মুক্তিযুদ্ধের লড়াকু সৈনিক তপন মাস্টার পায়নি মুক্তিযোদ্ধার মর্যাদা

বেলকুচি (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধি:
স্বাধীনতার ৪৫ বছর পার হয়েছে। কত বিতর্কিত ব্যক্তির নাম তালিকায় উঠেছে। কিন্তু তপন কুমার সরকার (তপন মাষ্টার) এর ভাগ্য যোটেনি তালিকায় তার নাম। তপন মাষ্টার যুদ্ধ করেছিলেন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থানার কল্যাণপুর, এনায়েতপুর থানার বেতিল,খামার গ্রাম ও কৈজুরী এলাকায়। রনাঙ্গনের সেই দুঃসহ স্মৃতি এখনো তাকে তাড়া করে ফেরে। কিন্তু রনাঙ্গনের এই যোদ্ধার এখন সার্টিফিকেটই ভরসা। ভারতের মাইনকার চর যুব ক্যাম্পে প্রশিক্ষন নিয়ে এই যোদ্ধা দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার নাম তালিকায় ওঠেনি এখনও। তালিকায় নাম ওঠাতে বিভিন্ন সময় টাকা দাবী পুরণ না করার কারণে সম্মুখ যুদ্ধে লড়াই করা এই বীর নীরবে নিভৃত্বে জীবন যাপন করছেন।
তপন কুমার সরকার (তপন মাষ্টার) ১৯৫৫ সালের ১ জানুয়ারী মাসে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুজি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের তিয়াশিয়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তার বাবার নাম মৃত তারা পদ সরকার। যুবক বয়সে ডাক আসে যুদ্ধে যাওয়ার। বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনি ১৯৭১ সালের আগষ্ট মাসের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধু ডাকে সারাদিয়ে ১৭ বছর বয়সে ছাত্র জীবনে যুদ্ধে চলেযায়। গ্রাম থেকে বেরিয়ে কুরিগ্রাম জেলার রৈমারি থানায় একত্রিত হয় সেখান থেকে নৌকা যোগে ভারতের মাইনকার চর যুব ক্যাম্পে প্রশিক্ষন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। অস্ত্র হাতে ঝাপিয়ে পরেন যুদ্ধে। চোখের সামনে অনেক সহযোদ্ধাকে অকাতরে জীবন দিতে দেখেছেন তিনি।
topon-mfstar-2
মুক্তিযোদ্ধা তপন মাষ্টার এই প্রতিবেদককে জানায়, দেশে যুদ্ধ লাগলে বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধ করার জন্য পালিয়ে পালিয়ে রৈমারিতে যোগদেই। ভারতের মাইনকার চর মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক এমএজি ওসমানির নেতৃত্বে বিভিন্ন প্রশিক্ষকের কাছে প্রশিক্ষন নেই, ২০ দিন প্রশিক্ষন শেষে রৈমারি হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করি। ৭ নং সেক্টও আঞ্চলিক কমান্ডার গিয়াস উদ্দিনের অধিনে কমান্ডার আব্দুল মান্নান ও ডেপুটি কমান্ডার রবিন্দ্রনাথ বাগচীর নেতৃত্বে সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার কল্যানপুর, এনায়েতপুর থানার বেতিল, খামারগ্রাম ও কৈজুরিতে স্থল পথে যুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন, ৭নং সেক্টও আঞ্চলিক কমান্ডার গিয়াস উদ্দিনের উপস্থিতিতে সিরাজগঞ্জের কালীবাড়ী অস্থায়ী অফিসে অস্ত্র জমা দেওয়ার পর কামারখন্দ থানার কোরব আলী কলেজে ছাত্র জীবনে ফিরে যাই। তার কাছে ততকালীন বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর পরিচালক মোহাম্মদ আতাউর গনী ওসমানী ও ৭ নং সেক্টর আঞ্চলিক অধিনায়ক গিয়াস উদ্দিনের সনদ ছাড়া তার কাছে আর কিছুই নেই যার ক্রমিক নং ১২৮২৪৩।
তার সাথে যুদ্ধ করেছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলার শাজাদপুর থানার রতনকান্দী গ্রামের দেবেশ চন্দ্র শ্যান্নাল, বেলকুচি থানার দৌলতপুর গ্রামের শামসুল হক, এনায়েতপুর থানার গাটাবাড়ী গ্রামের মজনু সহ অনেকে। তাদের নাম তালিকায় উঠলেও তিনি বছরের পর বছর ঘুরে হয়রান হচ্ছেন স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও তার নাম তালিকায় নেই। তিনি এ পর্যন্ত বহুবার ফরম পুরণ করে দিয়েছেন, কিন্তু গেজেটে তার নাম আসেনি।
মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র শ্যান্নাল, শামসুল হক ও মজনু জানালেন, তপন মাষ্টার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তাদেরও দাবী তপন মাষ্টারের নাম তালিকাভুক্ত করার।
বিষয়টি নিয়ে বেলকুচি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ অফিসে যোগাযোগ করা হলে তপন মাষ্টারের বিষয়ে খতিয়ে দেখছে বলে কয়েক জন মুক্তিযোদ্ধা জানান।