‘উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে নতুন উদ্ভাবনে উদ্যোগী হতে হবে’

অনলাইন ডেস্ক: রাষ্ট্রপতি ও যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, শোষণমুক্ত সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ বিনির্মাণই ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার। বর্তমান সরকার মহান মুক্তিযুদ্ধের সেই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।

ইতোমধ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, রূপকল্প ২০২১, রূপকল্প ২০৪১ ঘোষণার মাধ্যমে দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে যুক্ত করা হয়েছে। গৃহীত হয়েছে আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে কার্যকর পদক্ষেপ। মাথাপিছু আয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, স্যানিটেশন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে আমরা প্রশংসনীয় সাফল্য অর্জন করেছি। পদ্মা সেতু এখন দৃশ্যমান। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় রয়েছে। এসকল অর্জনকে আরও এগিয়ে নেয়ার জন্য মানসম্মত বিজ্ঞান শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে আন্তর্জাতিক মানের দক্ষতা অর্জনের বিকল্প নেই।

বুধবার বিকেলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩য় সমাবর্তন ২০১৮ অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এসব কথা বলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু একাডেমিক ভবনের সামনের মাঠে এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে দুপুর আড়াইটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অদূরে আব্দুলপুরে অস্থায়ীভাবে স্থাপিত হেলিপ্যাডে রাষ্ট্রপতি অবতরণ করেন। সেখানে তাকে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে লালগালিচা সংবর্ধনা দেয়া হয়। পরে মোটর শোভাযাত্রা করে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন রাষ্ট্রপতি এবং তার সফরসঙ্গীরা। এবারের সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৭০জন গ্রাজুয়েট অংশগ্রহণ করেন। তাদের মধ্যে আটজন চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক, পাঁচজন ভাইস চ্যান্সেলর পদক এবং ৫৬জন ডিন্স অ্যাওয়ার্ড পান।

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান বিশেষ অতিথি ছিলেন।

প্রযুক্তি উন্নয়নের বাহন উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, উন্নয়নের অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে হলে আমাদের নতুন নতুন উদ্ভাবনে উদ্যোগী হতে হবে। তবে উদ্ভাবনকে যথাযথভাবে প্রয়োগই হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হবে। কিন্তু প্রযুক্তি যাতে মানুষকে ব্যবহার না করতে পারে, সে ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। এক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে আসতে হবে।

নবীন গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আগের মতো ফ্রিস্টাইলে চললে চলবে না। তোমাদের উপর এখন অনেক দায়িত্ব। তোমাদের জ্ঞান আর মেধা হবে দেশের চালিকাশক্তি। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে তোমাদের উপর। দেশ ও জনগণের কাছে তোমাদের আছে ঋণ। একজন বিবেকবান নাগরিক হিসেবে সেই ঋণ তোমাদের পরিশোধ করা উচিত। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনকারী একজন গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সবসময় সত্য ও ন্যায়কে সমুন্নত রাখবে। দুর্নীতি ও অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে।

রাষ্ট্রের বিবেকবান নাগরিক হিসেবে তোমাদের কাছে প্রত্যাশা করি, তোমরা কখনও ডিগ্রির মর্যাদা, ব্যক্তিগত সম্মানবোধ আর নৈতিকতাকে ভুলুণ্ঠিত করবে না। আর একটা কথা বলি, কর্ম উপলক্ষে তোমরা পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকো না কেন, এ দেশ ও এ দেশের জনগণের কথা ভুলবে না। ভুলবে না খেটে খাওয়া সাধারণ জনগণের কথা। মনে রাখতে হবে, বাঙালির শেকড় এই সাধারণ জনগণের মধ্যেই প্রোথিত। কর্মজীবনে তোমরা সফল হও, সার্থক হও এই কামনা করি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে বর্ণনা করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কেবল পাঠদান কেন্দ্র নয়, বরং তা জ্ঞান সৃষ্টি ও চর্চার এক অনন্য পাদপীঠ। মুক্তচিন্তা, সমকালীন ভাবনা, জ্ঞান-বিজ্ঞানের নবতর অভিযাত্রাসহ সংস্কৃতি চর্চা, সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের জানার পরিধিকে যেমন বিস্তৃত করে তেমনি তাদের পরিণত করে বিশ্ব নাগরিকে। লেখাপড়ার পাশাপাশি সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শিক্ষার অন্যতম অনুসঙ্গ।

এর অনুপস্থিতিতে আজ উগ্রবাদসহ নানামুখী অসহিষ্ণুতা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মুক্ত চিন্তার পরিবেশ বাধাগ্রস্ত করছে। এ থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। আগামী প্রজন্মকে আধুনিক বাংলাদেশের নির্মাতা হিসেবে প্রস্তুত করতে এবং সকল স্তরে নেতৃত্বদানে সক্ষম ও দক্ষ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে তাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধের জাগরণ ঘটাতে হবে। তিনি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, পরমত সহিষ্ণুতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে লালন করার আহ্বান জানান। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, গবেষক, অভিভাবক, ছাত্রসংগঠনসহ সকলকে সম্মিলিতভাবে অবদান রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।

বিশ্বব্যবস্থায় যোগ্যতাই টিকে থাকার একমাত্র মানদণ্ড উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, সময়ের প্রয়োজনেই শিক্ষার্থীদের তথ্যপ্রযুক্তিতে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় উচ্চশিক্ষার এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে অব্যাহত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে।

সমাবর্তনে অধ্যাপক ড. রবার্ট হিউবার নিজের ক্ষেত্র প্রাণ-রসায়ন নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন। বাংলাদেশের বিরাট প্রাকৃতিক সম্পদ ও জনশক্তি বিষয়েও কথা বলেন তিনি। গ্রাজুয়েটদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা এক নতুন জীবনে পদার্পণ করলেন, যেখানে পিতামাতা, সমাজ, দেশ এবং মানবতার প্রতি রয়েছে গুরু দায়িত্ব। একজন মানুষ হিসেবে এই দায়িত্ব পালনে আপনাদের সদা প্রস্তুত থাকতে হবে।’

রবার্ট হিউবার বলেন, খাদ্য, শক্তি এবং পরিবেশ বিপর্যয় এখন মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের। কিন্তু এরও সমাধান রয়েছে তোমাদের মতো যুব সমাজের মাথায়। তোমরাই যেকোনো দেশের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ।