বিদায় ২০১৬ : শুভ হোক নতুনের আগমন

এমরান হোসেন বিদ্যুৎ
মহাকালের নিয়মে ২০১৬ খ্রিস্টাব্দের বিদায়ের মধ্য দিয়ে সূচিত হলো আরেকটি নতুন বছরের, যাত্রা হলো ২০১৭ খ্রিস্টাব্দের। একেকটি বছর আসে নতুন স্বপ্ন, নতুন প্রেরণা-উদ্দীপনা নিয়ে। নতুন ইংরেজি বছরটিও এসেছে সেই স্বপ্ন-প্রেরণা নিয়ে। স্বাগত ২০১৭ খ্রিস্টাব্দ। স্বপ্ন আর দিনবদলের অপরিমেয় প্রত্যাশার রক্তিম আলোয় উদ্ভাসিত হোক নববর্ষ। নববষের্ষর ঊষার আলোকে সম্পূর্ণ নতুন শক্তি ও সাহসে শুরু হোক আমাদের পথচলা। নতুন বছরের নতুন দিনে সকলকে জানাই ‘একাত্তর লাইভ ডটকম’-এর পক্ষ থেকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। সম্মানিত সকল পাঠক-পাঠিকা, বিজ্ঞাপনদাতাসহ সংশ্লিষ্ট সকল শুভানুধ্যায়ীর জন্য রইলো একরাশ ফুলেল শুভেচ্ছা।  শুভ নববর্ষ।
বিদায়ী বছরে সুখকর ঘটনায় পুলকিত হওয়ার চেয়ে অনাকাংখিত ঘটনায় হৃদয় ভারাক্রান্ত হয়েছে বেশি। অর্থনৈতিক ভাবে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে। বাংলাদেশকে বিশ্বব্যাংক নিম্নমধ্য আয়ের দেশ ঘোষণা করেছে। সরকার ভিশন ২০২১-এর বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে মধ্য আয়ের দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ঘোষণা আছে ভিশন ২০৪১ এর মাধ্যমে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যাওয়ার। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে পারলে এই লক্ষ্য পূরণ সহজেই সম্ভব হবে। দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমিয়ে আনা, মানবসম্পদ উন্নয়ন সহ নানা ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিষ্ময়কর সাফল্য পেয়েছে। সারাবিশ্বেই বাংলাদেশের অগ্রগতি প্রশংসিত হয়েছে। বিশ্বসভায় বাংলাদেশের মর্যাদাপূর্ণ আসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দারিদ্র্যমুক্তির সাফল্য দেখতে বিশ্বব্যাংক প্রধানও বাংলাদেশ সফর করেছেন। মুগ্ধ হয়েছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলছে আন্তর্জাতিক মানদ- বজায় রেখে। বেশ কয়েকজনের বিচার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ডও কার্যকর করা হয়েছে। এতে জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে যেমন আমাদের মর্যাদা বেড়েছে, তেমনি শহীদ পরিবারগুলো স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়েছে। কিছুটা হলেও মোছন হয়েছে জাতির গ্লানি। সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। কিন্তু কয়েকটি ক্ষেত্রে অবনতির চিত্র লক্ষণীয়। মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রধান লক্ষ্য ছিল সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতিমুক্ত মানবসাম্যপূর্ণ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ। সে লক্ষ্য আমরা এখনো অর্জন করতে পারিনি। দুর্নীতি, দলীয়করণ, আমলাতোষণ, স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অপকা- এখন পূর্বাপেক্ষা বেড়েছে। জাতীয় স্বার্থে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নেই মতৈক্য। সংকুচিত হয়ে গেছে গণতন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রগুলোও। নির্বাচন কমিশনের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানও হাস্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে গেছে। এসব দেশ ও জনগণের জন্যে কোনো ভালো ফল বয়ে আনবে না। বিদায়ী বছরে এসবের চর্চা দেখে দেশবাসী হতাশ হয়েছে।
তবে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচন আশার আলো জ্বেলেছে। দেশস্বার্থে এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। এজন্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাভিত্তিক ঐক্য দরকার। দরকার সবার মধ্যে গণতান্ত্রিক চিন্তা-চেতনার ধারণ, লালন ও পরিপূর্ণ চর্চা। প্রয়োজন পরিপূর্ণ সুশাসন। আমরা উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত পথ চাই। বিগত দিনের ব্যর্থতা, হতাশা আর বঞ্চনার অবসান চাই। চাই না ধ্বংস, হানাহানি সংঘাত আর মৃত্যুর অসুস্থ রাজনীতি। আমরা চাই উজ্জ্বল আলোয় উদ্ভাসিত পথ। আমরা আর পেছনে ফেলে আসা দুঃখ-কষ্ট ও বেদনার কথা মনে করতে চাই না। বিদায়ী বছরের এই ক্ষণে আমরা আশা করতে চাই, অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছরে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে কাজ করবে। আশা করবো, হিংসা ও বিদ্বেষের পথ পরিহার করে গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতা ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে দেশ এগিয়ে যাবে। ২০১৭ খ্রিস্টাব্দে ফিরে আসুক গণতন্ত্রের সুস্থ ধারা, সুসংবাদ বয়ে আনুক সবার জন্য।