অনলাইন ডেস্ক : দেশের মানুষ একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ এ দেশের প্রাচীন দল। বিএনপিও এখন আর নবীন দল নয়। সুতরাং সকলে প্রত্যাশা করে উভয় দল দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবে। নোয়াখালী-৪ আসনের বিএনপি নেতা মো. শাহজাহান এবং তার দলীয় কর্মীরা হানিফ নামে আওয়ামী লীগের এক কর্মীকে চোখে মরিচের গুঁড়া মেরে মাটিতে ফেলে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলিয়ে হত্যা করেছে। এ নির্মম হত্যার কথা শুনে দলমত নির্বিশেষে সবাই ব্যথিত হবেন। ২০১৪ সালে চৌদ্দগ্রামে এক ট্রাক ডাইভারকে রাস্তায় ফেলে ইট দিয়ে মাথা থেঁতলিয়ে বিএনপিকর্মীরা হত্যা করেছিল আর চট্টগ্রাম থেকে আসা এক নাইট কোচে পেট্রলবোমা মেরে আটজন নিরীহ যাত্রী হত্যা করেছিল। উভয় মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হুকুমের আসামি করে মামলা হয়েছে। আসলে কর্মী তো চলে নেতার পরিকল্পনা মতে। সুতরাং নেতা মামলার আসামি হওয়া বিচিত্র কিছু নয়।
বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রুজু করা মামলায় কথা বলে বুক চাপড়ায় অথচ মামলা করে যদি তাদের চাপে রাখা না যেত, তবে বাংলাদেশের অবস্থা পাকিস্তান, আফগানিস্তানের মতো হয়ে যেত। আফগানিস্তানে সরকারের শাসন কাবুল, কান্দাহারের মতো কিছু শহরে সীমাবদ্ধ। অথচ আফগানিস্তানে আমেরিকার সেনাবাহিনীও উপস্থিত রয়েছে। তালেবানে পাকিস্তান, পাকিস্তানের অবস্থা করুণ করে রেখেছে। সমৃদ্ধ একটা পাকিস্তানকে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ আর সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের শেখ শাসিত রাষ্ট্রগুলোর দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করার জন্য লজ্জাজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন করেছে। যে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ শতাংশ এখন তার প্রবৃদ্ধির অবস্থা করুণ হয়ে পড়েছে। সম্পূর্ণ দেশটা সন্ত্রাসায়িত হয়ে অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের অবস্থাও তাই হয়েছিল বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল। তখন ৫০০ স্থানে একসঙ্গে বোমাবাজি হয়েছে। গাজীপুর ঝালকাঠিতে তারা বিচারক হত্যা করেছে, বাংলাভাই, শায়েক আবদুর রহমানের অভ্যুদয় হয়েছে। বেগম জিয়ার মন্ত্রিসভার শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী বলেছিলেন বাংলাভাই আর শায়েক আবদুর রহমান বলে কিছু নেই, সবই নাকি মিডিয়ার সৃষ্টি।
সবদলেই ইশতেহার দিয়েছে। ইশতেহারের ভাষা হয় ঝকঝকে চকচকে, উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিতে ঠাসা। উন্নয়নের কথা স্বাধীনতার পর সব দলই বলে আসছে। বর্তমান জীবিত নেতৃবৃন্দের মধ্যে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে আমরা দশ বছর বিএনপির শাসন দেখেছি, আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের শাসন দেখেছি ১৫ বছর। আওয়ামী লীগ যখন ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে তখন দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন হতো ৩ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট। গত দশ বছর টানা শাসনের কারণে এখন বিদ্যুৎ উৎপন্ন হচ্ছে ২০ হাজার মেগাওয়াট। ১৯৯১ সালে দেশে খাদ্য ঘাটতি ছিল ২৯ লাখ টন। এখন টানা দশ বছরের উন্নয়নে দেশে কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। যখন বাংলাদেশে ৭ কোটি মানুষ ছিল তখন শুনেছি ভুখা মিছিল হতো আর ১৬ কোটি জন সংখ্যা হওয়ার পর খাদ্য ঘাটতি না থাকা তো অভূতপূর্ব এক উন্নয়ন।
