সম্পাদকীয়
আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন। ভোটের মাঠে উত্তেজনা ক্রমেই বাড়ছে। বাড়ছে নানামুখী তৎপরতা। ভোটাররাও ভাবছেন। ভাবছেন প্রার্থীরা। সম্ভবত ভাবনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন তরুণ ভোটাররা। গত দশ বছরে দেশের ২ কোটি ২৫ লাখ তরুণ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য প্রস্তুত হয়েছেন। এবার মোট ভোটারদের প্রায় ২৫ শতাংশই তরুণ। আর সে কারণেই ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে তরুণদের ভূমিকাই নির্বাচনী ফলাফলে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করছেন বিজ্ঞজনরা। তবে গবেষণা ও কমিউনিকেশন স্ট্র্যাটেজি ডেভেলপমেন্টবিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘কলরেডি’ তরুণদের ওপর জরিপ চালিয়ে বলেছে, দেশের ৮০ শতাংশ তরুণ ভোটার রাজনীতি পছন্দ করেন না।
কিন্তু কেন? এ প্রশ্নের জবাবে বলতে হয়, রাজনীতিকদের ওপর সাধারণের আস্থা অনেকটা কমে গেছে। অথবা বলা যায়, রাজনীতিকরা সাধারণ মানুষের আস্থা ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছেন। এ ব্যর্থতাই রাজনীতিকদের সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। রাজনীতি হচ্ছে আত্মত্যাগ, দেশপ্রেম, মানুষ ও রাষ্ট্র-উন্নয়ন এবং কল্যাণের। বর্তমান সময়ের রাজনীতিতে এর ঘাটতি প্রচুর। এ ঘাটতি পূরণ করা গেলে রাজনীতিতে তরুণদের উৎসাহ ফিরিয়ে আনা সম্ভব। আর এ কাজের জন্য আমাদের যেতে হবে অতীতের কাছে, অতীতের ঐতিহ্যময় রাজনৈতিক ঐশর্যের দিকে।
এবারের নির্বাচনে তরুণরা কর্মসংস্থানের বিষয়টিকে বিবেচনায় নেবে এবং নেওয়াটাই স্বাভাবিক। তবে আশার কথা হচ্ছে, গত পাঁচ বছরে দেশে এক কোটি তরুণের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। শিল্পায়ন ও শ্রমবাজার সম্প্রসারণের কারণে প্রতি বছর দেশে ২১ লাখ তরুণের কর্মসংস্থান সম্ভব হয়েছে। পাশাপাশি উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এখন দেশে ১৪০০ প্রকল্পের বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। এর মধ্যে অধিকাংশই মেগা প্রকল্প। এ ছাড়া ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কাজও প্রায় শেষপর্যায়ে। দেশের ১২টি স্থানে হাইটেক পার্ক স্থাপন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ইতোমধ্যে আইটির যে উন্নয়ন হয়েছে, তাতে ২০২১ সালের মধ্যে এই সেক্টরে ২০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন আইটি বিশ্লেষকরা।
সম্প্রতি বিবিএসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট কর্মোপযোগী মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি ৯১ লাখ। এর মধ্যে কর্মে নিয়োজিত ছয় কোটি আট লাখ। বাকি ৪ কোটি ৮২ লাখ ৮০ হাজার মানুষ কর্মক্ষম হলেও শ্রমশক্তির বাইরে। তাদের মধ্যে তরুণের সংখ্যাও কম নয়। আমরা মনে করি, এ মুহূর্তে তরুণদের ভাবনায় শুধু একটি মানসাঙ্কই ঘুরপাক খাচ্ছে। কে তাদের কর্মসংস্থানের নিশ্চয়তা দিতে সক্ষম? নিশ্চয়তা যেদিকে থাকবে বলে তারা মনে করবে, সেদিকেই ভোটের পাল্লা ভারী হবে।