ট্র নিয়েছে, তা অনেকদিন ধরেই তা পালন করছে না রাষ্ট্র।”

“আমাকে যে ভাষায় হুমকি দেয়া হয়েছে, তারা লিখছে, যে সুলতানা কামালকে ইট খোলায় পোড়ানো হবে, যে ব্যক্তি বলেছে যে সুলতানা কামালের হাড়-মাংস এক জায়গায় থাকবে না, সেতো একটা ফৌজদারি অপরাধ করেছে, তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না?”

এ বিষয়টি নিয়ে রোববার বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরা একটি বৈঠকে বসেছেন, যেখান থেকে তাদের একটি বিবৃতি দেবার কথা রয়েছে।

মানবাধিকার কর্মীদের অভিযোগ, সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে হেফাজতে ইসলামকে সাথে রাখতে চাইছে বলেই কোন ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। যদিও সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করছে।

প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম বলছেন, এখানে রাজনীতির কিছু নেই।

“যেকোন নাগরিকের আইনের আশ্রয় নেবার অধিকার নেবার অধিকার রয়েছে। তিনি সেটা করেছেন কিনা আমার জানা নেই। এখানে রাজনীতির কিছু নেই। আপনারা ফেসবুকে যদি দেখেন, এত মানুষকে কদর্য ভাষা গালিগালাজ করছে সবাই, এগুলো এত গায়ে নিলে চলে না।”

এইচটি ইমাম এক্ষেত্রে সুলতানা কামালকে আইনি পদক্ষেপ নেবার পরামর্শ দেন। আজ এ নিয়ে যদিও মিসেস কামালের বক্তব্য, কথা প্রসঙ্গে বলা তার একটি কথাকে ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

এর আগে এ মাসের শুরুতে সুপ্রীম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য অপসারণ বিষয়ে সরকার উগ্র ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছে—এমন অভিযোগ করে, তার প্রতিবাদে একটি যৌথ বিবৃতি দিয়েছিলেন ৪০৮জন বুদ্ধিজীবী।-বিবিসি।