মাহাবুবুর রহমান: দীর্ঘ ২২ দিন বন্ধ থাকার পর সাগরে মাছ ধরা আবারো উন্মোক্ত হওয়ায় উৎসাহ উদ্দিপনায় সাগরে মাছ ধরতে ছুটছে জেলেরা।সকাল থেকে জেলাদের পদচারনা আর কলকাকলিতে মুখরিত ছিল বাকখার্ঁলী নদীর মোহনা। বিকাল হওয়ার আগেই বেশির ভাগ ট্রলার সাগরে মাছ ধরতে চলে গেছে বলে জানা যায়। জেলে এবং ট্রলার মালিকদের আশা আবারো ইলিশ বুঝায় করে তারা ফিরতে পারবে। এবং লাভের মুখ দেখবে। এদিকে বেশ কয়েক জন ট্রলার মালিকের সাথে কথা বলে জানা গেছে এক সাথে সব ট্রলার সাগরে যাওয়ার প্রস্তুতি নেওয়ার কারনে শ্রমিক সংকটে পড়েছে
কক্সবাজার শহরের মাঝিরঘাট এলাকার ট্রলার মাকিল ছৈয়দ আলম সওদাগর বলেন ১২ অক্টোবর থেকে দীর্ঘ ২২ দিন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল। তাই আমরা এত দিন সাগরে বোট পাঠানো থেকে বিরত ছিলাম। গতকাল ৩ নভেম্বর থেকে সরকারি ভাবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হওয়ায় আমরা বেশ আগে থেকে সাগরে বোট পাঠানোর জন্য পস্তুতি নিয়েছিলাম। তাই সকাল থেকে আমাদের ব্যস্ততাও ছিল বেশ। বরফ, তেল, পানি ভরতে যে টুকু সময় নিতে হয়েছে তার পরেই আমাদের অনেক ট্রলার মালিক সাগরে বোট পাঠিয়ে দিয়েছে। আমরাও সাগরে বোট পাঠিয়েছি আশা করছি গত মৌসুমের মত এবারও ইলিশ ধরা পড়বে আর আমাদের প্রত্যাশা পূরন হবে। তিনি বলেন আসলে সরকারের সিদ্বান্ত খুবই সঠিক কারন আমরা গতবার দেখেছি প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরা বন্ধ থাকার কারনে সাগরে ইলিশের ঝড়াঝড়ি হয়েছে সবাই ইলিশ পেয়েছে এবং সর্বশ্রেনীর মানুষ ইলিশ খেতে পরেছে। আমি যত টুকু জানি গেল ২২ দিন ছিল ইলিশের ডিম ছাড়ার সময় সেটা যদি ঠিত মত হয়ে থাকে তাহলে আমাদের জন্য বেশ উপকার হয়েছে। শহরের নুনিয়াছড়ার মাছ ব্যবসায়ী মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম বলেন যে কয় দিন সাগরে বোট যাওয়া বন্ধ ছিল আমাদের ব্যবসা বানিজ্য একেবারেই বন্ধ ছিল। তবুও আমরা খুশি কারন সাগরে মাছ থাকলে সারা বছর ধরা যাবে যদি সাগরে মাছই না থাকে তাহলে আমরা সারা বছর কস্ট পাব। তাই সারা বছরের ছেয়ে কয়েক দিন কস্ট করা অনেক ভাল। তিনি বলেন আগে আমরা বিসয় টি ভাল ভাবে না বুঝলেও এখন বুঝতে পারছি সরকারের এই সিদ্বান্ত খুবই কার্যকরী। আমরা গতকাল থেকে সাগরে ট্রলার পাঠানোর জন্য বেশ কয়েক দিন আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। ৩ নভেম্বর সকাল থেকে আমার মত কয়েক হাজার বহদ্দার সাগরে বোট পাঠিয়েছে। এখন আল্লাহর কাছে দোয়া চাই যেন বোট ভর্তি মাছ নিয়ে সাগর থেকে বোট আসতে পারে। তবে একটি জিনিস আমাদের মনের ভেতরে সব সময় ভয় কাজ করে সেটি হলো ডাকাতদেও দৌরাত্ব। আমরা সরকারের কাছে সাগরে যেন বোট নিরাপদে মাছ ধরতে যেতে পারে এবং মাছ মেরে যেন আবার নিরাপদে ফিরে আসতে পারে সে জন্য সবার সহযোগিতা চাই।
