সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবিতে ১৫ দিন হেঁটে ঢাকায়

একাত্তরলাইভডেস্ক: মো. আলী আযম টিটো। পেশায় শিক্ষক। ২২ বছর ধরে পাঠদান করছেন। যশোরে তিনি ব্রাদার টিটো নামে পরিচিত।টিটো গত ১৭ অক্টোবর যশোর প্রেসক্লাব থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন। রওনা দেওয়ার আগে যশোর প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এসে পৌঁছান ৩১ অক্টোবর। যশোর থেকে ঢাকা আসতে তার সময় লেগেছে ১৫ দিন। ১৫ দিন তো লাগবেই। কারণ, তিনি কোনো যানবাহনে চড়েননি। যশোর থেকে হেঁটে ঢাকা এসেছেন।বুধবার জাতীয় প্রেসক্লোবের সম্প্রসারিত হলরুমে বসে ছিলেন টিটো। গায়ে টি-শার্ট। গায়ে জড়ানো সাদা কাপড়ে লাল কালিতে লেখা ‘সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন চাই’। সবুজ কালিতে লেখা ‘শান্তির জন্য পায়ে হাঁটা’।সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গনের দাবিতে বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন ব্রাদার টিটো। সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি রাইজিংবিডির সঙ্গে একান্তে কথা বলেন।হেঁটে যশোর থেকে ঢাকায় আসাকে এক ধরনের প্রতিবাদ বলে উল্লেখ করেন ব্রাদার টিটো। তিনি বলেন, ‘যশোর থেকে ঢাকায় আসার পথে যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চোখে পড়েছে, সেখানে গিয়ে সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়ার ব্যাপারে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীরা চরম আতঙ্ক ও ঝুঁকির মধ্যে দিন অতিবাহিত করছে।’টিটো আরো বলেন, ‘সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দিনের পর দিন নানা ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হচ্ছে। আমি একজন অভিভাবক হিসেবে এ পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন না হয়ে পারি না। দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিকদের গড়ে ওঠার প্রধান কেন্দ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার যথাযথ পরিবেশ না থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বিকশিত হওয়ার দ্বার রুদ্ধ হতে বাধ্য। তাই আমরা চুপ হয়ে বসে থাকতে পারি না। সুষ্ঠু পরিবেশ রক্ষায় চাই সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন। এজন্য সচেতন নাগরিকদের সোচ্চার হওয়ার বিকল্প নেই।’এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কে কী করল আর না করল, তা আমার দেখার বিষয় না। আমি কতটুকু করতে পারলাম সেটাই বড় ব্যাপার। আমি ১৭ দিন ধরে নিজ খরচে এ কাজটি করেছি।’টিটো জানান, তিনি ২২ বছর ধরে পাঠদান করছেন। ২০০৫ সালে ‘গৃহশিক্ষকবিহীন শিক্ষা কার্যক্রম চালু কর’ এই স্লোগানে তিনি আন্দোলনে নামেন। ওই আন্দোলনকে প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেওয়ার জন্য ২০০৭ সালে যশোরের লালদিঘির পূর্বপাড়ে টিটোস হোম নামের একটি কিন্ডার গার্টেন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠাকালে শিক্ষার্থী ছিল ১৬ জন। এখন শিক্ষার্থী ৮২ জন, শিক্ষক ১১ জন।ব্রাদার টিটো বলেন, বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ যাদের সঙ্গে কথা বলেছি, সবাই সন্ত্রাসমুক্ত শিক্ষাঙ্গন গড়ার পক্ষে মত দিয়েছেন। দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে সন্ত্রাসমুক্ত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ প্রতিষ্ঠার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাই।মো. আলী আযম টিটোর জন্ম ১৯৭৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর। তার বাবার নাম আলী হোসেন। বাড়ি যশোর সদরে। তিনি দুই সন্তানের জনক। বড় মেয়ে সাবাহ পঞ্চম শ্রেণিতে এবং ছেলে তাবিঈ দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে।