শেয়ালের আক্রমণ থেকে নবজাতককে বাঁচাল কুকুর

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:
ময়মনসিংহের গৌরীপুরে পিতৃহীন এক নবজাতককে শিয়ালের আক্রমণ থেকে বাঁচিয়েছে কুকুর। উপজেলার মাওহা ইউনিয়নের নিজমাওহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত শুক্রবার গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানান, সুরিয়া নদী সংলগ্ন জঙ্গলের পাশে স্কুলের বারান্দায় ছেলেসন্তানের জন্ম দেন এক তরুণী। রাতেই স্কুলের উন্মুক্ত বারান্দায় নবজাতকের ওপর শিয়াল হানা দেয়। এ সময় শিয়ালগুলোকে তাড়া করে কুকুর। এতে কুকুরের ভয়ে শিয়ালগুলো পালিয়ে যায়।
মধ্য রাতে কুকুরের ‘ঘেউ ঘেউ’ শব্দ গ্রামবাসী অন্য দিনগুলোর মতো স্বাভাবিকভাবেই নেন। এজন্য কেউ ঘটনাস্থলে যাওয়ার প্রয়োজন মনে করেনি।
স্থানীয়রা আরও জানান, শনিবার ভোরে স্থানীয় বাসিন্দা মো. লাল মিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখতে পান নবজাতক একটি শিশু ও প্রসূতি মা স্কুলের মেঝেতে পড়ে আছেন। রক্ত শুকিয়ে মেঝে লাল হয়ে গেছে।
এ দৃশ্য দেখে চিৎকার করতে থাকেন লাল মিয়া। তার চিৎকারে ছুটে আসেন প্রতিবেশী উকিলের মা। তিনি নবজাতক শিশুটির নাড়ি কেটে কোলে তুলে নেন।
উকিলের মা জানান, নবজাতক শিশুটি মেঝেতে পড়ে থাকায় শীতে কালো হয়ে যায়। মায়ের অবস্থাও আশঙ্কাজনক। এ অবস্থায় তিনি প্রসূতি মাকে নিজ বাড়ি নিয়ে আসেন। প্রাথমিক চিকিৎসারও ব্যবস্থা করেন। তবে ওই প্রসূতির পরিচয় পাওয়া যায়নি।
তিনি বলেন, আমার চার ছেলে ও তিন মেয়ে আছে। তাদের সবার বিয়ে হয়েছে। নাতি-নাতনিদের নিয়ে জীবন চলছিল। বিজয়কে এখন আমি নিজের নাতি মনে করছি। তবে এ তরুণীকে আগে কেউ এ এলাকায় দেখেনি বলে জানান তিনি।
এদিকে অজ্ঞাত ওই তরুণীর বাচ্চা প্রসবের ঘটনা জানাজানি হলে উকিলের মায়ের বাড়িতে অনেকে ভিড় জমায়।
স্থানীয় আনোয়ার হোসেন জানান, ধারণা করা হচ্ছে রাতে নবজাতককে নিয়ে যেতে শিয়ালের দল কয়েকবার হানা দিয়েছিল। কিন্তু কুকুরের তাড়া খেয়ে নিতে পারেনি। আমি নিজেও সকালে বিদ্যালয়ের পেছনে শিয়াল ঘুরতে দেখেছি।
মহান বিজয় দিবসের রাতে জন্ম নেয়ায় নিজমাওহা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল ইসলামসহ প্রতিবেশীরা মিলে নবজাতকের নাম রেখেছেন ‘বিজয়’।
প্রসূতি নারী নিজেকে ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার বাসিন্দা দাবি করে জানান, তিনি অবিবাহিত। ভিক্ষা করার সময় ধর্ষণের শিকার হয়েছেন।
তবে এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।
গৌরীপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার আহম্মদ বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। প্রসূতির পরিচয় ও স্বজনদের খোঁজার চেষ্টা চলছে।