‘সবার আগে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে’

অনলাইন ডেস্ক: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করেছেন, বিএনপিকে বাদ দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরিকল্পনা থেকে আওয়ামী লীগ একতরফাভাবে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের কথা বলছে। সবার আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নির্বাচনের সমান্তরাল মাঠ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। এসবের কোনো বিকল্প নেই।

নির্বাচনকালীন সরকার গঠন নিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় এসব কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক অলোচনা সভায় এ প্রতিক্রিয়া দেন তিনি। বিএনপি সমর্থিত বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (একাংশ) ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) যৌথ উদ্যোগে ‘১৬ জুন সংবাদপত্রের কালো দিবস’ উপলক্ষে এই আলোচনা সভা হয়।

বুধবার সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘নির্বাচনের শিডিউল ঘোষণার পর নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা হবে। অক্টোবর মাসে সম্ভাবনা বেশি।’

নির্বাচনকালীন সরকার আকারে ছোট হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘এটি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তখন মন্ত্রিসভা ছোট হবে, তখন ঢাউস মন্ত্রিসভার প্রয়োজন নেই। মেজর কোনো পলিসি বা ডিসিশন নিতে পারবে না, সেই সরকার শুধু রুটিনওয়ার্ক করবে।’

এ প্রসঙ্গে আলোচনা সভায় বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, ‘বুধবার বলছেন হয়ে যাবে নির্বাচনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিএনপি না এলে কি নির্বাচন থেমে থাকবে? এটাই তো তারা চায়। বিএনপি না আসুক, অন্যান্য দলগুলো দু-একটা যেটা আনা হয়েছে তারা আসুক।

তিনি বলেন, আসলে কি আওয়ামী লীগ সরকার চালাচ্ছে, নাকি অন্য কেউ? এ সময় সংকট সমাধানে আলোচনায় বসার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।

মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক দল হিসেবে অবশ্যই আমরা নির্বাচন চাই। সেই নির্বাচনটা অবশ্যই হতে হবে নির্বাচনের মতো। আপনারা ক্ষমতায় থাকবেন, হেলিকপ্টারে চড়ে ঘুরে বেড়াবেন। বিরোধী দলকে একটা কথাও বলতে দেবেন না, ধরে ধরে জেলে পুরবেন। সেক্ষেত্রে তো নির্বাচন হবে না।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষভাবে কাজ করছে না বলে সভায় অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

একদলীয় বাকশাল থেকে বর্তমান অবস্থা আরও ভয়াবহ মন্তব্য করে তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে সস্পূর্ণ অন্যায়ভাবে বেআইনিভাবে শুধুমাত্র আদালতকে ব্যবহার করে আটকে রাখা হয়েছে।

বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করা হবে জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের জন্য জাতীয় ঐক্য খুব বেশি দরকার। খুব বেশি পয়েন্ট নয়। কয়েকটি পয়েন্টে আমরা সেই ঐক্য সৃষ্টি করতে পারি।

তিনি বলেন, আমরা সবার দ্বারে দ্বারে যাচ্ছি। আমরা সব রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে যাচ্ছি। আমরা বলছি দেশটাকে বাঁচান। আমরা মুরব্বিদের কাছে যাচ্ছি। বলছি আপনারা দেশের অভিভাবক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন। দেশটাকে রক্ষা করেন।

তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালে ৪টি পত্রিকা রেখে সব পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়। আর ওই সময়ের পরিস্থিতির চেয়ে এখনকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। কেন ভয়াবহ? কারণ ওই সময় ঘোষণা দিয়ে পত্রিকা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আজকে প্রতারণা করে, মানুষকে বোকা বানিয়ে এবং গণতন্ত্রের আবরণে আরও বেশি করছে।

মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা রিকশা চালায়, তারা হকারি করছে। অনেকে নাইট গার্ডের কাজ করে। এ রকম অসংখ্য আছে। কী ভয়াবহ পরিস্থিতি!

নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, কেউ এসে প্রতিরোধ করবে না। আমাদেরকেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে হবে।

বিএফইউজের একাংশের সভাপতি রুহুল আমিন গাজীর সভাপতিত্বে ও ডিইউজের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইরফানুল হক নাহিদের পরিচালনায় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, বিএফইউজের মহাসচিব এম আবদুল্লাহ, সাবেক সভাপতি শওকত মাহমুদ, জাতীয় প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ডিইউজের সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।