একাত্তরলাইভডেস্ক: প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে সরকারের ‘নিচু মনের পরিচয়’ হিসেবে অভিহিত করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, তার পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’রোববার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। ‘বিএনপির ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং জিয়াউর রহমান বীর উত্তম’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করে দলটির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দল।মওদুদ আহমদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগ কিন্তু এই কথা কোনো দিন বলে না যে, শহীদ জিয়া কোনো ঘোষণা দেননি। তারা যেটা বলতে চান, তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, কিন্তু সেটি বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে দিয়েছেন।’‘কিন্তু সঠিক তথ্য হলো এই উনি (জিয়া) দুইবার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রথমবার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি নিজে এবং নিজের পক্ষ থেকে স্বাধীনতাযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক হিসেবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দ যখন তার উপর চাপ তৈরি করে, তখন ৩০ তারিখে তিনি আরেকবার ঘোষণা দিলেন- একই ঘোষণা। কিন্তু বললেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষ থেকে বলছি।’জিয়াউর রহমানই স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন এই বিষয়ে বিতর্কের অবকাশ নেই মন্তব্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ঐতিহাসিকভাবে এটি সত্য যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা জিয়াউর রহমানই দিয়েছিলেন। এটা নিয়ে আওয়ামী লীগ কেন এত বিতর্ক করে আমি বুঝি না। এখানে বিতর্কের কোনো অবকাশ নেই।’‘শহীদ জিয়া ঘোষণা দিয়েছিলেন এটি কোটি কোটি মানুষ শুনেছিলেন। আমি নিজের কানেও শুনেছি। সুতরাং এটি অস্বীকার করার কিছু নেই।’মওদুদ আহমদ বলেন, ‘শহীদ জিয়া সাহসী ও দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের শূন্যতার কারণে যে অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তিনি একটি দূরদর্শীপূর্ণ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সেটি হচ্ছে বিদ্রোহ ঘোষণা এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করে তিনি কোটি কোটি মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন।’পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশকে রক্ষা করেছেন মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘৭ নভেন্বর সিপাহী জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হয়ে তিনি এক দলীয় শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনেন।’তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ দেশের ইতিহাসের কথা বলেন কিন্তু তারা যে একদলীয় শাসন কায়েম করেছিলেন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, বাক স্বাধীনতা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিলেন- এ কথাটা বিন্দুমাত্রও বলেন না।’‘তাদের উচিত বলা যে, আমরা একদলীয় শাসন করেছিলাম এবং এর ব্যাখ্যা দেওয়া। কিন্তু তা কখনো তারা দিতে পারেননি। কিন্তু একেবারে না বলাটা একটি অনৈতিক দিক।’বিচারপতি খায়রুল হকের পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে দেওয়া রায়ের প্রসঙ্গ টেনে প্রবীণ আইনজীবী মওদুদ আহমদ বলেন, ‘মাননীয় বিচারপতি খায়রুল হকের ওই রায় ছিল স্ব-বিরোধী। এটি ছিল সম্পূর্ণভাবে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। জিয়াউর রহমানের সত্যিকারের যে রাষ্ট্রনায়কোচিত সিদ্ধান্ত ছিল, খায়রুল হক তার রায়ের মাধ্যমে নিজেই স্বীকার করেছেন।’‘স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত সরকারের নির্লজ্জ, আত্মঘাতী ও হীনমন্যতা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। সরকার নিচু মনের পরিচয় দিয়েছে। পদক প্রত্যাহার করে নিলে জিয়াউর রহমানের নাম যে কোটি কোটি মানুষের মধ্যে রয়েছে, তা প্রত্যাহার করা সম্ভবপর হবে না।’এই সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সরকারকে আত্মোপলব্ধি করে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসার আহ্বান জানান।জঙ্গিদের সঙ্গে পুলিশের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘রহস্যজনক ও বিস্ময়কর ব্যাপার যে, বড় বড় আসামি এবং অপরাধের মাস্টার মাউন্ডদের পেছন দিক থেকে গুলি করে মেরে ফেলা হচ্ছে, এর অর্থ কী? তাদের জীবিত রাখা হলে অনেক তথ্য পাওয়া যেত। ‘গুলি করে মেরে ফেলার অর্থ আপনি তদন্ত চান না এবং সতিকার তথ্য বের করতে চান না। এ জন্য মানুষের মনে এ বিষয়ে সন্দেহ জেগেছে।’জঙ্গি দমনে সরকারকে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এতে বিএনপি সহযোগিতা করবে। এ সময় একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে প্রতিনিধিত্বশীল ও জাবাদিহিতামূলক সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে ক্ষমতাসীনদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
জিয়ার স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী: মওদুদ
September 4, 2016