একাত্তরলাইভডেস্ক: সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তির জেরে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দুদের বাড়িঘর-উপাসনালয়ে হামলার নেপথ্যে ‘সরকারের প্ররোচনা রয়েছে’ বলে মনে করছে বিএনপি। দলটি বলছে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে সুপরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেওয়া হয়েছে।শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ-আইইবিতে এক অনুষ্ঠানে এই দাবি করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের জেলা প্রতিনিধি সম্মেলন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গত ৩০ অক্টোবর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলায় রসরাজ দাস নামের এক ব্যক্তি পবিত্র কাবা শরীফ অবমাননা করে আপত্তিকর ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সেখানে ১৫টি মন্দিরসহ হিন্দুদের শতাধিক বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়। পাশের জেলা হবিগঞ্জের মাধবপুরেও দুটি মন্দিরে হামলা হয়। নাসিরনগরে গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হিন্দুদের পাঁচটি বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে একইভাবে ফেসবুকে ইসলাম অবমাননাকে কেন্দ্র করে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা হয়েছিল।মির্জা ফখরুল বলেন, ‘গত রাতে এত পুলিশ, র্যাব পরিবেষ্টিত এলাকায় আবার পাঁচটি বাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। মানুষ বোকা নয়। খুব ভালোভাবেই বুঝতে পারা যায় অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে আপনাদের (ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ) প্ররোচনাতেই বাংলাদেশে এমন অবস্থা তৈরি করা হচ্ছে, যাতে সাম্প্রদায়িকতা উস্কে ওঠে।’ ‘স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, এদেশে আমরা অতীতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করেছি, রক্ষা করতে চাই। আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাস করি। এইখানে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে আদায় করার যে আন্দোলন চলছে, তাকে ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার জন্য এই অপচেষ্টা জনগণ মেনে নেবে না।’ দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার, ভোটাধিকার ও নিরাপত্তা কেড়ে নেওয়া হয়েছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, ‘অতীতে আওয়ামী লীগ সকল অধিকার কেড়ে নিয়ে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। সেই দলটি আবার ক্ষমতা দখল করে সব অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। দেশে এখন কোনো নিরাপত্তা নেই। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না।’ এ সময় মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকার রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে চাইছে কিন্তু মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য কোনো কাজ করছে না। ৭ নভেম্বরের তাৎপর্য তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ওই দিনটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি পরিষ্কার পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। ‘যখন বাংলাদেশের মানুষের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল, স্বাধীনতা-স্বার্বভৌমত্ব বিপন্ন হতে চলেছিল, তখন দেশপ্রেমিক সৈনিকরা ঐক্যবদ্ধভাবে স্বাধীনতাকে রক্ষা করেছিল। আধিপত্যবাদের সকল চক্রান্তকে ধ্বংস করে দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকাকে আরো শক্ত করে ধরেছিল।’মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাসের সভাপতিত্বে জেলা প্রতিনিধি সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আবদুল মঈন খান, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক সুলতানা আহমেদ।
‘সরকারের প্ররোচনায় নাসিরনগরে হামলা’

November 4, 2016