মাহাবুবুর রহমান,কক্সবাজার
টেকনাফে “চালের দর” দিন দিন পাগলা ঘোড়ার মত ছুটছে। সীমান্তের চালের বাজার অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ছে। চাল আস্তে আস্তে সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। অল্প সময়ে রেকর্ড পরিমাণ চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় জনসাধারণের মাঝে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এখানকার ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে সুযোগ বুঝে চালের দাম আরো বাড়িয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে চাল ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম সংকটের কথা অস্বীকার করে দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, আড়তদার ও মিলারদের কারণেই মূলত চালের দাম অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে। লোকজনের সাথে কথা বলে জানাযায়, গেল অক্টোবর মাস থেকে সীমান্তে চালের বাজারে রীতিমত আগুন ধরেছে। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সাথে পাল্লা দিয়ে চালের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছে। ৩/৪ মাসের ব্যবধানে বস্তা প্রতি চালের দাম ৫০০-৬০০টাকা বেড়েছে। এদিকে টেকনাফের বিভিন্ন বাজারে চালের মূল্য ভিন্ন ভিন্ন দেখা গেছে। দামের দিক দিয়ে অনেক তারতম্যও চোখে পড়েছে। হ্নীলার চেয়ে টেকনাফের ব্যবসায়ীরা লোকজনের কাছ থেকে বস্তাপ্রতি ৫০টাকা করে বেশী নিয়ে নিচ্ছে। ভুক্তভোগীরা জানায়, গত কয়েক বছরের মধ্যে চালের দাম এত বেশী বৃদ্ধি পায়নি। এবারকার চালের দাম বৃদ্ধিতে অনেক কিছুই কাজ করেছে বলে তারা মনে করছেন। সরকারের গৃহীত ১০টাকার চালের কার্ড বিতরণ দাম বৃদ্ধিতে কিছুটা প্রভাব ফেলেছে। সরকার কর্তৃক ১০টাকার চাল বিক্রি প্রকল্পের জন্য ধান সংগ্রহ করার কারণে নাকি আশংকাজনক হারে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অনেকে মনে করছেন। বিজ্ঞজনেরা মনে করছেন, জরুরী ভিত্তিতে লাগামহীন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ না করলে টেকনাফে এক ধরণের দুর্যোগ দেখা দিবে।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বর্তমানে মিনিকেট ২২০০টাকা, আটাশ বেতি ২১৫০টাকা, উনত্রিশ বেতি ১৯৫০টাকা, মোটা গাজী ১৭৫০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নভেম্বর মাসে মিনিকেট ২০০০টাকা, আটাশ বেতি ১৯০০টাকা, উনত্রিশ বেতি ১৮০০টাকা, মোটা গাজী ১৬০০টাকায় বিক্রি হয়েছিল। এছাড়া অক্টোবর মাসে মিনিকেট ১৮০০টাকা, আটাশ বেতি ১৭০০টাকা, উনত্রিশ বেতি ১৬০০টাকা ও মোটা গাজী ১৪৫০-১৫০০টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানাগেছে, আশুগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা থেকে ব্যবসায়ীরা চাল এনে গোদাম জাত করে বাজারে বিক্রি করছে।
হ্নীলার চাল ব্যবসায়ী মোহাম্মদ আলী ৩মাসের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ৫০০-৬০০টাকা বেড়েছে স্বীকার করে দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, কিছুই বুঝতে পারছিনা। এখানে করার কিছুই নেই জানিয়ে এই চাল ব্যবসায়ী আরো বলেন চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে আড়তদার ও মিল মালিক। গণহারে রোহিঙ্গা প্রবেশের কারণে চালের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে হ্নীলার হকার মোহাম্মদ ইউসুফ ও মৌলভীবাজার এলাকার শামসুদ্দিন দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার স্বার্থে জরুরী ভিত্তিতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। ব্যবসায়ীদের যোগসাজশে চালের দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে জানিয়ে লেদা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি কামাল আহমদ দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, আওয়ামীলীগ সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ঠ করার জন্য প্রতিযোগীতামূলক ভাবে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বৃদ্ধি করেই যাচ্ছে। জানতে চাইলে বাজার মনিটরিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: শফিউল আলম দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, চালের দাম বেড়েছে সত্য। তবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে শীঘ্রই অভিযান জোরদার করা হবে।