বাজেটে বড় সংশোধন করতে হবে: সিপিডি

নিজস্ব প্রতিবেদক
চলতি অর্থবছরে বাজেটে বড় ধরনের সংশোধন করতে হবে বলে প্রক্ষেপণ করেছে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। কারণ হিসেবে সংস্থাটি বলেছে, লক্ষ্য অনুযায়ী রাজস্ব আয় হবে না। আবার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী(এডিপি) বাস্তবায়নও সম্ভব হবে না। ফলে বাজেট সংশোধন ছাড়া উপায় নেই।
শনিবার দেশের অর্থনীতির এক পর্যালোচনায় সিপিডি এ প্রক্ষেপণ করেছে। এ উপলক্ষে রাজধানীর ব্র্যাক ইন সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংস্থাটি। সিপিডি তাদের পর্যালোচনায় সামগ্রিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য সঞ্চয়পত্রের সুদ হার কমানো, বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা ও জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি বিনিয়োগ টেকসই করতে ব্যাংকিং খাতে সংস্কার করা, রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের গুণগত মান নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থায় সংস্কার করার পরামর্শ দিয়েছে। তবে এগুলো করতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত লাগবে মনে করে সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরে ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগে ষ্ফুলিঙ্গ দেখা যাচ্ছে। এখন তা থেকে আগুন জ্বলবে কি না, সেটাই দেখার বিষয়। এ জন্য তিনি সঞ্চয়পত্র সুদের হার কমানো, মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা এবং জ্বালানি তেলের দাম কমানোর পরামর্শ দেন। তিনি আরও বলেন, বাজেটে এমন কোনো অসম্ভব প্রাক্কলন করা উচিত নয়, যা অর্জিত হবে না। এ ধরনের প্রাক্কলন অর্জিত না হওয়ার ফলে অর্থনীতির কাঠামোগত দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতি ২০১৬-১৭ : প্রথম অন্তর্বর্তীকালীন পর্যালোচনা’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ তুলে ধরা হয়। তাতে বলা হয়েছে, চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে লক্ষ্যমাত্রার ১৮ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে। যা ভালো। তরে এনবিআর বহির্ভূত রাজস্ব আদায় পরিস্থিতি নেতিবাচক। ফলে সামগ্রিক রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। রাজস্ব খাতে সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে ধীর গতি দেখা যাচ্ছে। ভ্যাট আইন কার্যক্রর হয়নি এবং মাঠ পর্যায়ে তা কার্যকরের প্রস্তুতিও নেই। ব্যবসায়িক হিসাব পদ্ধতির আমূল পরিবর্তন ছাড়া ভ্যাট আইন কার্যকর করা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে চলতি অর্থবছরে ৪০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব ঘাটতি হতে পারে। সরকারি ব্যয়েও ধীরগতি রয়েছে। বাজেটে সরকারি ব্যয়ে ৫১ দশমিক ৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও প্রথম প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ দশমিক ৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় এডিপি বাস্তবায়ন ভালো হলেও ঐতিহাসিকভাবে ভালো হয়নি। অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপির ২৭ দশমিক ৬ শতাংশ বাস্তবায়ন হয়েছে।
সঞ্চয়পত্রের সুদ হার প্রসঙ্গে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাজেটের পুরো লক্ষের সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়ে গেছে। এতে সুদ পরিশোধে চাপ বাড়বে। এজন্য তিনি আগামী বাজেটে সুদ হার কমানোর পাশাপাশি সঞ্চয়পত্রের বিনিয়োগ পর্যবেক্ষণের সুপারিশ করেন। তিনি বলেন, এমন পদ্ধতি বের করা দরকার যাতে দেখা যাবে একই ব্যক্তি একাধিক বিনিয়োগের মাধ্যমে সীমার বেশি বিনিয়োগ করছেন কি না। তিনি বিশ্বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার সুফল জনগণের সাথে ভাগ করে নেওয়ার সুপারিশ করেন। এতে তৈরী পোশাক শিল্পের শ্রমিক অসন্তোষ কমতে পারে বলে মনে করেন তিনি।
মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সংস্থাটির রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান। এ ছাড়া পরিচালক আনিসাতুল ফাতেমা ইউসুফ, অতিরিক্ত পরিচালক ফাহমিদা খাতুন উপস্থিত ছিলেন।