খুশু-খুজু নামাজের প্রাণ

একাত্তর লাইভ ডেস্ক:
মানুষ তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কর্মদক্ষতা অনুযায়ী তার কাজের পারিশ্রমিক পেয়ে থাকে। অতএব, আমরা নামাজের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ হুকুম-আহকাম সম্পর্কে যত বেশি জ্ঞানার্জন করব এবং সে অনুযায়ী আমল করব, আমাদের আমলের সওয়াব ও মূল্যায়ন তত বেশি বেড়ে যাবে। এ সম্পর্কে হজরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, মানুষ নামাজ আদায় করে, অথচ তার আমলনামায় সওয়াবের দশ ভাগের এক ভাগ, নয় ভাগের এক ভাগ, আট ভাগের এক ভাগ, সাত ভাগের এক ভাগ, ছয় ভাগের এক ভাগ, পাঁচ ভাগের এক ভাগ, চার ভাগের এক ভাগ, তিন ভাগের এক ভাগ, আবার কারও আমলনামায় অর্ধেক সওয়াব লেখা হয়। (আবু দাউদ : ৭৯৬)। নামাজের পূর্ণ সওয়াব হাসিলের অন্যতম শর্ত খুশু-খুজু।
নামাজে খুশু-খুজু (একাগ্রতা)
ইসবাগুল অজু (সুন্নত তরিকায়) অজু করা তথা অজুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো পূর্ণাঙ্গরূপে ধৌত করা। এ সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) অজুর সময় কিছু সংখ্যক লোকের পায়ের গোড়ালি ধোয়া দেখে বললেন, জাহান্নামের গোড়ালিগুলোর জন্য ধিক। (বোখারি : ৯৭)।
আল্লাহ তায়ালার মহব্বতের ধ্যান করা। যে মহান সত্তা আমাকে সৃষ্টি করেছেন, যিনি আমার প্রতি সীমাহীন অনুগ্রহ করছেন, যার সাহায্য-সহযোগিতা ছাড়া আমার পক্ষে এক মুহূর্তও বেঁচে থাকা সম্ভব নয়, যিনি আমাকে এ পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন, সে মহান সত্তার সামনে আমি উপস্থিত থেকে যাচ্ছি। এ সম্পর্কে হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, তোমরা আল্লাহকে ভালোবাস, তিনি তোমাদের তার নেয়ামত থেকে যে খাদ্যের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন এর কারণে, আর আমাকে ভালোবাস আল্লাহর ভালোবাসার কারণে, আর আমার পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসো আমার ভালোবাসার কারণে। (তিরমিজি :  ৩৭৮৯)।
নামাজের বিনিময়ে আল্লাহ তায়ালা যে সওয়াব প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন, তার প্রতি অন্তরে আশা পোষণ করা। প্রতিদানের আশা যেমন কষ্টকে আসান করে দেয়, তেমনি একাগ্র থেকে সহায় হয়। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, যার নিয়ত নেই, তার কোনো আমল নেই। যার সওয়াবের আশা নেই, তার কোনো সওয়াব নেই। (সুনানে বায়হাকি : ১৭৯ সংক্ষেপিত)।
মহান বাদশাহ আল্লাহ তায়ালার সামনে দাঁড়ানোর ধ্যান করা। মানুষ যখন কোনো বাদশাহর সামনে দাঁড়ায় তখন না জানি তার দ্বারা কোনো ভুল-ত্রুটি হয়ে যায় এ ব্যাপারে সে শঙ্কিত থাকে। ওই অবস্থায় তার মনে অন্য কোনো চিন্তা স্থান পায় না। অনুরূপভাবে নামাজ আদায়কারী যদি মহান বাদশাহ আল্লাহ তায়ালার সামনে হাজির হওয়ার ধ্যান করে, তাহলে তার মনেও দুনিয়াবি কোনো চিন্তা স্থান পাবে না। এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কালামে এরশাদ করেন, ‘তারা পার্শ্ব শয্যা থেকে আলাদা হয়। তারা তাদের পালনকর্তাকে ডাকে ভয়ে ও আশায় এবং আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে।’ (সূরা সেজদা : ১৬)।
