অনলাইন ডেস্ক : নিথর দেহে কফিনে শুয়ে সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরেছেন ফায়ার ফাইটার সোহেল রানা। সোমবার (৮ এপ্রিল) রাত পৌনে ১১টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সোহেল রানাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি অবতরণ করে। সোহেল রানার পারিবারিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত শুক্রবার (৫ এপ্রিল) বনানীর এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের সময় আটকে পড়া মানুষজনকে বাঁচাতে গিয়ে আহত হওয়া ফায়ারম্যান সোহেল রানাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে সোমবার (৮ এপ্রিল) স্থানীয় সময় ভোর ৪টা ১৭ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিট) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।
পরে সোমবার (৮ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে নিহত সোহেল রানার মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। রাত পৌনে ১১টার দিকে সোহেল রানাকে বহনকারী এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
রাতে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের হিমঘরে সোহেল রানার মরদেহ রাখা হবে।
মঙ্গলবার (৯ এপ্রিল) সোহেল রানার মরদেহ কিশোরগঞ্জ জেলা ইটনা উপজেলার চৌগাংঙ্গা কেরুয়ালা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। পরে স্থানীয় ঈদগাহ মাঠে জানাজা শেষে গ্রামের কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হবে।
ফায়ারম্যান সোহেল রানা কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা উপজেলার চৌগাংগা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত কেরুয়ালা গ্রামের দরিদ্র কৃষক নূরুল ইসলামের ছেলে।
গত ২৮ মার্চ বনানীর এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এদিন কুর্মিটোলা ফায়ার স্টেশনের ফায়ারম্যান সোহেল রানা ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডারে (উঁচু মই) উঠে আগুন নেভানো ও আটকে পড়া ব্যক্তিদের উদ্ধার কাজ করছিলেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভবনে আটকে পড়া অনেককে উদ্ধার করেছেন।
কিন্তু দুর্ভাগ্য, হঠাৎ ল্যাডারটি বন্ধ হয়ে যায়। ল্যাডারের বাস্কেটে তখন ভবন থেকে উদ্ধারকরা পাঁচ-ছয় জন। বাস্কেটে জায়গা হচ্ছিলো না। সোহেল রানা ল্যাডারের সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামতে যান। ওই সময়ে তার পা আটকে যায় ল্যাডারে। ভেঙ্গে কয়েক টুকরো হয়ে যায় তার ডান পায়ের হাড়। টান পড়ে কোমড়ে বাঁধা সেফটি হুকে।
সোহেল রানা মই থেকে পিছলে পড়ে বিপজ্জনকভাবে ঝুলছিলেন। পা টা কোন রকমে শরীরের সঙ্গে লেগে আছে। পেটে চাপ লেগে নাড়িভুঁড়িও থেঁতলে যায়। কিছুক্ষণ পরেই অজ্ঞান হয়ে যান সোহেল রানা। তারপর থেকে সিএমএইচে আইসিইউতে ভেন্টিলেশনে রেখে তাকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।
এ রকম পরিস্থিতিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে গত শুক্রবার (৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সোহেল রানাকে সিঙ্গাপুর পাঠানো হয়। কিন্তু চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে সোমবার (৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ সময় রাত ২টা ১৭ মিনিটে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান ফায়ার ফাইটার সোহেল রানা।