খুরশকুল মনুপাড়া এলাকার জেলে আবদুল বাসেত বলেন আমরা জেলে মানুষ সাগর আর পানিই আমাদের সক কিছু এত দিন সাগরে যেতে না পারায় খুব খারাপ সময় কেটেছে। শুনেছি এখানে জেলেদের জন্য সরকার চাল দিয়েছে আমি ২০ বছর ধরে জেলের কাজ করি তবে আমি সেই চাল পাইনি। যাক তারপরও আমি খুশি আবারো সাগরে যেতে পেরে। আমাদের বহদ্দারও বেশ কয়েক দিনআগে থেতে প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে সকাল সকাল বোট সাগরে পাঠানোর জন্য। তবে একটি ভয় খুব কাজ করছে সেটি হলো বোট ডাকাতির ভয়। আমরা মাছ নিয়ে আসার সময় বিশেষ করে ডাকাতরা আক্রমন করে। এর আগেও ২ বার ডাকাতের কবলে পড়েছিলাম আমাদের মাঝির বিচক্ষনতায় আমরা প্রানে বেচে গেছি। আমি সরকারের কাছে আহবান জানাতে চাই যে কোন মুল্যে সাগরে বোট ডাকাতি বন্ধ করা হওক। তাহলে আমরা খুবই সাচ্ছন্দে এবং নিরাপদে সাগরে মাছ ধরতে পারবো।
টেকনাফ সদর ইউনিয়নের বহদ্দার নজির আহাম্মদ বলেন আমার জানা মতে আমাদের যখন সাগরে মাছ ধরা বন্ধ ছিল তখন ভারতিয় এবং শ্রীলংকা, মায়ানমার সহ পার্শবর্তি দেশের জেলেরা সাগরে মাছ ধরেছে। তাহলে আমরা সাগরে না গিয়ে কি লাভ হলো। যদিও সরকারি ভাবে বলা হচ্ছে তারা আমাদের জল সীমায় প্রবেশ করে না। তবে আমি নিজে দেখেছি এবং প্রায় আমাদের মাঝি মাল্লারাও বলে আমাদের জল সীমায় সব সময় বিদেশি জেলেদের দৌরাত্ব থাকে। আমরা বিভিন্ন সময় এ বিষয়ে প্রশাসনকে সে বিষয়ে জানালেও তারা শুধু আস্বাষ দিয়েই শেষ করে। কার্যত কোন পদক্ষেপ হয় না। আমি দাবী জানাচ্ছি সাগরে আমাদের জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের আর আমাদের জল সীমা যাতে কেউ ব্যবহার করতে না পারে সে পদক্ষেপ নিতে হবে।
এ ব্যপারে কক্সবাজার জেলা আওয়ামীলীগের অর্থ সম্পাদক ও জেলা বোট মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক আবদুল খালেক বলেন ২২ দিন বন্ধ থাকার পর ব্যপক উৎসাহ উদ্দিপনা নিয়ে সবাই সাগরে বোট পাঠিয়েছে। আমরা আশা করছি সবাই মাছ বোঝাই করে আবার তীরে আসবে। এবং বাজারে আবারো ইলিশে ভরপুর হবে। এ সময় তিনি সাগরে জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং জেলেদের সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট্য দপ্তরের প্রতি আহবান জানান।
২২ দিন বন্ধের পর সাগরে ছুটছে জেলেরা : ডাকাতি বন্ধের দাবী
![](https://ekattorlive.com/wp-content/uploads/2016/11/20161103_125928.jpg)