একাত্তর লাইভ ডেস্ক:
নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (এনএসইউ) ১১ শিক্ষার্থী তিন মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন ছাত্রীও রয়েছেন। সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থী নেতৃত্ব দেয়। জঙ্গি হামলাকারী ওইসব শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। ফলে নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়টির এসব শিক্ষার্থী নিখোঁজ হওয়ায় দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। শুরু হয়েছে তোলপাড়। প্রশ্ন উঠেছে তারা কী অভিমান করে আত্মগোপনে রয়েছেন, নাকি কোনো জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছেন।
জানা গেছে- এনএসইউ কর্তৃপক্ষ গত ৫ ডিসেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে ১১ শিক্ষার্থীর নিখোঁজের তালিকা পাঠিয়েছে। তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তারা হলেন- তাহমিদ আল মীম- পিতা: এরশাদ আলী (খুলনা), কাজী বন্ধন আরজু- পিতা: কাজী জাকির হোসেন (মিরপুর, ঢাকা), তাওহিদুল ইসলাম তুহিন- পিতা: মো. রফিকুল ইসলাম (মোহাম্মদপুর, ঢাকা), সিদরাতুল মুনতাহা-পিতা: মোশারেফ হোসেন (শান্তিনগর, ঢাকা), মোন্তাসির নাসিজ-পিতা: মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (আগ্রাবাদ, চট্টগ্রাম), শুভ দেবনাথ-পিতা: সুনিল দেবনাথ (কুড়িল, ঢাকা), সামিউল ইসলাম খান- পিতা: মো. সাইফুল ইসলাম খান (তেজগাঁও, ঢাকা), তারিফুল হক- পিতা: আব্দুর রহিম (বাড্ডা, ঢাকা), তুষার দাশ শুভ-পিতা: কানাই লাল দাস (নরসিংদী), আতিকুর রহমান অপু-পিতা: মো. জাকির হোসেন রিপন (পূর্ব রাজাবাজার, ঢাকা) এবং সানজিদা তাসনিম নাদিয়া-পিতা: নজরুল ইসলাম (তেজগাঁও, ঢাকা)।
এছাড়া গত ১ ডিসেম্বর রাজধানীর বনানী থেকে নিখোঁজ হন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জাইন হোসেন ও সাফায়াত হোসেন। এ দুজনের বিষয়ে এনএসইউ থেকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে তথ্য জানানো হয়েছে আরো আগেই। নতুন তালিকাভুক্ত ১১ জনের মধ্যে ৭ জনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। এদের মধ্যে শুভ দেবনাথ ও তাহমিদ আল মীমের একটি করে মোবাইল বন্ধ ও অপরটি খোলা পাওয়া যায়। তবে কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এনএসইউ রেজিস্ট্রার মো. শাহজাহান বলেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ১৫ দিন ক্লাসে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি মন্ত্রণালয়ে জানিয়েছি। তালিকা পাঠানোর আগে অনুপস্থিত শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডিসেম্বরে বনানী থেকে নিখোঁজ সাফায়াত হোসেন ও জাইন হোসেন নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। এদের মধ্যে গত জুলাই মাসে সাফায়াত এবং চলতি মাসে জাইনের তথ্য আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সাফায়াতের ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নিখোঁজের বিষয়টি জানানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, গত ৪ বছরে একাধিক হত্যা ও নাশকতামূলক ঘটনার সঙ্গে নর্থ সাউথের একাধিক ছাত্র ও শিক্ষক জড়িত থাকার অভিযোগ উঠে। কেবল দেশের মাটিতেই নয়, যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনার অভিযোগে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র কাজী মোহাম্মদ রেজওয়ানুল আহসান নাফিসের গ্রেফতারের ঘটনায় তোলপাড় শুরু হয় দেশ-বিদেশে। গত ১ জুলাই গুলশান ও ঈদের দিন শোলাকিয়ায় জঙ্গি হামলায় জড়িত ১১ জনই নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গুলশানের হামলার নাটের গুরু হাসনাত করিমও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। নিষিদ্ধ ঘোষিত হিজবুত তাহরীরের কার্যক্রম পরিচালনার অভিযোগে হাসনাত করিমসহ পাঁচজনকে চাকরিচ্যুত করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২০১৩ সালে স্থপতি ও ব্লগার আহমেদ রাজীব হায়দার শোভন হত্যার অভিযোগে গ্রেফতার সাতজনই ছিল নর্থ সাউথের শিক্ষার্থী।
অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক এবং ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ (বিবিএ) জঙ্গি আস্তানা। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) গত বছর সরেজমিন পরিদর্শনকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারে জঙ্গিবাদী বইসহ এনএসইউ কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের প্রমাণ পেয়েছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের গোপন প্রতিবেদনের বরাদ দিয়ে শিক্ষামন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়।
তাতে বলা হয়, নর্থ-সাউথসহ রাজধানীর ২১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জঙ্গি সম্পৃক্তাসহ নানা উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডে উদ্বুদ্ধ করছে। এর প্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গত ২৮ সেপ্টেম্বর জঙ্গি প্রতিরোধ, একাডেমিক কোয়ালিটি বাড়ানো, আর্থিক স্বচ্ছতা নিশ্চিতসহ ১২ দশা নির্দেশনা দিয়েছে এনএসইউ কর্তৃপক্ষকে। এপপর উল্লিখিত শিক্ষার্থীরা নিখোঁজ হওয়ায় তোলপাড় শুরু হয়েছে।
১৯৯২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে হিযবুত তাহরীরের বীজ ঢুকিয়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠাতা ভিসি ছিলেন বিএনপি মতাদর্শী অধ্যাপক সৈয়দ আবদুল আহাদ। উদ্যোক্তা হিসেবে আরও ছিলেন শায়েস্তা আহমদ,ব্যবসায়ী নুরুল এইচ খান, মাহবুব হোসেন ও জামায়াতের নীতিনির্ধারক সাবেক সচিব শাহ আবদুল হান্নান।