গাইবান্ধা প্রতিনিধি:
গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় ১৮ জনকে আটক করেছে পুলিশ।
গাইবান্ধার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবিউল ইসলাম সমকালকে এতথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৮ জনকে আটক করে থানায় আনা হয়েছে।
রবিউল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। যাচাইবাছাই শেষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের শাহাবাজ এলাকায় নিজ বাড়িতে গিয়ে দুর্বৃত্তরা এমপি লিটনকে গুলি করে।
গুরুতর আহতাবস্থায় উদ্ধার করে রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে নেওয়া হলে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. বিমল চন্দ্র তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিউর রহমান জানান, দুর্বৃত্তরা মোটরসাইকেল যোগে এমপি লিটনের বাড়িতে এসে গুলি করে। গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
সংসদ সদস্য লিটনের কোল্ডস্টোরেজের ম্যানেজার অনিল সাহা ও শ্যালক আবু নাসের মিরান জানান, সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন তার দুইতলা বাড়ির নিচ তলার বৈঠক খানায় বসে ৫-৬ জন নেতাকর্মীকে নিয়ে কথা বলছিলেন। এ সময় তিন যুবক হ্যালমেট পরা অবস্থায় একটি মোটর সাইকেলে তার বাসার সামনে আসে। তাদের একজন বাসার বাইরে আঙিনায় স্টার্ট দেওয়া মোটর সাইকেলে বসে অবস্থান করছিল। অপর দুইজন এমপি লিটনের সাথে জরুরি কথা বলার অজুহাতে ঘরের ভেতরে ঢুকে তাকে লক্ষ্য করে খুব কাছ থেকে আকস্মিক কয়েক রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। লিটন মাটিতে লুটিয়ে পড়েই অচেতন হয়ে যান। এসময় দুর্বৃত্তরা দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে মোটর সাইকেলে পালিয়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা এমপিকে লক্ষ্য করে তিন রাউন্ড গুলি ছোঁড়ে। দুটি গুলি তার বুকের দু’পাশে এবং অপরটি উঁরুতে বিদ্ধ হয়। এ সময় তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। গুলির শব্দ শুনে বাড়ির এবং আশেপাশের লোকজন ছুটে আসেন। তারা মোটর সাইকেল নিয়ে তিনজন যুবককে পালাতে দেখেন; কিন্তু তাদের হাতে অস্ত্র থাকায় কেউ সামনে যেতে সাহস করেনি। তারা দ্রুত রাস্তায় উঠে বামনডাঙ্গা-নলডাঙ্গা সড়ক ধরে পালিয়ে যায়।
এদিকে, এমপি লিটনের হত্যার প্রতিবাদে রোববার সুন্দরগঞ্জে হরতাল চলছে। হরতাল চলাকালে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে বিক্ষুব্ধ জনতা বামনডাঙ্গা রেল স্টেশনে রেললাইন অবরোধ করে লালমনিরহাট থেকে সান্তাহারগামী ২০ ডাউন ট্রেনটি আটকে দেয়।
সুন্দরগঞ্জ পৌর মেয়র আব্দুল্লাহ আল মামুন সুন্দরগঞ্জ পৌর শহরে সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত এ হরতাল আহ্বান করেন।
হরতালের কারণে সকাল থেকে সুন্দরগঞ্জে সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি মো. আতিয়ার রহমান।
এমপি লিটনকে হত্যাকাণ্ডের পর থেকে গোটা সুন্দরগঞ্জ জুড়ে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন স্থানে খণ্ড খণ্ড মিছিল করছে। ঘটনার পর স্থানীয় অনেক বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মী এলাকা থেকে পালিয়ে গেছে। পুলিশ শনিবার রাতে সন্দেহভাজন বক্তিদের আটক করতে শুরু করেছে।
ওসি মো. আতিয়ার রহমান জানান, গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তাই আপাতত আটক ব্যক্তিদের নাম জানানো হচ্ছে না।