নিজস্ব প্রতিবেদক:
সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এখন একটি পরিশীলিত বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। বিজিবিতে এখন শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। সীমান্ত ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এই বাহিনীটি তাদের ঐতিহ্য সমুন্নত রেখে সামনের দিকে এগিয়ে যাবে, এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার সকালে বিজিবি দিবস ২০১৬’য় পিলখানায় কুচকাওয়াজ পরিদর্শনকালে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেন উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশি নিহতের ঘটনা আমাদের কাছে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আপনাদের প্রচেষ্টায় বিএসএফের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কারণে সীমান্তে হত্যার ঘটনা অনেকটা কমে এসেছে। ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে ৪৭৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় নতুন ৪টি ব্যাটালিয়ান ও ৫৫টি বিওপি নির্মাণের মাধ্যমে ৩৭০ কিলোমিটার সীমানা ইতোমধ্যে নজরদারিতে আনা হয়েছে। বিজিবিতে নারী নিয়োগের মাধ্যমে আমরা নারীর ক্ষমতায়নে এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। একদিন বিজিবি হবে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় সংঘঠিত বিডিয়ার বিদ্রোহ আমাদের জাতীয় জীবনে একটি কালো অধ্যায়। আওয়ামী লীগ ২০০৮ এর নির্বাচনে জয়ী হয়ে ২০০৯ এর জানুয়ারিতে সরকার গঠন করে। নতুন সরকার গঠনের আড়াই মাসের মাথায় এই বিদ্রোহের ঘটনা ঘটেছিলো। এই বিদ্রোহের ন্যাক্কারজনক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি আমাদেরকে তখন মোকাবেলা করতে হয়েছে। বিডিআর বিদ্রোহের চক্রান্তকারীদের সকল অপতৎপরতা আমরা ধৈর্য্য ও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবেলা করেছিলাম। এ বাহিনীতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আমরা যে সব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলাম তা আন্তর্জাতিকভাবে আজ প্রশংসিত।
জাতীয় জীবনে বিজিবি সদস্যদের বিশ্বস্ততা পরীক্ষিত মন্তব্য করে সীমান্ত ও জানমাল রক্ষায় বিজিবির ভূমিকার প্রশংসাও করেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা ঠেকাতে বিজিবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ২০১৫ তারিখে সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদ প্রথম বছর পূর্তি উপলক্ষে বিএনপি ও জামায়াত-শিবিরের জ্বালাও-পোড়াও পেট্রলবোমা সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্য সৃষ্টির অপতৎপরতা প্রতিহত করতে আপনারা যে দক্ষতা দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসণীয়। সীমান্তে আপনাদের কঠোর অবস্থানের ফলে চোরাচালন, মাদকপাচার, নারী ও শিশু পাচার এবং সীমান্ত অপরাধ বহুলাংশে হ্রাস পেয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গণহত্যা শুরু করে। সেই মুহূর্তে জাতির পিতা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন। এই নির্দেশনামা ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তখনকার ইপিআর (বিজিবি) এক বেতার কর্মীর কাছে পূর্বেই পৌঁছে দেয়া হয়েছিলো। নির্দেশ ছিলো কোন সময় তারা এটা প্রচার করবে সঠিক সময়ে তারা এই জাতির পিতা নির্দেশনা অর্থাৎ স্বাধীনতার ঘোষণার বাণী তারা প্রচার করে। বঙ্গবন্ধুর সেই নির্দেশনা ওয়ারলেসের মাধ্যমে সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এই বাহিনীর অনেক সদস্য মহান মুক্তিযুদ্ধে সংক্রিয় অংশগ্রহণ করেছে। দুই বীরশ্রেষ্ঠ শহীদসহ, ৮ জন বীর উত্তম, ৩২ জন বীর বিক্রম এবং ৭৭ জন বীর প্রতীক মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে মহিমান্বিত করেছেন। এই বাহিনীর ৮১৭ জন সদস্য শাহাদাৎ বরণ করেন। ১২ হাজার সদস্য মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছিলেন।
বিজিবি সদস্যেদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনাদের সকলের সহযোগিতায় জাতি সেই সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলো বলেই আজ বাংলাদেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। বিজিবি সদস্য হিসেবে আপনাদের বিশ্বস্ততা পরীক্ষিত। সবার আন্তরিক প্রচেষ্টা বিজিবি আজকে একটি গতিশীল ও আধুনিক বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। কঠোর পরিশ্রমে এই বাহিনীর সুনাম ও মযাদা পূর্ণ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আপনাদের উপর দেশের সীমান্ত রক্ষার মহান দায়িত্ব রয়েছে। সীমান্তরক্ষাসহ অন্যান্য দায়িত্ব, যেমন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক বাহিনীকে সহায়তা, দুর্ঘটনা, প্রকৃতিক দুর্যোগ ও জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলাসহ দেশ গঠনে আপনাদের ভূমিকা ও পেশাদারিত্ব আজ সব মহলে প্রশংসিত। বিগত বছরগুলোতে সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ জনসাধারণের জানমাল রক্ষায় আপনাদের ভূমিকা ছিলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এ সময় মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ বিজিবি সদস্যদের আত্মত্যাগ গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে আধুনিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। পরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আয়োজিত প্যারেডের সালাম গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বিজিবির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। এরপর অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি আনুষ্ঠানিক কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ২০১৬ সালে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখায়, চারটি ক্যাটাগরিতে ৫৭ জন বিজিবি সদস্যের হাতে পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী।