সোনারগাঁ সংবাদদাতা:
সোনারগাঁয়ের বারদী এলাকার শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারীর আশ্রমের কমিটি পূনরায় গঠন নিয়ে দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শনিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের লোকজনের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে সোনারগাঁ থানার ওসি ও বারদী ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৫ জন আহত হয়।
আশ্রম কমিটি ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বারদী এলাকায় অবস্থিত শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম পরিচালনার জন্য ২০১১ সালে ব্রি: জে: (অব:) জয়ন্ত কুমার সেনকে সভাপতি ও শংকর কুমার দে কে সাধারণ সম্পাদক করে দুই বছর মেয়াদের কমিটি গঠন করা হয়। সেই কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন কোন কমিটি আর গঠন করা হয়নি। যার কারনে আরো দুই বছর যাবত পুরনো কমিটিই পরিচালনা করেছেন লোকনাথ আশ্রম। নতুন কমিটি না হওয়ায় লোকনাথ ভক্তদের মধ্যে দিন দিন ক্ষোভ জমতে থাকলে কমিটির সভাপতিকে কয়েকবার বিষয়টি অবহিত করা হয়। গত কয়েক সপ্তাহ যাবত কমিটির পূনরায় গঠন করা নিয়ে বর্তমান কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সমর্থকদের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এদিকে গত শুক্রবার বর্তমান কমিটির সভাপতি ব্রি: জে: (অব:) জয়ন্ত কুমার সেন মাইকে ঘোষনা করেন শনিবার আশ্রম কমিটি পূনরায় গঠন করা হবে। এমন ঘোষনায় কমিটির সাধারন সম্পাদক শংকর কুমার দে ও তার সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এ ঘটনায় ওইদিন রাতেই শংকর কুমার দে সোনারগাঁ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরে গতকাল সকালে বর্তমান কমিটি ও সাবেক কমিটির সদস্য ও তাদের সমর্থকরা পৃথকভাবে আশ্রম এলাকায় মিলিত হয়ে বাক-বিতন্ডা শুরু করে। এক পর্যায়ে উভয় পক্ষের মধ্যে শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। পরিস্থিতি সামাল দিতে স্থানীয় চেয়ারম্যান জহিরুল ইসলাম ঘটনাস্থলে গিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে সমঝোতার চেষ্টা করে ব্যর্থ ও আহত হন। পরে আবারো শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া। এক পর্যায়ে দুই পক্ষই লাঠিসোটা নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে উভয় পক্ষের রতন ও অজ্ঞাত দুইজন আহত হয়। সংবাদ পেয়ে সোনারগাঁ থানার ওসি শাহ মোঃ মঞ্জুর কাদের ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে দুই পক্ষের মাঝে পড়ে তিনিও আহত হন। পরে আশ্রমের ভেতরে থাকা জনসাধারনকে বের করে প্রধান ফটক বন্ধ করে দেয়া হলে বিক্ষুদ্ধরা মন্দিরের ফটক ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা করে। এসময় আশ্রমের ফাঁড়ি পুলিশ ছাড়াও থানা থেকে আরো পুলিশ সদস্য গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। এদিকে একই সময়ে শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রক্ষচারী আশ্রম পরিদর্শনে আসেন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ, বিচারপতি অশীষ রঞ্জন দাস, বিচারপতি জে.