একাত্তরলাইভডেস্ক: সফলতা পেতে শুরু করেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) খাতের বিকাশে বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া বিশেষ উদ্যোগ।ফলে এসএমই খাতের সক্ষমতা বেড়েছে এবং বেড়েছে এ খাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের ঋণ দেওয়ার পরিমাণও।ব্যাংক বলছে, নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করা হলে যে কেউও পেতে পারে এ ঋণ। এই খাতের বিকাশে দেশের বিভিন্ন এলাকার সম্ভাবনাময় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের খুঁজে বের করে ব্যাংকঋণ দেওয়ার কার্যক্রমও চলছে পুরো দমে।পাশাপাশি আরো ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের এ ঋণের আওতায় নিয়ে আসতে ক্লাস্টার ডেভেলপমেন্ট, প্রকাশ্যে ঋণ বিতরণ, মতবিনিময় সভাসহ প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এসএমই অ্যান্ড স্পেশাল প্রোগ্রামস বিভাগের মহাব্যবস্থাপক স্বপন কুমার রায় বলেন, ‘এ খাতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ বাড়ছে। বিতরণের এ গতি অব্যাহত থাকলে বছর শেষে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি বিতরণ হবে বলে আমরা আশা করছি।’এ ছাড়া দেশের পুরুষ ও নারী উদ্যোক্তারা এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ নেওয়ার ফলে তারা ভালোভাবে জানতে পারছে এবং ব্যাংকের নিয়মকানুন মেনে ঋণের জন্য আবেদন করছে। বর্তমানে এসএমই ঋণের প্রচুর চাহিদা আছে বলেও জানান তিনি।স্বপন কুমার জানান, অন্যান্য বছর ঋণের বড় অংশ ব্যবসা খাতে গেলেও এবার সেবা খাতে সবচেয়ে বেশি ঋণ বিতরণ হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সব সময়ই উৎপাদনশীল খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে জোরালো মনিটরিং করে আসছে।অনেক উদ্যোগতার ঋণ না পাওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ব্যাংকগুলো যেসব ঋণগ্রহীতাকে ঋণ দিতে পারছে না, তার কিছু কারণ রয়েছে। আমরা প্রচারণা চালাচ্ছি যে ব্যাংকে গেলেই এসএমই ঋণ পাওয়া যাবে। কিন্তু সেটা কাদের জন্য তা না জেনেই সবাই ঋণ নিতে চলে আসে। ব্যাংকের তো কিছু নিয়মকানুন রয়েছে।’উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, কোনো নারী উদ্যোক্তা যদি বলেন তিনি বুটিকের কাজ করেন তাকে ঋণ দিতে হবে। কিন্তু তার ট্রেড লাইসেন্স নেই। তাহলে আমরা তাকে কীভাবে ঋণ দেব। এসএমই ঋণের শর্তই হচ্ছে, আপনার ব্যবসায়িক আইডেন্টিটি থাকতে হবে। ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে। তবে এ বিষয়টিও অস্বীকার করব না যে অনেক সময় সব থাকার পরেও ঋণ পেতে দেরি হচ্ছে বা পাচ্ছে না। তবে এটি খুবই কম।এখন পর্যন্ত কতজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তিন বছরে ১০ হাজার ২০০ জন উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দেব বলে টার্গেট নিয়েছি। এর মধ্যে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি উদ্যোক্তাকে আমরা প্রশিক্ষণ দিয়েছি। ২০১৭ সালের মধ্যে আমরা তিন হাজারের বেশি উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিতে পারব।’অনেক ব্যাংক সুদ বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো ব্যবস্থা নিয়েছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এসএমই শিল্পের উন্নয়নে সুদহার কমাতে এ খাতে প্রচুর পুনঃ অর্থায়ন করছে। পাশাপাশি নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে তহবিলও রয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বিতরণ করা হচ্ছে ১০ শতাংশ সুদে। ব্যাংকগুলোকে এত ছাড় দেওয়ার পরেও তারা এ খাতে সুদ বেশি নিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।এ ছাড়া উদ্যোক্তারা যেন সঠিক সময়ে যথেষ্ট পরিমাণ ঋণ পায় সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক তদারকি ব্যবস্থা আরো জোরদার করেছে বলে জানান তিনি।বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কর্মকর্তা বলেন, মূলত এসএমইতে অল্প টাকা অনেকের মধ্যে বিতরণ ও আদায়ে ব্যাংকের খরচ বেড়ে যায়। ফলে সুদহারের ওপর প্রভাব পড়ে। আবার এসএমই ঋণে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের জামানত ছাড়াই বিতরণ করতে হয়। এভাবে ঋণ বিতরণে ঝুঁকি বেশি থাকে, যা সুদহারের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই এ সেক্টরে হয়তো সুদহার কমাতে একটু সময় লাগছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কঠোর তদারকির ফলে সুদহার আগের তুলনায় অনেক কমেছে।
সফলতা পেতে শুরু করেছে এসএমই খাত
October 25, 2016