‘জনগণের ভোটে যারা বাধা দেবে তারা স্বাধীনতাবিরোধী’

অনলাইন ডেস্ক : জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, জনগণের ভোটে যারা বাধা দেবে তারা স্বাধীনতাবিরোধী হিসেবে চিহ্নিত হবে।

তিনি আরও বলেন, ভোট কেন্দ্র পাহারা দেয়া মানে গৃহযুদ্ধ বাধিয়ে দেয়া নয়। জনগণের ভোটাধিকার পাহারা দিতে হবে।

তিনি প্রশ্ন করে বলেন, ভোট কেন্দ্র পাহারা দেয়ার অর্থ কি গৃহযুদ্ধ করা? নিজেদের অধিকার নিজেদের ফিরিয়ে নিতে প্রয়োজনে জনগণকেই ভোটকেন্দ্র পাহারা দিতে হবে।

সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘লঞ্চিং গণফোরাম-লেড পাবলিক পলিসি ইনিশিয়েটিভ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল হোসেন এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন- দলটিতে সদ্য যোগ দেওয়া অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া।

এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন- গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী, পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্ট, কেন্দ্রীয় নেতা মোকাব্বির খান, অ্যাডভোকেট জগলুল হায়দার আফ্রিক, রফিকুল ইসলাম পথিক, মোহাম্মদ উল্লাহ মধু।

ড. কামাল হোসেন আরও বলেন, যথাসময়ে নির্বাচন হবার বিষয়ে তিনি আশাবাদী।

তিনি বলেন, ভোট কারচুপির আশঙ্কা তো সব দেশে সব নির্বাচনেই হয়। আমাদের এখানেও আশঙ্কা রয়েছে। অর্থ, অস্ত্র, ক্ষমতার মধ্য দিয়ে কেউ কিছু চাইলেই তো হবে না, আমরা ঐক্যের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যাব। ভোট দেওয়ার প্রক্রিয়ায় কেউ বাধা দিলে সেটা হবে স্বাধীনতাবিরোধী। ভোট জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার। যারা নির্বাচনে অংশ নেবেন শুধু তারাই বঞ্চিত হবে না, পুরো দেশের মানুষ বঞ্চিত হবেন।

আসন বণ্টন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের ব্যাপারে তিনি বলেন, পিঠা ভাগাভাগি করতে গেলে কিছু টানাটানিতো হবেই।

ড. কামাল হোসেন বলেন, আমরাতো এতো দ্রুত ঐক্য গড়ে তুলতো পারব তা ভাবিনি। মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে আমরা ঐক্যমতে পৌঁছেছিলাম।

তিনি জানান, জাতীয় ঐক্যজোট ও বিএনপির মধ্যে আসন ভাগাভাগি নিয়ে কোনো সঙ্কট হয়নি।

ড. কামাল হোসেন বলেন, জোট হলে তো আসন ভাগ করতেই হয়। আলোচনা কিছুটা শুরু হয়েছে। তবে এটা কঠিন কাজ। এ ভাগাভাগিতে কেউ পাবে, কেউ পাবে না। তবে যে পাবে না সে তার পাওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবে।

ফাঁস হওয়া বিএনপির দুই নেতার ফোনালাপে ‘ব্ল্যাকমেইল’ শব্দের ব্যবহার নিয়ে করা আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, আশা করছি এ ধরনের ভাষা ব্যবহার হবে না। ভাষার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে হবে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্রকে লালন করতে হলে রাজনীতিবিদসহ সকলকে মার্জিত ভাষা ব্যবহার করতে হবে। ড. কামাল হোসেন বলেন, উপনিবেশিক আমলে আমরা শোষক শাসক শব্দ ব্যবহার করেছি। প্রতিপক্ষ হুমকি দিয়ে ‘দেখে নেব’- এসব শব্দ এখন না ব্যবহার করা উচিত। আসলে বিভিন্ন রাজনৈতিক আমলে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা ঢুকে পরে এধরণের শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে। সে সময় কোন কারণ না বলে মানুষকে তুলে নিয়ে যাওয়া হত।

তিনি বলেন, অনেক লোক একাত্তরে জীবন দিয়েছে। কিন্তু এখনও রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন হয়নি। তাহলে প্রশ্ন এত লোক জীবন দিল কেন? স্বাধীনতার অর্থই হল জনগণ ক্ষমতার মালিক। এ দেশের মানুষ এখনো ভালো মানুষকে সম্মান করে। তারা ভালো মানুষকে মূল্যায়ন করতে ভুলে যায়নি।

সংবাদ সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্ট জয়ী হলে কী করবে- এমন প্রশ্নের জবাবে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, বাংলাদেশের উন্নয়নে সরকার যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আমার মনে হয় তাতে অনেক ভুল রয়েছে। ঐক্যফ্রন্টের সরকার ক্ষমতায় আসার পর সেগুলো শুধরে নেয়া হবে। সবার জন্য সমতা, কোয়ালিটি অব পাবলিক সার্ভিস, কোয়ালিটি অব পলিটিক্স নিশ্চিত করা হবে। যে শিক্ষার্থী ঢাকায় এবং যে শিক্ষার্থী গ্রামে পড়ালেখা করেন তাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। তবে এই পার্থক্য দূর করা সম্ভব। সরকারি কর্মকর্তারা ভুলে যান, জনগণের টাকায় দেশ চলে। গণফোরাম ও ঐক্যফ্রন্টের সরকার এলে এই বৈষম্যগুলো আর থাকবে না। অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের নীতিমালাতেই তা নিশ্চিত করা হবে।

তিনি বলেন, আমাদের সময় চাকরি হবে মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে। ব্যাংকিং খাতে সুশাসন আনা হবে। বাজেট রিফর্ম করা হবে। বাজেট প্রণয়নের প্রক্রিয়ায় রিফর্ম করার সুযোগ রয়েছে। আমাদের সরকার গতানুগতিক কোনো সরকার হবে না। জনগণ সরাসরি তাদের মতামত জানাতে পারবেন-সেই সুযোগ রাখা হবে। আমাদের স্বপ্ন অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র। ব্যক্তি কেন্দ্রীক গণতন্ত্র চর্চার দিন শেষ।