কুমিল্লার কংশনগর বাজারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড, প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি নিহত ১

শাহ আলম শফি,কুমিল্লা
কুমিল্লার বুড়িচং উপজলার কংশনগর বাজারে শুক্রবার মধ্য রাতে ভয়াবহ এক অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে বাজারের ৭৫টি দোকান পুড়ে ভষ্মীভূত হয়। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, আগুন নেভানোর সময় ব্যাপক লুটপাট হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবী করেন। এসময় তালাবদ্ধ এক গার্মেন্ট দোকানে আগুনে পুড়ে খোকন (১৪) নামে এক কর্মচারীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়ক সংলগ্ন বুড়িচং উপজেলার ভারেল্লা উত্তর ইউনিয়নের কংশনগর বাজারে শুক্রবার রাত প্রায় সোয়া ১২ টার দিকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হয়। ধারণা করা হয় বাজারের আম্বিয়া বস্ত্রালয়ের দোকানে লাগানো মশার কয়েল থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। মূহুর্তের মধ্যে আগুনের লেলীহান শীখা পার্শ্ববর্তী দোকানগুলিতে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। বাজার পাহারাদারদের চিৎকারে স্থানীয়রা এগিয়ে এসে আগুন নিয়ন্ত্রনে ব্যার্থ হয়ে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেয়। খবর পেয়ে প্রায় এক ঘন্টা পরে কুমিল্লা থেকে দু’টি ও মুরাদনগর থেকে দু’টি ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌছে আগুন নিয়ন্ত্রনের চেষ্ঠা চলায়। খবর পেয়ে বিভিন্ন দোকান মালিক বাজারে পৌছে দোকান থেকে মালামাল সরাতে ব্যস্থ হয়ে পরে। এসময় আগুন নেভানোর নামে কিছু অসাধু লোকজন দোকানগুলিতে লোটপাট চালায় বলে ব্যবসায়ীরা জানায়।

খবর পেয়ে দেবপুর ফাঁড়ী পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে। আগুনে জহির ইলেক্ট্রিক-হার্ডওয়ার দোকান, জনপ্রিয় হার্ডওয়ার দোকান, কাপড়-গার্মেন্স দোকান, জুয়েলারী দোকান, ঔষধ ফার্মেসি, লাইব্রেরী, ভেরাইটিজ স্টোর, মিষ্টি দোকান, এলপি গ্যাসের দোকান, মুদি মালের দোকান, টেইলারিং পন্যের দোকান, ইলেক্ট্রনিক্স দোকান, কসমেটিকস দোকান, বিভিন্ন মালের গোডাউন, সুতা-মাছ মারার ঝালের দোকানসহ ৭৫টি দোকান ভষ্মীভূত হওয়ার পর ৪ ঘন্টাপর ভোর ৫ টায় ফায়ার সার্ভিস আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রনে আনে। এতে প্রায় ৩০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ব্যবসায়ীরা দাবী করেন।

এসময় বাজার পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারী আলী আহাম্মদের মালিকীয় আম্বিয়া বস্ত্রালয়ের সাটার ভেঙ্গে ওই দোকানের কর্মচারী নাজমুল হাসান খোকন (১৪) এর লাশ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। আগুনে নাজমুলের দেহ সম্পূর্ন পুড়ে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন আগুন লাগার সময় নাজমূল দোকানের ভিতর থেকে বাঁচানোর জন্য চিৎকার করতে থাকে। দোকানের বাহির থেকে তালা লাগানো থাকার কারনে সে দোকান থেকে বের হতে পারেনি। পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ীরা বলেন, আম্বিয়া বস্ত্রালয়ের মালিক প্রতিদিনের ন্যায় শুক্রবার রাতেও নাজমূল’কে দোকানের ভিতরে রেখে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে দোকান বন্ধ করে। ফলে নাজমূল দোকান থেকে বের হতে না পেরে আগুনে পুড়ে মারা যায়।
আগুন লাগার খবরে ভোর তিনটায় বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল জাহিদ পাভেল ঘটনাস্থলে পৌছে পুলিশের সহয়তায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের চেষ্ঠা চালায়। সকাল ১০ টায় সাবেক আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী এড. আবদুল মতিন খসরু এমপি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফজলুল জাহিদ পাভেল জানান, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহত নাজমূলের মায়ের হাতে ১০ হাজার টাকা এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আরো ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়েছে পাশপাশি ক্ষতিগ্রস্থ প্রত্যেক ব্যবসায়ীকে ৩ হাজার টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল প্রদান করা হবে এবং ক্ষতিগ্রস্থ মালিকদের ২ ভান করে ঢেউ টিন প্রদান করা হবে। #