গত দশ বছর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে বিশ্ব বিস্মিত হয়েছে এবং তার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তিও সৃষ্টি হয়েছে। গত দশ বছরে শাসক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে সাধারণ মানুষ বিশ্বাস ভঙ্গের কোনো বেদনা পায়নি। শেখ হাসিনা দেশের ১৬ কোটি মানুষ নিয়ে চলেছেন আর যখন যা দরকার তার প্রতি কোনো অবহেলা না করে প্রয়োজন মিটিয়ে দিয়েছেন। তাতে দেশের মানুষের মাঝে এক উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়েছে। আর এ উদ্দীপনাই দেশকে উপরের দিকে টেনে তুলছে। সৎ ও দক্ষ নেতৃত্ব হলে দরিদ্র দেশও উন্নত হয়—বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে তার দৃষ্টান্ত। শুনেছি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নাকি ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করেন। আন্তরিক প্রচেষ্টার বদলা আল্লাহই তাকে দেবেন।
এবারের নির্বাচনে দেখার বিষয় হচ্ছে ব্যবসায়ী গ্রুপ, তারকারা ভিন্ন ভিন্নভাবে আওয়ামী লীগের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন, এটা আর কোনো নির্বাচনে দেখা যায়নি। আবার অসংখ্য ব্যবসায়ীও উভয় দলের টিকেটে নির্বাচন করছেন। একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে বিএনপির সঙ্গে। বিএনপির ২৩ দলীয় জোটের সঙ্গে ড. কামাল হোসেন, আ স ম রব এবং মাহামুদুর রহমান মান্না মিলিত হয়ে ঐক্য ফ্রন্ট গঠন করেছে। জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হওয়ায় জামায়াত বিএনপির মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছে। জামায়াতের প্রার্থী সংখ্যা ২৫ জন। এ যাবত বিএনপির ১৩ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে। ঢাকা মহানগরীতে বিএনপির সরব উপস্থিতি না থাকলেও সারা দেশে সমানে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। কোনো এলাকায় বিএনপি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংঘর্ষেও লিপ্ত হচ্ছে। ময়মনসিংহে আওয়ামী লীগের মিছিলে পেট্রলবোমা মেরেছে। সারা দেশে বিএনপির আক্রমণে আওয়ামী লীগের চার কর্মী নিহত হয়েছে। অনেকে ২০১৪ সালের অবস্থার পুনরাবৃত্তি হওয়ার সংশয়ের কথা বলছেন। তবে আমরা এ যাবত ড. কামাল হোসেনের কথাবার্তায় আশান্বিত হয়েছি যে ঐক্যজোট নির্বাচন থেকে সরবে না। তারা নির্বাচন বানচালেরও কোনো চেষ্টা করবে না।
আওয়ামী লীগ প্রচার প্রোপাগান্ডায় মহা-সমারোহ সৃষ্টি করলেও নির্বাচনে কিন্তু উভয় দলের মাঝে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। অবশ্য অবস্থা দেখে অনেকে বলছেন, শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ জিতে আসবে। আওয়ামী লীগকে প্রাতিষ্ঠানিক বিরোধিতা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। বেশি সময়ব্যাপী ক্ষমতায় থাকলে মানুষের মাঝে ক্ষমতাসীনদের প্রতি একটা বিরক্তিভাব সৃষ্টি হয়, ভালো কাজ করার পরও আওয়ামী লীগ টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকার ফলে অনুরূপ একটা অবস্থার মোকাবিলা করছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ কর্মীরা সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে একাট্টা হয়ে তাদের প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করছে। সম্ভবত তারা প্রতিবন্ধকতা উত্তীর্ণ হতে সফল হবে।
৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন। আর মাত্র একদিন বাকি। আমরা আশা করব উভয় দল নিজেদের সংযত রেখে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে সর্বোতভাবে সহায়তা করবে।