অনলাইন ডেস্ক : দেশের সবচেয়ে দূষিত এক নদীর নাম ঢাকার ‘বুড়িগঙ্গা’। অতিদূষণের ফলে শুষ্ক মৌসুমে এ নদীতে কোনো মাছের অস্তিত্ব না থাকলেও বৃষ্টি বাড়লে শিং, মাগুরসহ দেশীয় প্রজাতির অল্পসংখ্যক মাছ জেলেদের জালে উঠে আসে।
সম্প্রতি এই নদীতে এক ধরনের অদ্ভুত মাছের আধিক্য দেখা গেছে, যা খাওয়া যায় না, সারা গায়ে কাঁটায় ভরপুর। এতে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন জেলেরা।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বুড়িগঙ্গায় মাছ শিকার করছেন লাল মিয়া নামে এক জেলে। থাকেন কেরানীগঞ্জের কালীগঞ্জে। তিনি বলেন, কোত্থেকে আইল অদ্ভুত এই চগবগে (সাকার ফিশ) মাছ, ভেবে কূলকিনারা করতে পারি না। সারাক্ষণ পানিতে এই মাছ কিলবিল করছে। এই মাছ তো কেউ খায়ও না।
সেদিন দুপুরে বুড়িগঙ্গার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পন্টুনের পেছনের অংশজুড়ে দেখা গেল শত শত সাকার মাছ। দূষিত বুড়িগঙ্গায় যেখানে মাছের দেখা মিলত না, এখন সাকারে সয়লাব।
সাকার ফিশের পরিচয় : সাকার ফিশের আসল নাম সাকার মাউথ ক্যাটফিশ। এর বৈজ্ঞানিক নাম হিপোসটোমাস প্লেকাসটোমাস। আশির দশকে অ্যাকুয়ারিয়ামের শেওলা ও ময়লা পরিষ্কার করতে এই মাছ বিদেশ থেকে আনা হয়। এই মাছ দক্ষিণ আমেরিকায় ব্যাপকভাবে দেখা যায়। তবে কয়েক বছর ধরে তা ভারত, চীন, মিয়ানমার ও বাংলাদেশের জলাশয়ে দেখা যাচ্ছে।
এই মাছের পিঠ বড় ও ধারালো পাখনায় আবৃত। দুই পাশে আছে একই রকমের দুটি পাখনা। এর দাঁতও বেশ ধারালো। সাধারণত জলাশয়ের আগাছা, জলজ পোকামাকড় ও ছোট মাছ এদের প্রধান খাবার। যেসব পানিতে দূষণের কারণে অক্সিজেনের পরিমাণ প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে, সেখানে অন্য মাছ বাঁচতে পারে না, তবে এই মাছ পারে। পানি ছাড়াও মাছটি ২৪ ঘণ্টা দিব্যি বেঁচে থাকতে পারে।
এ সম্পর্কে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) মহাপরিচালক ইয়াহিয়া মাহমুদ বলেন, সাকার ফিশ দেশের বিভিন্ন জেলার নদ–নদীতে পাওয়া যাচ্ছিল, সে খবরটি আমাদের জানা। খুব শিগগির বুড়িগঙ্গা থেকে সাকার ফিশের নমুনা সংগ্রহ করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এত দ্রুত কীভাবে সেখানে এরা বংশবিস্তার করল, সেই বিষয়ে গবেষণা করে দেখা হবে।
এ মাছকে দেশীয় প্রজাতির মাছের জন্য হুমকি উল্লেখ ওই কর্মকর্তা বলেন, যে জলাশয় কিংবা নদীতে সাকার মাছ থাকবে, সেগুলো সেখানকার দেশীয় প্রজাতির মাছের খাবার খেয়ে ফেলবে। অর্থাৎ দেশি প্রজাতির মাছগুলো শেষ পর্যন্ত খাবার কম পাবে, ক্ষতিগ্রস্ত হবে দেশি প্রজাতির মাছ।
মানুষের গায়ে ফুটছে ধারালো পাখনা : খোঁজ নিয়ে জানা গেছে বুড়িগঙ্গার তীরে বসবাসকারী দিনমজুরেরা এখন এই নদীতে গোসল করতেও ভয় পান। তারা জানান, বুড়িগঙ্গায় এত বেশি চগবগে মাছ, গোসল করতেও ভয় লাগে। অনেকের গায়ে মাছের পাখনা ফুটেছিল, সেখানে পচনও ধরেছিল। চগবগে মাছ ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।