মসজিদের মর্যাদা

একাত্তর লাইভ ডেস্ক
আল্লাহ সৃষ্টির ভেতর শ্রেষ্ঠত্বের তারতম্য করেছেন। মুসলিমের ক্ষেত্রে তাকওয়া ও ইবাদত শ্রেষ্ঠত্বের মানদ-। সবাই এতে সমান নয়। পৃথিবীর সব স্থানও সমান মর্যাদার নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় স্থান হলো পৃথিবীর মসজিদগুলো।’ (মুসলিম)। মসজিদ আল্লাহর ইবাদত ও জিকিরের জন্য নির্ধারিত। মোমিনদের মিলন স্থল। মসজিদে হারাম সর্বশ্রেষ্ঠ মসজিদ। এখানে ১ রাকাত নামাজ ১ লাখ রাকাতের সমান। দ্বিতীয় স্থানে আছে মসজিদে নববির মর্যাদা। তৃতীয় স্থানে মসজিদে আকসা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আমার এ মসজিদ, মসজিদে হারাম, মসজিদে আকসাÑ এ তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য মসজিদের দিকে সফরের আয়োজন করা হবে না।’ (বোখারি ও মুসলিম)। মসজিদ আল্লাহর ঘর। নবী-রাসুল ও তাঁদের অনুসারীরা মসজিদ নির্মাণ করেন। ‘স্মরণ করো, যখন ইবরাহিম ও ইসমাঈল (আ.) বায়তুল্লাহর ভিত্তি স্থাপন করেন।’ (সূরা বাকারা : ১২৭)। মসজিদ নির্মাতার জন্য আল্লাহ জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর জন্য যে মসজিদ নির্মাণ করবে আল্লাহ জান্নাতে তার জন্য অনুরূপ ঘর তৈরি করবেন।’ (বোখারি ও মুসলিম)। ‘মসজিদে গমনকারীর প্রতিটি পদক্ষেপে একটি পুণ্য অর্জিত হয়। আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন। একটি পাপ মোচন করেন।’ (মুসলিম)।
মসজিদে যাতায়াত করা ক্ষমা লাভের অন্যতম উপায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নামাজের জন্য পরিপূর্ণরূপে অজু করে ফরজ নামাজ আদায়ের উদ্দেশে যাত্রা করে, তারপর লোকদের সঙ্গে কিংবা জামাতের সঙ্গে অথবা মসজিদে তা সম্পন্ন করে আল্লাহ তার পাপ ক্ষমা করে দেন।’ (মুসলিম)। যার অন্তর সবসময় মসজিদের সঙ্গে তীব্র ভালোবাসায় যুক্ত থাকবে কেয়ামতের ছায়াহীন সময়ে আল্লাহ তাকে তাঁর ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মুসলিম ব্যক্তি যতক্ষণ নামাজের জন্য মসজিদে অবস্থান করবে, ততক্ষণ সে নামাজরত বলে বিবেচিত হবে। নামাজের স্থানে যতক্ষণ বসে থাকবে ফেরেশতারা তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করে বলতে থাকবে, হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করো, হে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করো।’ (বোখারি)। মসজিদ পূর্ববর্তী উম্মতের কাছেও সম্মানিত ছিল। আল্লাহ বলেন, ‘আমি ইবরাহিম ও ইসমাঈল উভয়কে দায়িত্ব দিয়েছি তোমরা আমার ঘরকে তওয়াফকারী, ইবাদতগুজার এবং রুক-সিজদা আদায়কারী লোকদের জন্য পবিত্র করো।’ (সূরা বাকারা : ১২৫)। মসজিদের সেবাকরীকে ইসলাম মর্যাদা দিয়েছে। এক মহিলা মসজিদে নববির আবর্জনা পরিষ্কার করত। সে মারা গেলে রাসুলুল্লাহ (সা.) তার কবরে গিয়ে তার জন্য দোয়া করেন। (বোখারি)।