এন. দেব চৌধুরী, বিচারপতি ভিষ্ম দেব চক্রবর্তী, বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ, বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর, বিচারপতি সৌমেন্দ্র সরকার, বিচারপতি গৌর গোপাল সাহা। বিচারপতিদের সাথে ছিলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের এডিশনাল সেক্রেটারি ড: রাখাল চন্দ্র বর্মন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো: আনিছুর রহমান মিয়া, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাছের ভূঞাঁ, আশ্রম কমিটির সভাপতি ব্রি: জেনারেল (অব:) জয়ন্ত কুমার সেন, সাধারণ সম্পাদক শংকর কুমার দে, স্থানীয় আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এড. শামসুল ইসলাম ভূইয়াসহ আরো অনেকে। এসময় কমিটি পূনরায় গঠন নিয়ে দুই পক্ষের লোকজনের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করতে দেখে নারায়ণঞ্জের জেলা প্রশাসক মো: আনিছুর রহমান মিয়া সঠিক নিয়মে কমিটি পূনরায় গঠন হবে বলে আশ্বাস দেন।
এ বিষয়ে কমিটির সভাপতি ব্রি: জেনারেল (অব:) জয়ন্ত কুমার সেন জানান, ২০১১ সালে কমিটি গঠন করার পর থেকেই সাধারন সম্পাদক শংকর কুমার দে তার নিয়ন্ত্রীত কয়েকজন সদস্যকে নিয়ে আমাকে (সভাপতি) না জানিয়ে বিভিন্ন সময়ে কমিটির মিটিং, হিসাব নিকাশ ও আশ্রমের বিভিন্ন কাজ নিয়ে বিতর্কিতমূলক কর্মকান্ড করেন। তার বিভিন্ন বিতর্কিত মূলক কাজের কারনে অনেকের কাছে লজ্জায়ও পরতে হয়েছে আমাকে। তাছাড়া যখনই তাকে মিটিং করার কথা বলি তখনই তিনি বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে এড়িয়ে যান। তার এহেন কর্মকান্ডে স্থানীয়রাও ক্ষুদ্ধ। যার কারনে আজকে এই অবস্থা। সাধারণ সম্পাদক শংকর কুমার দে জানান, বর্তমান সভাপতি ব্রি: জেনারেল (অব:) জয়ন্ত কুমার সেন কমিটির সদস্য ও উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের না জানিয়ে একক সিদ্ধান্তে হঠাৎ মাইকিং করে জরুরী সভা আহবান করে। এতে লোকনাথ ভক্তরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রাখতে সোনারগাঁ থানা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। তিনি আরো জানান, গতকাল সকালে সভাপতির লোকজন লাঠি-সোঠা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আশ্রমের ভেতরে প্রবেশ করতে চাইলে লোকনাথ ভক্তরা তাদেরকে বাধা দিলে সংঘর্ষ বাধে।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোঃ আনিছুর রহমান মিয়া ও সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু নাছের ভুঞাঁ জানান, সঠিক নিয়মেই কমিটি পূরায় গঠন হবে। এ বিষয়ে গঠনতন্ত্র মোতাবেক বর্তমান উপদেষ্টা ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে আগামী শনিবার নারায়ণগঞ্জ সার্কিট হাউজে সভা আহবান করা হয়েছে।
এদিকে আশ্রমে আসা লোকনাথ ভক্ত চিনু রানী বিশ্বাস, দীপালী রানী, গৌতম, দীপনসহ আরো অনেকে বলেন, আমরা মানত করে ও বাবার দর্শনে দুর-দুরান্ত থেকে বাবার আশ্রমে এসে সামর্থ অনুযায়ী প্রণামী দিয়ে প্রসাদ নিয়ে যাই। কর্তৃপক্ষ কি করে না করে সেটা আমাদের দেখার বিষয় না। তবে আজকের (শনিবার) মতো যদি এমন পরিস্থিতি হয় তাহলে বাবার সুনাম ক্ষুন্ন হবেনা ঠিকই তবে অনেক দান অনুদান কমে যাবে। তাই সকলের কাছেই দাবী আপনারা যাই করুন বাবার আশ্রমের ভেতরের পরিবেশ যাতে কখনো নষ্ট না হয়।
সোনারগাঁ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শাহ মোঃ মঞ্জুর কাদের জানান, দুই পক্ষের উত্তেজনার খবর পেয়ে যেতে যেতেই ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। তাদের শান্ত করতে গিয়ে সামান্য আঘাত লেগেছে। তাছাড়া দুই পক্ষের কেউ কোন অভিযোগ করেনি।