কে. এম. রুবেল, ফরিদপুর।
ফরিদপুরের নগরকান্দায় স্ত্রীর মর্যাদার দাবীতে গত ৯দিন ধরে প্রেমিক স্বামীর বাড়িতে অবস্থান করছে এক তরুনী। এদিকে ওই তরুনী ওই বাড়িতে যাওয়ার পর ঘওে তালা লাগিয়ে উধাও প্রেমিক স্বামী, শশুড় ও শাশুড়ি।
ওই তরুনী নগরকান্দা পৌর এলাকার বিনয় চন্দ্র মন্ডলের মেয়ে চম্পা রানী মন্ডল। আর একই উপজেলার চরযোশরদী ইউনিয়নের মেঘারকান্দি গ্রামের সুকুমার চন্দ্র বিশ্বাসের ছেলে সুদর্শন চন্দ্র বিশ্বাস।
চম্পা জানায়, স্কুল জীবন থেকে তারা একে অপরকে পছন্দ করেন। ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষার পরে চম্পার পরিবার একাধীক বার বিয়ে ঠিক করলেও সুদর্শন সেই বিয়ে ভেঙে দিয়েছেন। এরপরে ২০১৪ সালের ৯ মার্চ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিবাহ করেন তারা। এরপরে সুদর্শন ও তিনি ফরিদপুর ও ঢাকায় স্বামী স্ত্রীর মতই বসবাস করতেন। চম্পা বর্তমানে ঢাকার একটি বেসরকারী স্কুলে শিক্ষিকা হিসাবে কর্মরত আছেন।
চম্পা জানায়, কিছুদিন ধরে সুদর্শন তার সাথে যোগাযোগ কমিয়ে দেয়। এরই মধ্যে বন্ধুদের মাধ্যমে জানতে পারে সুদর্শন অন্যত্র বিয়ে করছে। সেই খবর পেয়ে ঢাকা থেকে বাড়ি এসে সত্যতা পেয়ে স্ত্রীর মর্যাদা চেয়ে শশুড় বাড়িতে অবস্থান করছেন চম্পা।
এদিকে চম্পার অবস্থান এর পর থেকেই পলাতক সরকারী চাকরীজীবি শশুড় শাশুড়ি সুকুমার বিশ্বাস ও রীনা বিশ্বাস। আর সুদর্শন পেশায় সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার, ঢাকাতে একটি বেসরকারী ফার্মে চাকরী করেন। ঘটনার পর থেকে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
চম্পা বলেন, ‘আমি খুবই দরিদ্র পরিবারের মেয়ে, অর্থের অভাবে আমাদের পরিবারের কেউ পড়াশুনা করতে পারে নি। আমি অনেক কষ্টে অনার্স মাস্টার্স করছি। একটি সরকারী চাকরীর অনেক চেষ্টা করেছি, হয়নি , ভাইবাতে গিয়ে বাদ হয়ে যায়। আমি হিন্দু মেয়ে। আমাদের ধর্ম মতে একবারই বিয়ে হয়। আমার বিয়ে হয়ে গেছে। এখন আমি আমার শশুড় শাশুড়ি স্বামী নিয়ে সংসার করতে চাই। নইলে আমার মৃত্যু অবধারিত।’
সরজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শশুড় বাড়িতে তালাবদ্ধ ঘরের সামনে অবস্থান নিয়ে বসে আছে চম্পা। আর রাতের বেলা চাচা শশুড় রুহি দাস বিশ্বাস তার বাড়িতে থাকতে দিচ্ছেন।
এই ব্যাপারে চম্পার নানী আশালতা মন্ডল জানান, এই ছেলে দুইবার আমার নাতির বিয়ে ভাঙছে, ফরিদপুরে নিয়া বিয়া করছে আজ ৩ বছর। এখন কয় বিয়ে করবে না, আপনারাই বলেন একটা মেয়ের ইজ্জত, জীবন এর কি কোন দামই নেই।
চরযোশরদী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আরিফুর রহমান তালুকদার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মেয়েটিকে নোটারি পাবলিক এর মাধ্যমে বিয়ে করছে এবং ঘর সংসারও করছে যার সত্যতা পেয়েছি। আমরা চেয়েছি বিষয়টি মিমাংসা করতে। কিন্তু পরিবার কিসুতেই এই মেয়ে মেনে নিবে না। তারপরও আমার স্থানীয় ভাবে চেষ্টা করছি।
এই বিষয়ে অভিযুক্ত সুদর্শন চন্দ্র বিশ্বাস ও তার পরিবারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাদের সব কয়টি মোবাইল বন্ধ পাওয়া গেছে।
বিষয়টি নিয়ে ফরিদপুরের নারী নেত্রী ও ব্লাস্টের সমন্বয়ক এ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী বলেন, নোটারি বিয়ে না হলেও বিয়ের ঘোষনা। ওইখানে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে কোথায় কিভাবে বিয়ে হয়েছে। সে ক্ষেত্রে মেয়েটি ছেলেটির বৈধ স্ত্রী। আইনগতভাবে ছেলেটি মেয়েটিকে স্ত্রীর অধিকার ও ভরন পোষন দিতে বাধ্য। তিনি জানান, এই বিষয়ে মেয়েটির কোন সহায়তার প্রয়োজন হলে ব্লাস্ট তার পাশে থাকবে।