সিলেট প্রতনিধি:
ছোঁয়াচে ও ভাইরাসজনিত রোগ হামে আক্রান্ত ১৭ শিশুকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এক সপ্তাহের মধ্যে ১৭ শিশু আক্রান্ত হওয়ায় চিকিৎসকরাও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, প্রতিষেধক টিকা দেয়ার পর গত ৫ বছরের পরিসংখ্যানে একসঙ্গে এত বেশি সংখ্যক শিশু হাম রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি এবারই প্রথম। আক্রান্তদের আলাদাভাবে চিকিৎসার পাশাপাশি প্রতিষেধক টিকার পরও হামের প্রাদুর্ভাব হঠাৎ করে কেন বেড়ে গেল, এ বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার পরিচালকের দফতরকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে।
ওসমানী হাসপাতালের পঞ্চম তলার ২১ এবং ২২ নম্বর ওয়ার্ড শিশু ওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শীত মৌসুমের শুরুতে শিশু ওয়ার্ডে শীতজনিত রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়। গত এক সপ্তাহে ২৬ নবজাতকসহ ৭৬ জন শিশু শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হলে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে থেকে হাম আক্রান্ত শনাক্ত করা হয়। সোমবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত হাম রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ১৭ জন।
দুটি শিশু ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার সূত্র জানায়, আক্রান্তদের মধ্যে ৯ মাস থেকে ৭ বছর বয়সী শিশু রয়েছে। এর মধ্যে ৯ মাস বয়সী ছয়জন, ১০ মাস বয়সী দুইজন, এক বছর বয়সী দুইজন, ১৩ মাস বয়সী একজন, বাকি ছয়জন সাড়ে ৩ বছর থেকে ৭ বছর বয়সী। এদের বাড়ি সিলেটের গোয়াইনঘাট, বিশ্বনাথ, মোগলাবাজার, জালালাবাদ, সুনামগঞ্জের ছাতক, দোয়ারাবাজার, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জের বানিয়াচং।
শিশু ওয়ার্ডে কর্তব্যরত চিকিৎসকরা জানান, হাম ছোঁয়াচে রোগ হওয়ায় আক্রান্ত ১৭ শিশুর চিকিৎসা শিশু ওয়ার্ডে রেখে হলেও সতর্কতার সঙ্গে দেয়া হচ্ছে।
চিকিৎসক সূত্রে জানা গেছে, শিশুরা হামে বেশি আক্রান্ত হয় বলে এক বছর থেকে ১৮ মাস বয়সী শিশুকে হাম প্রতিষেধক টিকা নিতে হয়।
ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৩ মাস বয়সী একজন শিশুর অভিভাবক জানান, আট দিন ধরে শিশুটির শরীরে জ্বর থাকায় হবিগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে দুদিন পর পাঠানো হয় সিলেটে। এখানে প্রথম দিনই জানানো হয় হাম হয়েছে। প্রতিষেধক টিকা নিয়েছিলেন কি না, এমন প্রশ্নে ওই শিশুর অভিভাবক নির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।
তবে পাঁচ বছর ও সাত বছর বয়সী দুই শিশুর অভিভাবক জানান, তারা শিশুকে হামের প্রতিষেধক টিকা দিয়েছেন। এরপরও আক্রান্ত হওয়ায় তারা বিচলিত। বিষয়টি হাসপাতালের চিকিৎসককেও জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে ওসমানী হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. মো. মফিজউদ্দিন আহমেদ এ পর্যন্ত ১৭ জন হাম আক্রান্ত শিশু ভর্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, আলাদাভাবে এদের চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। আক্রান্তরা যে সকল এলাকার, ওই সব এলাকায় হাম প্রতিষেধক টিকা দেয়ার বিষয়েও খোঁজ নেয়া হবে।
এক সপ্তাহে ১৭ জন হাম-আক্রান্ত শিশু ভর্তি হওয়ার বিষয়ে ওসমানী হাসপাতালের শিশু রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. প্রভাত রঞ্জন দে তার দফতরে আলাপকালে জানান, প্রতি বছর একজন অথবা দুজনকে পাওয়া যেত হাম আক্রান্ত। গত ৫ বছর ধরে এমনই পরিস্থিতি ছিল। এবারই প্রথম এক সপ্তাহে ১৭ জন হাম-আক্রান্ত শিশু পাওয়া গেল।
ডা. প্রভাত রঞ্জন দে এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আবহাওয়া পরিবর্তন ও বিশেষ করে গরমের পর শীতের সময় সংক্রামক এ রোগ ছড়ায়। ছোঁয়াচে হওয়ায় একজন থেকে আরেকজন আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটে। তবে প্রতিষেধক টিকা দেয়ার পরও আক্রান্ত হওয়ায় বিষয়টি উদ্বেগজনক।
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক বলেন, শীতের সময় ভাইরাস সংক্রমণ বাড়ে। এজন্য শিশুদের শীত থেকে রক্ষা করা উচিত। শীতের শুরুতেই এখানে শিশু রোগীদের জন্য সেবার বিষয়ে বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়।
তিনি বলেন, শুধু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হলে রোগবালাই কমবে না। এ ব্যাপারে প্রথমে নিজে ও পরিবারের সদস্যদের সচেতন হতে হবে। স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ তৈরির পাশাপাশি বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
শীত ঋতুতে নিউমোনিয়া রোগের জীবাণুগুলো বেশি সক্রিয় থাকায় খুব সহজেই শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন থাকায় এ সময় ডায়রিয়া রোগের প্রদুর্ভাবও বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাই বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে শিশুদের ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়। তবে এবার হাম আক্রান্ত আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে ।