এমপি লিটন হত্যায় জড়িত সন্দেহে আটক ৩

গাইবান্ধাপ্রতিনিধি:গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটন হত্যায় জড়িত সন্দেহে ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। শনিবার রাতে উপজেলার বামনডাঙ্গা থেকে তাদের আটক করা হয় বলে জানান সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আতিউর রহমান।

রাতে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে আটককৃতদের কারও পরিচয় জানায়নি পুলিশ।

শনিবার সন্ধ্যায় সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার মাস্টারপাড়ার নিজ বাড়িতে আওয়ামী লীগের এই সংসদ সদস্যকে গুলি করা হয়। পরে রাত সাড়ে ৭টার দিকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাতে এক শোক বিবৃতিতে তিনি সংসদ সদস্যের পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বিবৃতিতে বলেন, ‘দেশ যখন উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে তখন একটি মহল দেশে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে স্বার্থ হাসিলের অপচেষ্টা চালাচ্ছে। হত্যা ও সন্ত্রাসের পথ বেছে নিয়েছে, যা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। তাদের হত্যার রাজনীতির পথ ধরেই তারা নির্বচিত সংসদ সদস্য মঞ্জুরুল ইসলাম লিটনকে হত্যা করেছে।’

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের প্রধান বিমল চন্দ্র রায় রাত সাড়ে ৭টার কিছু পরে হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে এসে সংসদ সদস্যের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

চিকিৎসক বিমল চন্দ্র রায় ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘সংসদ সদস্য লিটনকে খুব কাছ থেকে গুলি করা হয়েছে। তাঁর শরীরে মোট পাঁচটি গুলি লেগেছে। এর মধ্যে দুটি গুলি লেগেছে বুকে আর তিনটি লেগেছে হাতে। একটি গুলি বুক দিয়ে ঢুকে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে গেছে। চিকিৎসকরা আপ্রাণ চেষ্টা করেছেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে রক্ষা করা যায়নি।’

হাসপাতালে আনার আগেই কি সংসদ সদস্য মারা যান- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বিমল চন্দ্র রায় বলেন, ‘এটা আমি বলতে পারব না। এখানে আনার পর পোস্ট অপারেটিভ কক্ষে আমরা যখন পাই, তখনই তাঁর নাড়ি, রক্তচাপ ও হৃদস্পন্দন পাওয়া যাচ্ছিল না। এর জন্য ভেন্টিলেশন, স্যালাইন, সিপিআরসহ অন্যান্য যা যা করার দরকার আমরা সবাই মিলে তাই করেছি। কিন্তু আধা ঘণ্টারও বেশির সময় ধরে চেষ্টা করেও আমরা তাঁকে ফেরাতে পারিনি। রাত সাড়ে ৭টায় আমরা সিদ্ধান্ত নিই যে তিনি আর বেঁচে নেই।’

সংসদ সদস্য লিটনের শরীরে গুলির চিহ্ন ছাড়া আর কোনো ক্ষতচিহ্ন নেই বলেও জানান চিকিৎসক। সংসদ সদস্যের লাশ রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে, সেখানেই তাঁর ময়নাতদন্ত হবে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

এ দিকে সংসদ সদস্য লিটন গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর পরই তাঁর নির্বাচনী এলাকাসহ গাইবান্ধা জেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেন দলীয় নেতাকর্মীরা। হাসপাতালে মারা যাওয়ার খবর শুনে সুন্দরগঞ্জে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় র‌্যাব, পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মোড়ে মোড়ে টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এমপি লিটন মারা যাওয়ার পর পরই সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা এলাকায় দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। স্থানীয় নেতাকর্মীরা রাস্তায় এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। পাশের উপজেলা গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, গাইবান্ধা শহরেও বিক্ষোভ করেছেন নেতাকর্মীরা।

তবে রাত সাড়ে ১০টার দিকে সুন্দরগঞ্জ ও বামনডাঙ্গায় সুনসান নীরবতা নেমে আসে। সেখানে বিপুল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রয়েছেন।

পুলিশের রংপুর রেঞ্জের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. বশির আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ শুরু করেছে। খুই দ্রুতই এ ঘটনার রহস্য উদঘাটন করা হবে।

ঘটনার পর পরই সংসদ সদস্যের স্ত্রী খোরশেদ জাহান স্মৃতি  সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সংসদ সদস্যকে তাঁর নিজ বাড়ি সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গায় গুলি করা হয়েছে। দুই দুর্বৃত্ত মোটরসাইকেলে এসে গুলি করে পালিয়ে যায়। তার পরই তাঁকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।’

তবে কারা গুলি করেছে- এ ব্যাপারে এখনো কিছু জানা যায়নি বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি আতিউর রহমান।