গাইবান্ধা প্রতিনিধি
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের কিলিং মিশনে পাঁচ জন খুনি অংশগ্রহণ করেছিল। খুনিরা অন্য এলাকা থেকে খুনের উদ্দেশ্যে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের সাহাবাজ গ্রামে এমপির নিজ বাসভবনে এসে খুন করে পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে পুলিশের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, কিলিং মিশনে পাঁচ জন খুনি অংশগ্রহণ করেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে ধারণা করা হচ্ছে তারা বহিরাগত। খুনিরা ছিল কালো কোট-প্যান্ট পরিহিত এবং সবার বয়স ৩০ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। এদের একজনের মুখে ফ্রেঞ্চকাট দাঁড়ি ছিল। তারা দুইটি মোটরসাইকেলে করে এসে বিকাল ৪টা থেকে এমপি লিটনের বাড়ি এবং আশেপাশের এলাকায় রেকি করে। পরে তারা এমপি লিটনের বাড়িতে প্রবেশ করে। এসময় এমপি লিটন বাড়ির সামনে গাব গাছের নিচে বসে ছেলেদের বল খেলা দেখছিল। তার সাথে ছিল স্ত্রী খুরশিদ জাহান স্মৃতি ও এমপির শ্যালক বেতার। দুটি মোটরসাইকেলে ৫ জন কিলার এলেও বাকি তিনজন মোটরসাইকেলের পাশেই দাঁড়িয়ে থাকে। দু’জন এগিয়ে এসে এমপি লিটনের কাছে জরুরি কথা বলতে চায়। এসময় এমপি তাদের অপেক্ষা করতে বলেন এবং একটু পরে সাক্ষাৎ দিবেন বলে জানায়।
সূত্রটি আরও জানায়, সন্ধ্যা ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে ওই দু’জনার সাথে কথা বলার জন্য এমপি বাইরের বৈঠক খানায় প্রবেশ করলে তার স্ত্রী, শ্যালকও তার সাথে যায়। বৈঠকখানা ঘরে গিয়ে একজন কিলার এমপি’র স্ত্রীকে বলে যে, স্যারের সাথে আমরা একান্তভাবে কথা বলতে চাই। এ কথা বলার পর স্ত্রী ও শ্যালক পাশের ঘরে চলে যায়। এর কিছুক্ষণ পরেই তারা গুলির শব্দ শুনতে পেয়ে ছুটে আসেন।
এসময় এমপি লিটন চিৎকার করে বৈঠকখানা ঘরের পশ্চিম দিকের দরজা দিয়ে বাড়ির ভেতরে উঠানে ছুটে যায়। পরে বাড়ির দু’জন গৃহপরিচারিকা ও স্ত্রী তাকে জড়িয়ে ধরলে সে রক্তাক্ত অবস্থায় লুটিয়ে পড়ে। পরে এমপির শ্যালক বেতার ও বাড়ির কেয়ারটেকার ইসমাইল এমপির গাড়ি নিয়ে পলায়নরত যুবকদের ধাওয়া করলে তারা গুলি ছুড়তে ছুড়তে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। বাড়ি থেকে বেরিয়েই কিলারদের একটি মোটরসাইকেল যায় পূর্ব দিকের রাস্তা দিয়ে বামনডাঙ্গার দিকে এবং অপরটি পশ্চিম দিকে নলডাঙ্গার রাস্তায় চলে যায়।
পরে এমপির শ্যালক ও বাড়ির কেয়ারটেকার খুনিদের ধরতে না পেরে বাড়িতে ফেরত এসে ওই গাড়িতেই রক্তাত্ত এমপিকে উঠিয়ে রংপুর মেডিকেল হাসপাতালের দিকে রওনা হয়।
এদিকে পুলিশি তদন্তে এমপি লিটন হত্যার কারণ সম্পর্কে ৫টি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এ হত্যার কারণ নির্ণয়ে ৫টি সম্ভাব্য বিষয় হলো- জেএমবি ও জঙ্গিদের পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড, জামায়াত-শিবির চক্রের হামলা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, পারিবারিক শত্রুতা এবং সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচন।
পুলিশ আশাবাদি অতি শীঘ্রই তারা হত্যার মূল উদ্দেশ্য বের করে ফেলতে পারবেন। এই মোটিভ জানা সম্ভব হলেই প্রকৃত হত্যাকারীদের বের করার সহজ হবে।