ক্রীড়া ডেস্ক:
ক্রাইস্টচার্চে ‘ঠান্ডা’ কি বাংলাদেশের আরেক প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবে? বলা হচ্ছে, এটা একটা নতুন চ্যালেঞ্জ। গত দেড়-দুই বছরে দেশের মাটিতে ওড়ানো বিজয়ের পতাকাকে বিদেশের মাটিতেও সাফল্যের হাওয়ায় ভাসানোর চ্যালেঞ্জ। ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডে দিয়ে যার শুরু কাল। বাংলাদেশ সময় আজ ভোর চারটায় শুরু যে ম্যাচ।
তিন ওয়ানডে, তিন টি-টোয়েন্টি আর দুই টেস্টের লম্বা এক সিরিজ। এর জন্য বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতিও কম লম্বা হয়নি। ১৮ ডিসেম্বর নিউজিল্যান্ডে আসার আগে সিডনিতে নয় দিনের ক্যাম্প। বিপিএলের সৌজন্যে এর আগেও খেলার মধ্যেই ছিলেন ক্রিকেটাররা। নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হওয়ার আগে প্রস্তুতিটাকে যথেষ্ট ভালো মনে করছেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, ‘যতটুকু হয়েছে প্রস্তুতি, বেশ ভালো। আমরা এখন ম্যাচ খেলতে তৈরি। এর চেয়ে ভালো কিছু সম্ভব ছিল না। বিপিএল শেষেই আমরা অস্ট্রেলিয়ায় এসেছি। সময়, ভ্রমণ—সব মিলিয়ে এর বেশি কিছু করা যেত না।’
প্রস্তুতি ভালো হলেও সবকিছু তো আর নিজেদের হাতে থাকে না। সিডনির ক্যাম্প আর ওয়াঙ্গারেইর প্রস্তুতি ম্যাচ মিলিয়ে এতটা সময় এই অঞ্চলে কাটানোর পরও আসল জায়গায় তা কতটা কাজে দেবে, সে শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। স্থানীয় সময় রাত সাড়ে নয়টায় এই প্রতিবেদন লেখার সময় ক্রাইস্টচার্চের তাপমাত্রা ১৪-১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনেও সেটা সর্বোচ্চ ১৭ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠেছে। সিডনি এবং ওয়াঙ্গারেইর তাপমাত্রা আরও বেশি ছিল বলে জানালেন মাশরাফি, ‘ওয়াঙ্গারেইতে এত ঠান্ডা ছিল না। এখানে আমরা রীতিমতো কাঁপছি। যেসব জায়গায় খেলা দিয়েছে সব জায়গায় ঠান্ডা বেশি।’
মাশরাফির কথা ঠিক হলে এত চেষ্টার পরও সিরিজে নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনই সবচেয়ে বেশি ভোগাবে বাংলাদেশ দলকে। প্রথম ওয়ানডের ভেন্যু হ্যাগলি ওভালের উইকেটও মরিচিকার মতো মনে হচ্ছে মাশরাফির কাছে, ‘কাল দেখলাম উইকেট একটু নরম, দুই আঙুলের মতো ঘাসও ছিল। আজ দেখি ঘাস সব শুয়ে গেছে। উইকেটের রংও সবুজ নেই। ম্যাচের দিন নাকি আরও সাদা হবে।’
আশার কথা, উইকেট নিয়ে ব্যাটসম্যানরা চিন্তিত নন। নৈশভোজ করতে বাইরের এক রেস্টুরেন্টে যাওয়ার আগে মুশফিকুর রহিম বলে গেলেন, ‘এই কন্ডিশনে তো এ রকম উইকেটেই ব্যাটিং করতে হবে। আমার মনে হয় ভালোই হবে।’ ওপেনার ইমরুল কায়েসেরও একই মত, ‘এ রকম উইকেটই ভালো আমাদের জন্য। বেশি সবুজ হলে তো ওদের চেয়ে আমাদেরই বেশি অসুবিধা।’
এই উইকেটে বড় ইনিংস খেলার ব্যাপারে আশাবাদী কি না, জানতে চাইলে তামিম ইকবালের উত্তর, ‘রান হবে কি না জানি না, চেষ্টা তো হবেই।’
তাঁদের সঙ্গে একমত কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে, ‘নিউজিল্যান্ডের উইকেট এ রকমই। বেশ ঘাস আছে, তবে তা বিস্ময়কর কিছু নয়। ঘাস প্রতিদিন ছোট হচ্ছে। রং বদলাচ্ছে। গতকাল অনেক সবুজ ছিল উইকেট, আজকে অনেকটাই বাদামি। কাল বেলা ১১টায় আরও বাদামি হবে। নতুন বলের কিছু ওভার বাদ দিলে ব্যাটিংয়ের জন্য ভালোই হবে উইকেট।’
প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশ দলের কম্বিনেশন অনেকটাই নির্ভর করছে কাল সকালের উইকেটের ওপর। যদি মনে হয়, এটা ২৮০-৩০০ রানের উইকেট তাহলে হয়তো সর্বোচ্চ তিনজন পেসার খেলানো হবে। নয়তো দেখা যেতে পারে চার পেসারের একাদশও। অবশ্য চোট থেকে ফেরা মোস্তাফিজুর রহমানের খেলা না–খেলার ওপরও নির্ভর করছে দলের চেহারা। বোলিংয়ে সমস্যা না থাকলেও থ্রো করতে সমস্যা হচ্ছে মোস্তাফিজের। তাঁকে খেলানোর সিদ্ধান্ত সে কারণেই আজ পর্যন্ত চূড়ান্ত করতে পারেনি টিম ম্যানেজমেন্ট।
বাংলাদেশ-নিউজিল্যান্ডের সাম্প্রতিক দ্বিপক্ষীয় সিরিজগুলোতে বাংলাদেশের সাফল্য বেশি হলেও সেগুলো ঘরের মাঠে। দেশের বাইরেও ভালো দল হয়ে ওঠার চ্যালেঞ্জটা তাদের সঙ্গে খেলে শুরু হচ্ছে বলে আত্মবিশ্বাস একটু হলেও বেশি থাকার কথা। তবে মাশরাফি ব্যাপারটা দেখছেন অন্যভাবে, ‘আমাদের এখন দেশের বাইরে ভালো খেলতে হবে। তবে সবচেয়ে কঠিনটাই পড়েছে সবার আগে। নিউজিল্যান্ডে সফর করা সব দলের জন্যই কঠিন।’ এর মধ্যে আশার জায়গা একটাই। ‘আমাদের মানসিকতা আগের মতো নেই। আগে যেমন এসেই একটা নেতিবাচক চিন্তা থাকত, এখন সেসব নেই। খারাপ দিন এখনো আসতে পারে, কিন্তু মানসিকভাবে আমরা ইতিবাচক’—বলেছেন মাশরাফি।
নিউজিল্যান্ডের শক্তি নতুন বলে। চ্যালেঞ্জটা তাই বেশি নিতে হবে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। তাঁরা ভালো শুরু এনে দিতে পারলে ভালো হতে পারে সবই। প্রথম ওয়ানডে, এমনকি সিরিজটাও। মাশরাফি এগোতে চান সে ফর্মুলা ধরেই, ‘প্রথম ম্যাচ জেতা মানে অনেকটাই এগিয়ে যাওয়া। গত এক-দেড় বছরে দেশের মাটিতে আমরা অনেক ভালো খেলেছি। তবে এবার চ্যালেঞ্জটা ভিন্ন। এই সফর দিয়েই শুরু হচ্ছে দেশের বাইরে ভালো খেলার চ্যালেঞ্জ।’