বিয়ের প্রলোভনে বিক্রি হচ্ছে রোহিঙ্গা নারীরা!

মাহাবুবুর রহমান,কক্সবাজার
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন দেড় বছরের বেশী সময় পার হতে চলেছে। এরই মধ্যে বিয়ের বয়সও পার হয়ে যাচ্ছে। এ সুযোগে দালালরা বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে মালয়েশিয়া পাচারের ফাঁদ পেতে বসে। এই ফাঁদে ছিল দ্রুত বিয়ের প্রলোভনও। ফাঁদে পা দিয়েই মালয়েশিয়া যাচ্ছিল ৫০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে আটক হওয়ার পর এমন তথ্য দিয়েছেন রোহিঙ্গা নারীরা।
আইশৃঙ্খলাবাহিনী সুত্রে জানাযায়, গত শুক্রবার (৮ ফেব্রুয়ারী) ভোরে বঙ্গোপ সাগরের টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ ও ভোলারচর এলাকা থেকে মালয়েশিয়াগামী ৩০ রোহিঙ্গা নারী-পুরুষকে উদ্ধার করেছে বিজিবি। এসময় দুই দালালকেও আটক করে বিজিবি। একই দিন সন্ধ্যায় উপজেলার বাহারছড়া সাগর উপকুল থেকে আরও ২০ নারী-পুরুষকে উদ্ধার করে পুলিশ।

যাদের মধ্যে বেশীর ভাগই নারী ও শিশু। উদ্ধার হওয়া নারীদের প্রায় ১৩ জনই অবিবাহিত তরুনী। যাদের বিয়ের প্রলোভনে মালয়েশিয়া নিয়ে যাচ্ছিল দালালরা।
উদ্ধার হওয়া টেকনাফের জাইল্যাঘাটা শিবিরের ডি-৫ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ হোসেনের মেয়ে নুর বাহার বেগম বলেন, দ্রুত বিয়ের প্রলোভন দেখায় দালালরা। এরপরই অভাবের সংসারে হাল ধরার কথা বলে। এসব প্রলোভনে পা দিয়েই মালয়েশিয়ার যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেই। কিন্তু যখন প্রশাসনের হাতে পড়ে যায় তখন বুঝতে পেরেছি আসলে আমাদের পাচার করা হচ্ছিল।
টেকনাফ জামতলী শিবিরের ডি-৮ ব্লকের বাসিন্দা রহমত উল্লাহর ছেলে হাসিনা বেগম বলেন, মালয়েশিয়ায় পৌঁছাতে পারলেই টাকা এবং পাত্র (স্বামী) পাওয়া যাচ্ছে। এ কারণেই তারা ছুটছে এখন মালয়েশিয়ার পথে। সেখানে উপস্থিত অন্যান্য রোহিঙ্গা তরুণীরাও একই ধরনের কথা বলেছেন।
এদিকে আবারো রোহিঙ্গাদের সাগর পথে মালয়েশিয়ামুখী হওয়ার কারণ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশিষ্টজনরা। তারা বলছেন, আবারো কি সাগরের শরণার্থীদের লাশের মিছিল শুরু হচ্ছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে রোহিঙ্গা শিবিরের থাকা বিভিন্ন দালালদের আইনের আওতায় আনা ও রোহিঙ্গা মালয়েশিয়া পাচারের বিষয়ে সচেতনা তৈরীর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
কক্সবাজার পিপলস্ ফোরামের মুখপাত্র এইচ এম নজরুল ইসলাম বলেন, সাগর পথে আবারো মালয়েশিয়া যাওয়ার পন্থা বেচে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। এটি খুবই হতবাক হওয়ার মত। যদিও তারা দালালদের প্রলোভনে পড়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এবিষয়ে পদক্ষেপ নেয়া না হলে আবারো ২০১৫ সালের মত সাগরে শরণার্থীদের লাশের মিছিল তৈরী হতে পারে।
সুুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজনের) কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি প্রফেসর এম এ বারী বলেন, ক্যাম্প ছেড়ে রোহিঙ্গাদের পালানো রোহিঙ্গা সংকটকে আরও অধিকতর করবে। যা দেশের জন্য হুমকি হয়ে দাড়াবে। তাই দ্রুত পাচারের বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, সাগরপথে রোহিঙ্গাদের পাচারের আশঙ্কা টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাঝে মাঝে রোহিঙ্গাদের উদ্ধারও করা হচ্ছে।
টেকনাফস্থ-২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্ণেল আছাদুদ-জামান চৌধুরী বলেন, টেকনাফ উপকুলে প্রতিনিয়ত টহল জোরদার করেছে বিজিবি। মাদক চোরাচালান দমনের পাশাপাশি মারবপাচারের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা নজরদারির মাধ্যমে বিভিন্ন সময় দালালদের আটক করা হচ্ছে।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. ইকবাল হোসেন বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গাদের পর থেকে এ উপকুলে পুলিশের টহল বৃদ্ধি করা হয়েছে। তারা দালালদের ফাঁদে পা দিয়ে মালয়েশিয়া যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল বলে জানিয়েছে উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা। সেসব দালালদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
কোস্টগার্ড পূর্ব জোনের স্টাফ অফিসার (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম বলেন, নতুন নতুন কৌশলে রোহিঙ্গাদের মালয়েশিয়া পাচারের চেষ্টা করছে দালালরা। তাই সাগর উপকুলীয় এলাকাগুলোতে কোস্টগার্ড নিয়মিত টহলের পাশাপাশি অভিযান জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, গত বছরের নভেম্বর মাসে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে টেকনাফে থেকে ৪৭ জন রোহিঙ্গা নারী –পুরুষকে উদ্ধার করেছিল কোস্টগার্ড ও বিজিবি। এরপর আবারো মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে ৫০ জন রোহিঙ্গা উদ্ধার করা হল।