একাত্তর লাইভ ডেস্ক:
ইসলামে দোয়ার গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনেক বেশি। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘আর তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’
আল্লাহ তায়ালা এখানে দোয়া করতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং পাশাপাশি তা কবুলের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। একই আয়াতে সামনে গিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয় যারা অহমিকা প্রদর্শন করে, আমার ইবাদত করে না, তারা লাঞ্ছিত হয়ে অবিলম্বে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ (সূরা গাফির : ৬০)।
এখানে তিনি বান্দার দোয়াকে ইবাদত হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন এবং দোয়া বর্জনকারীকে অহংকারী সাব্যস্ত করে কঠোর সমালোচনা করেছেন। উদ্ধৃত আয়াতের ব্যাখ্যায় বিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ তাফসিরে উসমানীতে বলা হয়েছে, ইবাদত-বন্দেগির শর্ত হলো, আপন প্রতিপালকের কাছে দোয়া করা। দোয়া না করাটা অহংকার ও দম্ভ। এই আয়াত দ্বারা জানা যায় যে, আল্লাহ তায়ালার কাছে বান্দার দোয়া করাটা তিনি পছন্দ করেন। বান্দার কাজই হলো চাওয়া, দোয়া করা। এই দোয়া করাই একটি ইবাদত; বরং ইবাদতের মূল। (তাফসিরে উসমানী, চতুর্থ খ-, ৯৮-৯৯)।
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, যে বান্দা আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করে না তার প্রতি তিনি রাগান্বিত হন। (তিরমিজি : ৩৩৭২)। মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন, আচ্ছা বলো তো কে সাড়া দেন নিঃসহায়ের ডাকে, যখন সে তাকে ডাকে এবং তাকে করেন বিপদমুক্ত? (সূরা নামল : ৬২)। অন্যত্র বলেন, আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, আমি তো (তখন) কাছেই। দোয়াকারী যখন আমার কাছে দোয়া করে, তখন আমি তার দোয়া কবুল করি। (সূরা বাকারা : ১৮৫)।
নুমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, ‘দোয়া হচ্ছে ইবাদত’। অতঃপর তিনি নিম্ন আয়াত পাঠ করেন, ‘নিশ্চয় যারা অহমিকা প্রদর্শন করে আমার ইবাদত করে না, তারা লাঞ্ছিত হয়ে অবিলম্বে জাহান্নামে প্রবেশ করবে। (তিরমিজি : ৩৩৭২)। পবিত্র কোরআনে দোয়া করতে যেরূপ উৎসাহ করা হয়েছে তদ্রƒপ হাদিসেও উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে। হজরত সালমান (রা.) থেকে বর্ণিত যে, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা জীবিত, চিরঞ্জীব ও সম্মানিত। কোনো বান্দা হাত তুললে তিনি শূন্য হাত ফিরিয়ে দিতে লজ্জাবোধ করেন। (তিরমিজি, দোয়া অধ্যায়, ১০৫ অনুচ্ছেদ : ৩৫৫৬; সূনানে আবি দাউদ : ৪/৩৫৭)। হজরত আনাস (রা.) বলেন, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা দোয়ায় অক্ষম হয়ো না। কেননা, কেউ দোয়া করে ধ্বংস হয় না।’ (মুস্তাদরাকে হাকিম : ১/৪৯৩; সহিহ ইবনে হিব্বান : ৮৭১)। ইমাম আহমদ, বাযযার, আবু ইয়ালা বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণনা করেন, আবু সাইদ খুদরি (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) বর্ণনা করেন, কোনো মুসলমান যদি এমন দোয়া করে যাতে কোনো গোনাহ ও আত্মীয় সম্পর্কচ্ছেদ নেই। আল্লাহ তায়ালা তখন তাকে তিনটির যে কোনো একটি দান করেন। হয়তো তৎক্ষণাৎ দোয়ার ফল দিয়ে দেন। অথবা পরকালের জন্য রেখে দেন। অথবা তার থেকে তদ্রƒপ অমঙ্গল দূরীভূত করেন। (মুসনাদে আহমাদ : ১৭/১১১৩৩)। হজরত ওমর (রা.) বলেন, আমি দোয়া কবুলের ভয় করি না। বরং দোয়া না করার ভয় করি। কেউ ‘আল্লাহুম্মা’ (হে প্রভু!) বললে কবুল হওয়া নিশ্চিত।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ এভাবে দোয়া করো না, ‘হে প্রভু তুমি ইচ্ছা করলে আমাকে ক্ষমা করো। হে প্রভু! তুমি ইচ্ছা করলে দয়া করো।’ বরং তার উচিত দোয়ায় (কবুলের) দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। কেননা, দোয়া আল্লাহ তায়ালার কাছে অপছন্দনীয় নয়। (বোখারি, তাওহিদ অধ্যায় : ৫৯৮০; সহিহ মুসলিম, জিকির ও দোয়া অধ্যায় : ২৬৭৯)। হজরত ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, আমি একবার ওমরার জন্য প্রিয় নবী (সা.) এর কাছে অনুমতি আরজ করলাম। তিনি আমাকে অনুমতি দিলেন এবং বললেন, ‘হে ভাই! তোমার দোয়ায় আমাকে শরিক করতে ভুলো না।’ হজরত ওমর (রা.) বলেন, নবীজি (সা.) এমন একটি কথা বলেন, যার বিনিময়ে সারা পৃথিবী হলেও আমি তার চেয়ে বেশি আনন্দিত হতাম না। (আবু দাউদ : ১৫০০)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, প্রিয় নবী (সা.) বলেন, আল্লাহ তায়ালা বলেন, আমি বান্দার ধারণা অনুযায়ী আছি। সে যখন আমাকে ডাকে তখন আমি তার সঙ্গে থাকি। (মুসলিম : ৭০০৫)।