আল্লাহ তায়ালার কুদরতের ধ্যান করা। যে মহান আল্লাহ হজরত ইসরাফিল (আ.) এর মতো ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন, সাত আসমান, জমিন, পাহাড়-পর্বত, সমুদ্র, মহাসমুদ্র, সূর্য, চন্দ্র, গ্রহ-নক্ষত্র সবই যার সামনে কয়েকটি কাগজের টুকরার ন্যায় পড়ে রয়েছে, যিনি সিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে আসমান-জমিন, পাহাড়-পর্বত তুলার ন্যায় উড়তে থাকবে। যে মহান সত্তা এমন অসংখ্য ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন, সে মহান সত্তা আল্লাহ তায়ালা কত বড়! এ সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, ‘যেদিন শিঙ্গায় ফুঁক দেয়া হবে, তখন তোমরা দলে দলে সমাগত হবে। আকাশ বিদীর্ণ হয়ে তাতে অনেক দরজা সৃষ্টি হবে এবং পর্বতমালা চালিত হয়ে মরীচিকা হয়ে যাবে।’ (সূরা নাবা : ১৮-২০)।
নামাজে আল্লাহ তায়ালাকে দেখার ধ্যান করা। আমি কীভাবে রুকু-সিজদা করছি, কীভাবে সূরা-কেরাত পাঠ করছি, কীভাবে নামাজে ওঠবস করছি সবই আল্লাহ তায়ালা দেখছেন, এ ধ্যান করা, যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে আল্লাহ তায়ালা আমাকে দেখছেন এ ধ্যান করা। হাদিসে এরশাদ হয়েছে, ইহসান হচ্ছে এমনভাবে আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা যেন তুমি তাকে দেখছ। (যদি তোমার এ অবস্থা সৃষ্টি না হয়, তাহলে এ ধ্যান করো) আল্লাহ তায়ালা তোমাকে দেখছেন। (বোখারি : ৫)।
জীবনের শেষ নামাজ মনে করে নামাজ আদায় করা। মানুষের হায়াতে জিন্দেগির কোনো নিশ্চয়তা নেই। যে কোনো মুহূর্তেই তার জীবনের অবসান ঘটে যেতে পারে। তাকে চলে যেতে হবে এ দুনিয়া ছেড়ে। একবার চলে গেলে আর কখনও ফিরে আসা সম্ভব হবে না। এ সম্পর্কে হজরত আবু আইয়ুব আল আনসারি (রা.) বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.) এর কাছে এসে বললেন, আমাকে সংক্ষেপে কিছু শিক্ষা দিন, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, তুমি যখন নামাজে দাঁড়াবে তখন জীবনের শেষ নামাজ মনে করে নামাজ আদায় করবে। এমন কথা বল না, যার কারণে তোমাকে পরে অনুতপ্ত হতে হবে। (ইবনে মাজাহ : ৪১৭০)।
আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কথোপকথনের খেয়াল করা। সাধারণ মানুষ যদি রাজা-বাদশাহর  সঙ্গে কথোপকথনের সুযোগ পায়, তাহলে এ সুযোগকে মহাসৌভাগ্য মনে করে, অথচ বান্দা যখন সালাতে দাঁড়ায় তখন, সে সমগ্র পৃথিবীর সব বাদশাহর বাদশাহ মহান আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে কথোপকথনের সৌভাগ্য লাভ করে। এ সম্পর্কে হজরত আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন সে যেন তার প্রতিপালকের সঙ্গে কথোপকথন করে। সুতরাং সে যেন তার সামনে থুথু না ফেলে। (একান্ত যদি থুথু ফেলতে হয়) তাহলে ডান দিকে বা বাম দিকে কিংবা পায়ের নিচে থুথু ফেলবে। (বোখারি : ৪১৩)।
নামাজের রুকনগুলো ধীরে-সুস্থে আদায় করা। যে কাজ যতটা ধীরে-সুস্থে করা হয় সে কাজ তত বেশি সুচারুরূপে সম্পন্ন করা সম্ভব হয়। আর যে কাজে যত বেশি তাড়াহুড়া করা হয় তাতে তত বেশি ভুল হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেন, ধীরে-সুস্থে কাজ করা আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে, আর তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে। (সুনানে বায়হাকি : ২০৭৬৭)।