মসজিদকে সুন্দর করে রাখা কর্তব্য। আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম সন্তান, তোমরা প্রতিটি ইবাদতের সময় তোমাদের সৌন্দর্য গ্রহণ করো।’ (সূরা আরাফ : ৩১)। মসজিদে যাতায়াতের সময় ধীরস্থির থাকা উচিত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নামাজ শুরু হলে তোমরা দৌড়ে যেও না। হেঁটে হেঁটে ধীরস্থিরভাবে যাও। যত রাকাত নামাজ পাও, তা পড়ে বাকিটুকু আদায় করে নাও।’ (বোখারি ও মুসলিম)। ডান পা দিয়ে মসজিদে প্রবেশ করবে। তখন এ দোয়াটি পড়বে, ‘আল্লাহুম্মাফতাহলি আবওয়াবা রাহমাতিক।’ বের হওয়ার সময় বলবে, ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা মিন ফাদলিক।’ (মুসলিম)। মসজিদে প্রবেশ করে প্রথমে দুই রাকাত নামাজ পড়বে। আজান নিরাপত্তা ও শান্তির ডাক। জামাতের সময় প্রথম কাতারের জন্য প্রতিযোগিতা করবে। ‘মানুষ যদি আজান ও প্রথম কাতারের মূল্য জানত, তাহলে তা পেতে প্রয়োজনে লটারি করত।’ (মুসলিম)। ফরজ নামাজের সময় অন্য নামাজ পড়বে না। মসজিদ নির্মাণের উদ্দেশ্য সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘মসজিদ তো আল্লাহর জিকির, নামাজ ও কোরআন তেলাওয়াতের জন্য।’ (মুসলিম)। ‘সেখানে সকাল-সন্ধ্যা লোকেরা আল্লাহর পবিত্রতা পাঠ করবে। ব্যবসা-বাণিজ্য তাদের আল্লাহর জিকির, নামাজ আদায় ও জাকাত প্রদানে উদাসীন করে রাখবে না।’ (সূরা নূর : ৩৬-৩৭)।
‘আল্লাহর ঘরে একত্র হয়ে কোনো দল কোরআন চর্চা করলে তাদের ওপর রহমত ও প্রশান্তি বর্ষিত হয়। ফেরেশতারা তাদের বেষ্টন করে রাখে। আল্লাহ ফেরেশতাদের সামনে তাদের কথা আলোচনা করেন।’ (মুসলিম)। মসজিদে জ্ঞান অর্জন করা পৃথিবীর সব বস্তুর চেয়ে শ্রেষ্ঠ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ মসজিদে গিয়ে দুইটি আয়াত শিখলে তা দুইটি উটনীর চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম)। শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে রাসুল (সা.) এর মসজিদে শিক্ষা লাভ করে এমন এক প্রজন্ম তৈরি হয়েছে, যা কোনো কালে ছিল না, সামনেও হবে না। মসজিদে আত্মা শান্ত হয়। এখানে হট্টগোল করা যাবে না। নবী (সা.) বলেন, ‘সাবধান, তোমরা মসজিদে বাজারের গোলযোগ করো না।’ (মুসলিম)।
মসজিদ শান্তি, নিরাপত্তা ও প্রশান্তির কেন্দ্র। এখানে অস্ত্র বহন করে কাউকে আঘাত বা কষ্ট দেয়া যাবে না। দুর্গন্ধ সৃষ্টি করা যাবে না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কেউ রসুন বা পেঁয়াজ খেয়ে এলে সে যেন চলে যায়, সে তার ঘরে বসে থাক।’ (বোখারি ও মুসলিম)। মসজিদে বেচাকেনা নিষেধ। ‘মসজিদে কাউকে বেচাকেনা করতে দেখলে তোমরা বল, আল্লাহ তোমার ব্যবসা লাভজনক না করুন।’ (তিরমিজি)। মসজিদ সৌভাগ্যের স্থান। সফর থেকে ফিরলে রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রথমে মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তেন। (বোখারি)। মসজিদসহ সর্বত্র ইবাদত একমাত্র আল্লাহর জন্যই হবে। ‘নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহর জন্য। সেখানে আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকে ডেকো না।’ (সূরা জিন : ১৮)।
মসজিদ থেকে জীবিতরা উপকৃত হবে। তাই সেখানে কবর দেয়া যাবে না। মসজিদে সব ধরনের গোনাহ নিন্দনীয় ও ঘৃণিত। সেখানে গিবত করা, হারাম কিছু দেখা, গানবাজনা শ্রবণ করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। মসজিদের অন্যতম লক্ষ্য মুসলিম ঐক্য ও সম্প্রীতি। এখানে বিরোধ ও অনৈক্য সৃষ্টি করা যাবে না। মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো স্থাপনাকে ইবাদতের জন্য নির্ধারণ বৈধ নয়। মসজিদকে নামাজ, ইবাদত, জিকির, কোরআন ও সুন্নাহর শিক্ষার মাধ্যমে উজ্জীবিত রাখলেই মসজিদের উদ্দেশ্য সাধন হবে।