মাহাবুবুর রহমান: সীমান্ত উপজেলা টেকনাফের হাটবাজার সমুহে সাগর ও নদীর মাছ চোখে পড়ছেনা। লোনা পানির মাছ না থাকায় বাজার রীতিমত মাছ শুন্য হয়ে পড়েছে। এতে করে একদিকে যেমন মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে মিষ্টি পানির মাছ এবং শুটকী মাছের কদর সমানতালে বেড়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাযায়, গত ১২অক্টোবর হতে ২নভেম্বর পর্যন্ত ২২দিন সাগর এবং নদনদীতে মাছ শিকার বন্ধে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনা রয়েছে। মন্ত্রণালয় কর্তৃক জারীকৃত প্রজ্ঞাপনে উল্লেখিত ২২দিনে সকল প্রকার যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক নৌযান, সকল ধরণের বাণিজ্যিক ট্রলার কর্তৃক সমুদ্র ও উপকুলীয় এলাকা সহ নাফনদীতে মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা এবং স্থানীয় প্রশাসনের কঠোর নজরদারীর কারণে সীমান্তের মৎস্য আহরণের ক্ষেত্র বঙ্গোপসার এবং নাফনদীতে জেলেদের তৎপরতা না থাকায় এমনটি হচ্ছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অনেকে বলছেন, এর আগেও মাছ শিকার বন্ধে সরকারী নিষেধাজ্ঞা থাকলেও সে সময়ে এবারের মত প্রভাব পড়েনি। তখনকার সময়ে হাটবাজারে লোনা পানির মাছ পাওয়া যেত। ব্যবসায়ীরা জানান, টেকনাফের মাছ বাজার সাধারণত লোনা পানির মাছের দখলে থাকে। সাগর-নদীর বিভিন্ন প্রজাতির মাছ খেয়েই এখানকার মানুষ চলে। মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় লোনা পানির মাছের অভাবে টেকনাফের অনেক পরিবারে সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, সীমান্তের অনেক পরিবার লোনা পানির মাছ খেয়ে জীবন সংসার চালিয়ে আসছে। সাগর-নদীর মাছই এখানকার মানুষের খাদ্যের অন্যতম উপাদান। লোনা পানির মাছের পরিবর্তে বর্তমানে হাটবাজার এবং গ্রামা লের দোকন পাটে গরীবের খাসি খ্যাত পাঙ্গাস, তেলাপিয়া, রুই, মৃগেল, কাতাল, কৈ সহ মিষ্টি পানির মাছ বাজার দখল করে আছে। উচ্চমুল্যের কারণে মিষ্টি পানির মাছ অনেকের নাগালের বাইরে রয়েছে। তবে টেকনাফ এবং হ্নীলার বাজারে সন্ধ্যাকালীন সময়ে দীর্ঘদিন সংরক্ষণে রাখা ফরমালিনযুক্ত নদনদীর পঁচা মাছ বিক্রি করতে দেখা গেছে। ৩সপ্তাহ ব্যাপী নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়ায় জেলে পরিবারগুলোতে অনেকটা দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় অনেক পরিবার চরম অভাব অনটনে পড়ে গেছেন বলে জাদীমুরা এলাকার ব্যবসায়ী ওসমান দৈনিক কক্সবাজারকে জানিয়েছেন। উপজেলার প্রায় ৫হাজার পরিবার মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করে। যারা শুধু সাগর-নদীতে মাছ শিকারের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল বলে অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে। মৎস্য পেশায় জড়িত জেলেরা এখন চরম কষ্টে আছেন জানিয়ে দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন মাছ শিকার বন্ধকালীন সময়ে বিকল্প কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে তারা মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সহ দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। হ্নীলা জাদীমুরা এলাকার জেলে ছৈয়দ আলম কালু, আবু তাহের, মো: আমিন জানান, মাছ শিকার বন্ধ থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে অর্থাভাবে দিনাতিপাত করছি। মাছ আহরণ বন্ধের সময়ে তারা জেলে পরিবারে সরকারী সহায়তা যথাযথভাবে পাওয়ার দাবী জানান। টেকনাফ বাজারের মাছ ব্যবসায়ী গোদারবিল এলাকার নুরুল আলম জানান, বছরের অন্য সময়ে সাগরের মাছ সংগ্রহ করে প্যাকেটজাতের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রামে পাঠিয়ে টাকা আয় করতাম। এখন উল্টো ওখান থেকে মিষ্টি পানির মাছ রুই, কাতাল, মৃগেল এবং তেলাপিয়া এনে বিক্রি করে কষ্টের মধ্যে সংসার চালাচ্ছি। এদিকে সচেতন মহল মৎস্য ভান্ডার রক্ষায় প্রশাসনের ভুমিকাকে সাধুবাদ জানিয়ে টেকনাফের বাজারে বিচ্ছিন্নভাবে বিক্রি হওয়া ফরমালিনযুক্ত পঁচা মাছ বন্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার সুজাত কুমার চৌধুরী জানান, ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুমে মৎস্য সম্পদ রক্ষায় সরকারের গৃহীত মহৎ কর্মসূচী সকলের সহযোগীতায় বাস্তবায়িত হওয়ায় সাগর-নদীতে সব ধরণের নৌযান নামছেনা। জেলেদের সহযোগীতায় এমনটি সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি প্রশাসন সহ মৎস্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সাধুবাদ জানান। দুস্থ জেলেদের সহযোগীতা দেওয়া হবে জানিয়ে উপজেলায় কর্মরত এই মৎস্য কর্মকর্তা খবরটি দৈনিক কক্সবাজারকে নিশ্চিত করেন। জানতে চাইলে প্রজননক্ষম ইলিশ মাছ সংরক্ষণ উপজেলা টাস্ক ফোর্স কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শফিউল আলম দৈনিক কক্সবাজারকে বলেন, প্রশাসনের তৎপরতার কারণে বাজারে সাগরের মাছ নেই। ইলিশের প্রজনন মৌসুমে জেলেরা নির্দেশনা মেনে চলায় সাগর ও নদীতে মৎস্য ভান্ডার বাড়বে। এতে জাতীয় মাছ ইলিশের দাম কমবে পাশাপাশি বড় ইলিশ সহজে মিলবে।