নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:
দেশে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে নারায়ণগঞ্জে হচ্ছে স্থানীয় সরকারের সিটি করপোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা চালাচ্ছেন জোর প্রচারণা। আর এ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বিএনপির নেতারা সংসদের বাইরে থাকায় প্রচারণায় পাচ্ছেন বাড়তি সুবিধা। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের বেশিরভাগ নেতা সরকারী সুবিধা ভোগী হওয়ায় দলের প্রথম সারির নেতারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে সরাসরি প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না। ফলে প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন দ্বিতীয় সারির নেতারা।
সরেজমিনে ঘুরে ও দলীয় সূত্রে জানা যায়, বিএনপি প্রার্থী সাখাওয়াতের পক্ষে কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন। প্রতিদিন কোনো না কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নারায়ণগঞ্জে গিয়ে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। দলের মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম এরই মধ্যে সেখানে গিয়েছিলেন। মঙ্গলবারও যাওয়ার কথা রয়েছে তার। দলের চেয়ারপারসনও নারায়ণগঞ্জে যেতে পারেন যেকোনো দিন। তবে কেন্দ্রীয় নেতারা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় নামলেও বিএনপির স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা এখনো রয়েছেন নিশ্চুপ। অনেকের মতে সাখাওয়াত মেয়র নির্বাচিত হলে নিজেদের প্রভাব বিস্তারে বাধা হয়ে দাড়াতে পারেন তিনি। আর তাই বাইরে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কথা বললেও নির্বাচনী প্রচারণায় তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা জানান, কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে স্থানীয় নেতাদের দেখা গেলেও কেন্দ্রীয় নেতারা চলে যাওয়ার পর তাদেরকে আর মাঠে পাওয়া যায় না। দলীয় পদ হারানোর ভয়েই বেশিরভাগ স্থানীয় নেতা কেন্দ্রীয় নেতাদের সামনে হাজিরা দেন। সে জন্য সাখাওয়াত খান যখন কেন্দ্রীয় নেতাদের ছাড়া একা প্রচারণায় যান তখন তার সঙ্গে তেমন নেতাকর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায় না।
অন্যদিকে আইভীর পক্ষে দলের প্রথম সারির নেতারা নির্বাচনী আচরণবিধির বাধায় প্রচারণায় অংশ নিতে না পারলেও স্থানীয় নেতারা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। তবে আওয়ামী লীগের একটি অংশ প্রচারণায় এখনো সরব ভূমিকা পালন করছে না বলেও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়। তবে দলীয় নেতাদের উপস্থিতি না থাকলেও প্রচারণার সময় সাধারণ ভোটারদের উপস্থিতি দেখা যায় আইভীর সাথে।
সোমবার সকাল থেকেই শীতকে উপেক্ষা করে প্রচারণায় নামেন এ সিটির প্রার্থীরা। সকালে ১৩ নং ওয়ার্ডে জামতলা এলাকা থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন সদ্য বিদায়ী মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের জানান, গত পাঁচ বছরে তিনি ৬৬৬ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ করেছেন। আগামীতে তিনি নির্বাচিত হলে তার স্বল্প, মধ্যম এবং দীর্ঘ মেয়াদী কর্মসূচি গ্রহণ করার ভিশন ঘোষণা করেন। এ সময় তিনি গত মেয়াদে তার যেসকল কাজ চলমান রয়েছে সেগুলো সম্পন্ন করার জন্য ভোটারদের কাছে আরেকবার সুযোগ প্রার্থনা করেন।
এদিকে একই ওয়ার্ডে প্রচারণা শুরু করেন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিগত ১৩ বছর আইভী মেয়রের দায়িত্ব পালনের সময়ে নগরের উন্নয়নে দৃশ্যমান কাজ করতে পারেনি। ভবিষ্যতেও পারবে না। এ জন্য এবারের নির্বাচনে একটি পরিবর্তনের ধারা ভোটারদের মধ্যে কাজ করছে। এ জন্য তিনি নিজের জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
সাখাওয়াত খানের পক্ষে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান রুহুল কুদ্দুস দুলু, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলনসহ অর্ধ শতাধিক নেতা ২৭ টি ওয়ার্ডে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালান।
অপর দিকে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফর উল্লাহ, সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল ইসলাম চৌধুরী নওফেল, সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিলসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ বিভিন্ন ওয়ার্ডে নৌকার পক্ষে প্রচারণা চালান।
এই সিটিতে ৭ জন মেয়র প্রার্থীর পাশাপাশি ২৭ টি ওয়ার্ডে ১৫৬ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবং ৯টি সংরক্ষিত নারী আসনে ৩৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তারা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। অনেক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের বিরুদ্ধে পোস্টার ছিড়ে ফেলা, প্রচারণায় বাধা দেওয়াসহ নানা অভিযোগও করছেন। সরকারী দল আওয়ামী লীগের ২৭টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী থাকলেও বিএনপি ৬টি (১৭, ১৮, ১৫, ৩, ৪ ও ৬ নং) ওয়ার্ডে কোনো প্রার্থী দিতে পারেনি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে এখন পর্যন্ত বড় ধরণের আচরণবিধি ভঙ্গের মতো কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন আহমদ। সোমবার সন্ধ্যায় এ নির্বাচনে দায়িত্বরত ২৭ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ বিভিন্ন বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
এছাড়া কারো কোনো অভিযোগ থাকলে বা কেউ আচরণবিধি ভঙ্গ করলে রিটার্নিং কর্মকর্তার পাশাপাশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, র্যা বের কাছেও জানাতে বলেছেন ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার হেলালুদ্দিন আহমদ। ২২ ডিসেম্বর নারায়াণগঞ্জ সিটি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।