একাত্তরলাইভডেস্ক: দেশের রাষ্ট্রীয় মর্যাদার ক্রম বাতিল সংক্রান্ত আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে প্রধান বিচারপতিকে জাতীয় সংসদের স্পিকারের সমমর্যাদায় নিতে বলা হয়েছে। কারণ হিসেবে আদালত রায়ে বলেছেন, ১৯৭৫ সালের ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্সে এ দুটি পদ একসঙ্গে ৪ নম্বর তালিকায় ছিল। সেসময় ২ নম্বরে ভাইস প্রেসিডেন্টের এবং ৩ নম্বরে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছিল। কিন্তু ভাইস প্রেসিডেন্টের পদ উঠে যাওয়ায় দুই নম্বরে প্রধানমন্ত্রীকে নেওয়া হয়েছে। ৩ নম্বরে স্পিকারকে নেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতিকে ৪ নম্বরে রেখে তার পদমর্যাদার অবনমন করা হয়েছে। তাই প্রধান বিচারপতির পদটি স্পিকারের সঙ্গে রাখতে বলা হয়েছে।অস্ট্রেলিয়া, ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলংকার রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম তালিকা (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) তুলে ধরে রায়ে বলা হয়, ওইসব দেশের রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রম তালিকা (ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স) বাংলাদেশ থেকে আলাদা।আপিল বিভাগের বিচারপতিকে তালিকার ৭ নম্বরে এবং আট নম্বরে হাইকোর্টের বিচারপতিদের সঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেলকে রাখতে বলা হয়েছে। এ তালিকার ১২ নম্বরে সংসদ সদস্য, কম্পট্রোলার এবং অডিটর জেনারেল ও ন্যায়পালকে, ১৫ নম্বরে পিএসসি চেয়ারম্যানকে রাখতে বলা হয়েছে। এভাবে রেখে সরকার আইন করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে রায়ের অভিমতে। রায়ে জেলা জজদের ১৬ নম্বরে রাখার যুক্তি হিসেবে আপিল বিভাগ বলেন, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, বর্তমান ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্ট অনুযায়ী হাইকোর্টের বিচারপতিদের ৯ নম্বরে রাখা হয়েছে। আর জেলা জজদের রাখা হয়েছে ২৪ নম্বরে। কিন্তু একজন জেলা জজকে যখন সংবিধানের ৯৫(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের বিচারপতি নিয়োগ করা হয় তখন তার পদক্রম হচ্ছে ৯ নম্বরে। এভাবে সংবিধানে উল্লেখিত জেলা জজদের রাখাটা অবমাননাকর ও লজ্জাজনক।পূর্ণাঙ্গ রায়ে বলা হয়, জেলা জজ পদটি জুডিশিয়াল সার্ভিসের সর্বোচ্চ পদ। একজন বিচারক ২০ বছরের আগে এ পদটিতে আসীন হতে পারেন না। রায়ে বলা হয়, জেলা জজদের পদক্রম কোনোভাবেই প্রতিরক্ষা বিভাগের প্রধানদের উপরে হতে পারে না। তাদের সচিবদের সমমর্যাদায় রাখতে হবে।পূর্ণাঙ্গ রায়ে আরো বলা হয়, বিচার বিভাগের পদটি (জেলা জজ) সাংবিধানিক পদ নয়। তবে এ পদটি প্রজাতন্ত্রের নির্বাহী বিভাগের চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতির।রায়ে আরো বলা হয়, ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে সমান মর্যাদা প্রতিফলিত হয়।অ্যাটর্নি জেনারেলের পদক্রম নিয়ে রায়ে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী দেশ ভারতের পদক্রম তালিকায় অ্যাটর্নি জেনারেলকে তিন বাহিনী প্রধানের (জেনারেল র্যাংকধারী) উপরে মন্ত্রী পরিষদ সচিবের সঙ্গে রাখা হয়েছে। শ্রীলংকায় সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের ওপরে রাখা হয়েছে এ পদটিকে। তাই আমাদের হাইকোর্ট অ্যাটর্নি জেনারেলের পদটি ওপরে রাখতে যে রায় দিয়েছেন তা যুক্তিযুক্ত।রায়ে বলা হয়, ১. সংবিধান যেহেতু রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন, সেহেতু রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের শুরুতেই সাংবিধানিক পদাধিকারীদের গুরুত্ব অনুসারে রাখতে হবে।২. জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যরা রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের ২৪ নম্বর থেকে ১৬ নম্বরে সরকারের সচিবদের সমমর্যাদায় উন্নীত হবেন।জুডিশিয়াল সার্ভিসের সর্বোচ্চ পদ জেলা জজ। অন্য প্রশাসনের সর্বোচ্চ স্তরে সচিবরা রয়েছেন।৩. অতিরিক্ত জেলা জজ ও সমমর্যাদার বিচার বিভাগীয় সদস্যদের অবস্থান হবে জেলা জজদের ঠিক পরেই, রাষ্ট্রীয় পদমর্যাদাক্রমের ১৭ নম্বরে।প্রসঙ্গত, রাষ্ট্রীয় মর্যাদার ক্রম তালিকা বাতিল সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় বহাল রেখে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়েছে।
স্পিকারের সমমর্যাদায় প্রধান বিচারপতি

November 10, 2016