অনলাইন ডেস্ক : করোনাভাইরাসের আতঙ্কে কাঁপছে বিশ্ব, মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যায় ভুগছে প্রতিটি দেশ। ফোর্বস ম্যাগাজিন ডিপ নলেজ গ্রুপের বিশ্লেষণ বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ ২০ দেশের তালিকার মধ্যে ১৩ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ।
এদিকে, এরই মধ্যে দেশের সর্বত্র প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ায় সমগ্র বাংলাদেশকে করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে ঘোষণা করেছে সরকার। একই সঙ্গে জনসাধারণকে সরকারি নির্দেশাবলি কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান জানানো হয়েছে। অন্যথায় সংক্রামক ব্যাধি আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের বিভিন্ন এলাকায় এই ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটেছে। এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। এসব কারণে সংক্রামক রোগ ২০১৮-এর ১১ (১) ধারার ক্ষমতাবলে সমগ্র বাংলাদেশকে সংক্রমণের ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ঘোষণা করা হলো।
জনসাধারণকে কিছু নির্দেশনা দিয়ে কঠোরভাবে সেগুলো অনুসরণ করার অনুরোধ জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, জনগণকে অবশ্যই ঘরে থাকতে হবে। অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে যাওয়া যাবে না। এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হলো। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত কেউ ঘরের বাইরে যেতে পারবে না। এসব নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সারা দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণার কারণ হিসেবে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী মহামারি আকার ধারণ করা এই ভাইরাসের বিস্তার বাংলাদেশেও ঘটেছে। হাঁচি, কাশি ও পরস্পর মেলামেশার কারণে এ রোগের বিস্তার ঘটে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুযায়ী, এ রোগের একমাত্র প্রতিষেধক হলো পরস্পর নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করা।
ভাইরাসের বিস্তার রোধে এরই মধ্যে দেশের ৪৮ জেলা লকডাউন করেছে প্রশাসন। এর বাইরে কিছু উপজেলা ও অঞ্চল লকডাউন করেছে স্থানীয় প্রশাসন। রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুর, টোলারবাগ, ওয়ারীসহ বেশকিছু এলাকা লকডাউন করা হয়েছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিনই করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটছে। নতুন নতুন জেলা ও অঞ্চল সংক্রমণের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে।
পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, চীনের উহান শহর থেকে জন্ম নেওয়া এই ভাইরাসটি বর্তমানে বিশ্বের সব দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটি দেশেই প্রথমে দু-একজনের শরীরে এর সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল। এর পর ধাপে ধাপে বিস্তার ঘটিয়ে সারা দেশে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ইউরোপের দেশ ইতালি ও স্পেনের পর বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এই ভাইরাস মহামারি আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিন আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে। চিকিৎসা বিশেষজ্ঞসহ সংশ্নিষ্টদের আশঙ্কা বাংলাদেশও যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের পথে হাঁটছে।
ফোর্বস বলছে, এখন পর্যন্ত করোনায় এক নম্বরে রয়েছে ইতালি, দ্বিতীয়তে আছে যুক্তরাষ্ট্র আর ভারত রয়েছে ১৫তম স্থানে। এই বিশ্লেষণ করা হয় ২৪ প্যারামিটার গ্রুপে ৪টি প্রধান ধাপের ওপর ভিত্তি করে। যেখানে রয়েছে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি, সরকারি ব্যবস্থাপনা, স্বাস্থ্য সুরক্ষার গুরুত্ব এবং আঞ্চলিকতার নির্দিষ্ট ঝুঁকি। এছাড়াও এশিয়াভিত্তিক আঞ্চলিক দেশগুলোর নিরাপত্তা তালিকাও করেছে ফোর্বস ম্যাগাজিন ডিপ নলেজ গ্রুপ, যেখানে বাংলাদেশ রয়েছে নিম্ন লেভেলের মধ্যে স্থান পেয়েছে ১৮ নম্বরে।