অননলাইনডেস্ক:ক্রিকেটের জাতীয় দলে ৩০ বছর বয়সটি অনেকের জন্য অবসর গ্রহণের বয়স। ৩০ কোঠা পার হওয়া মানে ক্যারিয়ার তখন পড়ন্ত অধ্যায়। অবসরের হাতছানি। সেই ৩০ শে এসেই শুরু হলো নতুন যাত্রা। জাতীয় ক্রিকেট দলের সদস্য হিসেবে অভিষেক হচ্ছে সেই বিরল যুবকেরই। তার নাম ফজলে রাব্বী।
অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে বরিশালের ছেলে রাব্বী অবশেষে জায়গা পেলো বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলে। স্বপ্ন ছোয়ার এই যাত্রাটি মোটেই সহজ ছিলো না। বরং রাব্বীর জন্য অনেক বেশি কষ্টের ছিলো। হতাশার গল্পও ছিলো। ক্রিকেট ছেড়ে চলে যাওয়ার গল্পও ছিলো। কিন্তু যার অস্তিমজ্জায় রক্তে মিশে আছে ক্রিকেট। সে কি আর দূরে থাকতে পারে এই ময়দান ছেড়ে? নাহ রাব্বীও পারেনি। আবার ফিরে এসেছে ক্রিকেট মাঠে এবং সেই সাথে প্রাথমিক সফলতাও মিলেছে।
রাব্বীর সাথে বাংলা’র আলাপকালে উঠে এসেছে সেই স্বপ্ন ছোঁয়ার গল্প। কীত্তনখোলার তীরবর্তী শহর বরিশালে বেড়ে উঠেছেন ফজলে রাব্বী। ক্রিকেটর ব্যাট-বল নিয়ে ছুটোছুটি সে শহরের। পাড়ার মাঠ দাপিয়ে বেড়াতো রাব্বীর ব্যাট। এলাকাভিত্তিক যেসব টুর্নামেন্ট হতো সেখানে রাব্বী প্রতিপক্ষের আতঙ্ক। ‘রাব্বীকে থামাও’ এটাই ছিলো প্রতিপক্ষ টিমের প্রধান অস্ত্র। কিশোর রাব্বী স্কুল কলেজ এলাকায় ক্রিকেটার হিসেবেই পরিচিতি পায়। এই ক্রিকেটের সুবাধেই বরিশালের সবাই রাব্বীকে এক নামেই চিনতো। সেইসব মাঠইতো রাব্বীর প্রেরণা ছিলো। তাইতো স্বপ্নটাও বাড়তে লাগলো। একদিন জাতীয় দলে খেলবেন।
জন্ম তার পিরোজপুরে হলেও বেড়ে উঠেছেন বরিশালে। অক্সফোর্ড মিশন হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছেন। এইচএসসি হাতেম আলী কলেজ থেকে। আর অনার্স এবং মাস্টার্স শেষ করেছেন তিতুমীর কলেজ থেকে।
১৬ বছর বয়সে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শুরু করেন তিনি। স্বপ্নটা আরো বড় হতে থাকে। জাতীয় দলের হয়ে একদিন মাঠে নেমে ক্রিকেট খেলবেন এমন স্বপ্ন নিয়েই পথ এগোচ্ছিলেন। দীর্ঘ কয়েক বছর খেলার পরও জাতীয় দলে খেলার সুযোগ না হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। এর মাঝেই পড়াশুনার পাঠও শেষ হয়ে আসে। পারিবারিক চাপে পড়েন তিনি। এরপর হতাশাও বাড়তে থাকে। এরপর এক সময় ক্রিকেট খেলা ছেড়ে দিয়ে একটি টেলিকম কোম্পানিতে যোগ দেন।
কিন্তু স্বপ্ন যে তার জাতীয় দলের খেলোয়াড় হওয়া। তাই আর চাকরিতে মন বসাতে পারলেন না। ৬ মাস পরেই চাকরি ছেড়ে আবার খেলায় ফিরে এলেন এবং খেলাতেই মনোনিবেশ করেন। জাতীয় দলে খেলার সুযোগের অপেক্ষায় নিয়মিত ক্রিকেট চর্চা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষে সেই সুযোগটা এলো তার।
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের ঘোষিত ওয়ানডে সিরিজের দলে জায়গা পেয়েছেন ফজলে রাব্বী। বয়স ৩০ হলেও ১৪ বছরের ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে এবার সাকিব আল হাসানের মতো তারকার জায়গা পূরণে মাঠে নামবেন এই তরুণ ক্রিকেটার।
তরুণ ক্রিকেটার ফজলে রাব্বী বাংলা’কে বলেন, ‘আমার মূল লক্ষ্য ভালো করা। আমি যেন সুযোগটা কাজে লাগাতে পারি এজন্য দোয়া চাচ্ছি। খেলায় ব্যাটিং এবং বোলিংটা ঠিক মতো করাই এখন পরিকল্পনা।’
খেলায় অনুপ্রেরণার কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘পারিবারিকভাবে তো কিছুটা অনুপ্রেরণা পেয়েছি। সেই সাথে খারাপ সময়টাতে আমার বন্ধুরা পাশে থেকে সার্পোট করেছেন।’
‘অনেক সময় খারাপ খেলেছি তখন থেকেই হতাশাটা শুরু। এরপর তো ৬ মাস খেলা ছেড়ে চাকরিতে গেলাম। তবে মন বসাতে না পেরে আবার খেলায় আসি এবং এরপর চাপ না নিয়ে খেলতে থাকি।’ বলছিলেন ফজলে রাব্বী।
সব মিলিয়ে খেলায় নিজের ভালোটাই দিতে চান জানিয়ে তিনি বাংলা’কে আরো বলেন, ‘চাপ নিয়ে খেললে তো খেলা খারাপ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি থাকে। তাই যতদূর সম্ভব চাপ না নিয়েই খেলতে চাই।’ ছবি : সংগৃহীত