একাত্তরলাইভডেস্ক: প্রায় পাঁচমাস ঝুলে থাকার পর চীন সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগে ‘সীমিত দরপত্র প্রক্রিয়া’ অনুসরণ করতে যাচ্ছে সরকার। সূত্র জানায়, গত ৪ অক্টোবর এক চিঠির মাধ্যমে এ বিষয়ে চীন সরকারের সম্মতির কথা অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগকে (ইআরডি) অবহিত করেছে ঢাকাস্থ চীনা দূতাবাস। তবে এক্ষেত্রে কূটনৈতিক চ্যানেল অনুসরণের পরামর্শ দিয়েছে দেশটি। গত ১০ আগস্ট ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে বর্তমানে ‘সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি’-তে চীনা সরকার সুপারিশকৃত কোম্পানিকে প্রকল্প বাস্তবায়নে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে বর্তমানে অনুসৃত সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির বিধানটি সংশোধনের মাধ্যমে ‘সীমিত দরপত্র প্রক্রিয়া’টি কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে গত ২২ অক্টোবর ইআরডি’র পক্ষ থেকে কমিটি বরাবর একটি প্রস্তাবও পাঠানো হয়েছে। খুব শিগগিরই এটি অনুমোদনের জন্য বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে। ইআরডি’র প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়িতব্য সব প্রকল্পের ক্ষেত্রে সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত হবে। তবে উভয় রাষ্ট্রের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যেমন- অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা বা অন্যান্য বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে সীমিত পর্যায়ে প্রয়োজনে ভিন্নরূপ সিদ্ধান্ত গ্রহণের বিষয়টি ব্যতিক্রম হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।’ চীনা দূতাবাসের চিঠির উদ্বৃতি দিয়ে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, জি টু জি ভিত্তিতে চীনা অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পের ক্ষেত্রে ‘সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি’ বা ‘সীমিত দরপত্র’ প্রক্রিয়ার বিষয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ আইন ও বিধি অনুযায়ী গৃহীত সরকারি সিদ্ধান্তকে তারা সম্মান করে। যদি সীমিত দরপত্রের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, সেক্ষেত্রে কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে বিষয়টি অবহিত করতে হবে এবং চীনা কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারের কাছে চীনা কোম্পানির একটি ‘সংক্ষিপ্ত তালিকা’ সম্বলিত সুপারিশ পাঠাবে। তারপর প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা বাংলাদেশের আইন ও বিধি মোতাবেক সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সীমিত দরপত্র আহবান করবে। অন্যদিকে যদি সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়, সেক্ষেত্রে বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে চীনা এক্সিম ব্যাংকের চাহিদা অনুযায়ী অথোরেটিভ ডকুমেন্টস দাখিল করবে। জানা যায়, ২০১৫ সালের ২৫ আগস্ট চীনের বাণিজ্যমন্ত্রীর ঢাকা সফরকালে চীনা সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে সীমিত দরপত্র প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়ে দুই দেশ সম্মত হয়। পরবর্তীতে ওই বছরেই ২ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি দেন। এর জবাবে গত ২০১৫ সালের ২৩ নভেম্বর ঢাকাস্থ চীনা রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী বরাবর চিঠি প্রেরণ করেন। ওই চিঠিতে চীনা সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন প্রকল্পে সীমিত দরপত্র প্রক্রিয়ায় ঠিকাদার নিয়োগের কথা উল্লেখ করা হয়। এ ধারাবাহিকতায় সীমিত দরপত্র প্রক্রিয়ার সম্ভাব্য পদ্ধতি নির্ধারণে ইআরডি’র পক্ষ থেকে চলতি বছরের ২ মে একটি খসড়া মতামতের জন্য ঢাকার চীনা দূতাবাসে পাঠানো হয়। কিন্তু সেটি চূড়ান্ত না হওয়ায় নতুন প্রকল্পে অর্থায়নের ক্ষেত্রে বিরত থাকে চীন। পরবর্তীতে ২৮ জুন চীনা দূতাবাসের আরেক চিঠিতে জানানো হয় যে, ২০১৫ সালের ১২ আগস্টের পূর্বে যেসব প্রকল্পে চীনা ঠিকাদার নিয়োগ মনোনীত করা হয়েছে, সেসব প্রকল্পের ক্ষেত্রে চীনা সরকার পূর্বের পদ্ধতি অনুসরণ করবে। আর উল্লেখিত তারিখের পরে নতুন প্রকল্পের ক্ষেত্রে সীমিত দরপত্র প্রক্রিয়ায় চীনা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করতে হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে গত ১০ আগস্ট ‘অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রিসভা কমিটি’ সীমিত দরপত্র প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি চালু না হওয়া পর্যন্ত ‘অন্তবর্তীকালীন ব্যবস্থা’ হিসেবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে চীনা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
‘সীমিত দরপত্র প্রক্রিয়া’ অনুসরণ করা হবে
November 3, 2016